অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

‘বেশি খাওয়া নয়’ বেশি এবাদতের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে

0
.

বছরের পবিত্রতম এবং শ্রেষ্ঠতম মাস ‘মাহে রমজান’ আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। অল্প ক’দিন পরই বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান এই মহান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে মনোনিবেশ করবে। মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে মাহে রমজান। মহান আল্লাহ এই মাসে তার পবিত্র কালাম ‘কোরআনুল কারিম’ অবতীর্ণ করার মাধ্যমে এ মাসকে মহিমান্বিত এবং বরকতময় করেছেন। এ মাসে তিনি অসংখ্য পাপীকে ক্ষমা করে দেন। এ মাসেই তিনি শয়তানকে বন্দি করে রাখেন। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন এবং জান্নাত ও আকাশের দরজাগুলো খুলে দেন। প্রতিদিন অগণিত জাহান্নামিকে মুক্তি দেন। সুতরাং মুসলিমদের কাছে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিম মাত্রই এ মাসের বরকত এবং পুণ্য লাভের জন্য সচেষ্ট থাকে। এ বরকতময় মাসটি যেহেতু আমাদের একেবারেই কাছে, তাই এ মাস আসার আগেই নিজেদের এ মাসের ইবাদতের জন্য প্রস্তুত করে নিতে হবে। ভালো কিছু লাভের জন্য যেমন ভালো প্রস্তুতি এবং পূর্ব পরিকল্পনার প্রয়োজন, রমজানের উপকারিতা বা ফজিলত লাভের জন্যও তেমনি পূর্বপ্রস্তুতি আবশ্যক। কিন্তু এ প্রস্তুতি কেমন হওয়া দরকার, সেটা আগে আমাদের জানা উচিত।

‘‘আমরা অনেকেই রমজান আসার আগে ভালো ভালো খাবার খেয়ে নিই এবং বলি যে, ‘রমজান তো এসে গেছে; মুখে তালা লাগাতে হবে, তাই এখন ভালোভাবে খেয়ে নেওয়া দরকার!’ এ ধরনের কথা প্রকৃত মুমিনরা বলতে পারে না। কারণ তারা রমজানকে কষ্টের মাস মনে করে না, বরং এ মাস তাদের আনন্দের কারণ। তাই তাদের প্রস্তুতিও বেশি করে খেয়ে নেওয়া নয়, বরং এ মাস আসার আগেই বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করার মাধ্যমেই তারা এ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে’’ রমজানের প্রস্তুতিস্বরূপ আমরা যে কাজগুলো করতে পারি, সেগুলো নিম্নরূপ :

১. দোয়া বা প্রার্থনা : রমজান আসার আগে আল্লাহর কাছে রমজান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি এবং রমজানের রোজাগুলো সুস্থতার সঙ্গে পালন করার তওফিক কামনা করে বেশি বেশি প্রার্থনা করা উচিত।

২. নফল সিয়াম পালন : যে কোনো কাজ হঠাৎ করতে গেলে কষ্টকর মনে হয়। তাই রমজানের ফরজ সিয়াম পালনে নিজের দেহ ও মানসিকতাকে প্রস্তুত করার জন্য শাবান মাসে বেশি বেশি নফল সিয়াম পালন করা উচিত। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) রমজান মাসের পর শাবান মাসেই বেশি সিয়াম পালন করতেন। কোনো কোনো হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি এ মাস পুরোই সিয়াম পালনে অতিবাহিত করতেন। সাহাবি উসামা ইবনে জায়েদ (রা.) রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি এ মাসে বেশি রোজা রাখেন। উত্তরে রাসুল বললেন, ‘রজব এবং রমজানের মধ্যবর্তী শাবান এমন একটি মাস, যার (মাহাত্ম্য) সম্পর্কে মানুষরা গাফেল। অথচ এ মাসে আল্লাহর কাছে মানুষের আমলগুলো উঠানো হয়। আমি চাই রোজাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে উত্থাপিত হোক’ (নাসায়ি)। তাছাড়া যাদের ওপর কাজা রোজা থাকে, তারা শাবান মাসে তা পূরণ করে নেবে। আয়শা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের রোজা কাজা থাকত, আমি তা শাবান মাস ব্যতীত অন্য মাসে পূরণ করার সুযোগ পেতাম না।’ (বুখারি মুসলিম)

৩. কোরআন শিক্ষা :রমজান কোরআনের মাস। এ মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। রাসুল (সা.) এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হাদিসে এসেছে, এ মাসে প্রতিদিন জিবরাইল (আ.) রাসুলের কাছে আগমন করতেন। রাসুল তাকে কোরআন শোনাতেন। তাই এই মাসে পবিত্র কোরআন অন্ততপক্ষে একবার খতম করার নিয়ত রাখা উচিত। এ জন্য রমজান আসার আগেই বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করে নিতে হবে। তাছাড়া কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত, বিশেষ করে বিশুদ্ধভাবে নামাজ পড়ার নিয়মকানুন শিখে রাখতে হবে, যেন রমজানের ইবাদতগুলো বিশুদ্ধভাবে পালন করা সম্ভব হয়।

৪. রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা করা : এটা অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, রমজানের আগমনের আগেই রোজার মাসয়ালাগুলো জেনে নিতে হবে, পরিবারের লোকদেরও তা শিক্ষা দিতে হবে।

৫. হালাল জীবিকা : আল্লাহর দরবারে ইবাদত কবুল হওয়ার একটি শর্ত হচ্ছে হালাল জীবিকা অন্বেষণ। রমজানের সেহরি ও ইফতারি- এ দুটি কাজও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আমাদের সেহরি এবং ইফতারি যেন কিছুতেই হারাম উপার্জন থেকে না হয়। রমজান আসার আগেই হালাল রিজিক অন্বেষণে সচেষ্ট হতে হবে।

৬. পাপ কাজ পরিত্যাগ : রমজান আসার আগেই যাবতীয় পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে হবে, যাতে রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার্থে এ মাসে সব ধরনের পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়। যাদের ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাদের দায়িত্ব রমজানের আগেই তা পরিত্যাগ করা। যারা অশ্নীল কাজে জড়িত হওয়া কিংবা অশ্নীল ছবি-ভিডিও দেখায় অভ্যস্ত, তারা যেন রমজানের আগেই এসব কাজ থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে নেয়। গিবত, পরনিন্দা, হিংসা, বিদ্বেষ, চোগলখুরি, অহঙ্কার ও কৃপণতার মতো গর্হিত কাজগুলো অবশ্যই পরিত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

এভাবে রমজানে সঠিকভাবে সিয়াম সাধনা এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য অবশ্যই আমাদের রমজানের আগেই নিজেদের মানসিক ও শারীরিকভাবে তৈরি করে নিতে হবে। পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, সহকর্মী- সবার সঙ্গে রমজান বিষয়ে আলোচনা বাড়িয়ে দিয়ে রমজানের আগমনবার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত বাড়িয়ে দিন এবং রমজানের রোজাগুলো যথাযথভাবে পালন করার তওফিক দান করুন।