অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

টোকাই থেকে কোটিপতি ফেনীর সেই আ’লীগ নেতা মাকসুদুল

0
.

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল আলম একসময় ছিলেন টোকাই। পরে বাজারে আলুর ব্যবসাও করেছেন। সর্বশেষ রাজনীতিতে নেমে ভূমি দখল ও ইয়াবা ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত সোনাগাজী পৌরসভা নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মাকসুদুল। এরপর থেকেই তিনি পৌর এলাকায় একের পর এক জায়গা দখল করতে থাকেন। স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পান ‘ভূমিখেকো’ হিসেবে। এসব অপকর্মে তার নিত্যসঙ্গী ভাই হেলাল ও সবুজ। এতদিন তিন ভাইয়ের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

নুসরাত হত্যা মামলায় মাকসুদুল ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ব্যাপারে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন কাঞ্চন বলেন, এক সময় মাকসুদুল বাজারে টোকাইয়ের কাজ করতেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সোনাগাজী মেইন রোডের পশ্চিমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন একটি জায়গা ইজারাদার নুরুল করিম শিল্পীর কাছ থেকে দখল করে নিয়েছেন মাকসুদুল। তিনি ২০১৭ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর শিল্পী স্টিল করপোরেশনের জায়গাটি দখলের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুট করে নেন।

এ ঘটনায় নুরুল করিম শিল্পী মামলা করেন। কিন্তু মাকসুদুলের অব্যাহত হুমকির কারণে তাকে সোনাগাজী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত শেষে মাকসুদুল ও তার সহযোগী আবুল কালাম ভোলাকে অভিযুক্ত করে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়।

আরও জানা যায়, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার পাশে আবদুর রবের জায়গা দখলের পাশাপাশি চরগণেশ মান্ডব বাড়িতে জায়গা দখল করে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন মাকসুদুল। সেই সাথে সোনাগাজী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রবাসী আবু সুফিয়ানের স্ত্রী শাহানা আক্তারের জায়গাও দখল করেছেন তিনি। এছাড়া প্রবাসী আবু তাহেরসহ অনেকের সম্পত্তি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।

আবু সুফিয়ান বলেন, তিনি মামলা করতে চাইলে সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন তাকে মাকসুদুলের সাথে সমঝোতায় যাওয়ার কথা বলে মামলা নেননি।

সবশেষ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ও মাদরাসার ঠিকাদারি পাওয়ার আশায় অধ্যক্ষের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন মাকসুদুল। অধ্যক্ষের নির্দেশে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাকসুদুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল আদালত নুসরাত হত্যা মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।  সুত্রঃ ইউএনবি