অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নিখোঁজের একদিনের মাথায় কর্ণফুলীতে পাওয়া গেল শারমিনের লাশ

0
.

নিখোঁজের হওয়ার এক দিনের মাথায় কর্ণফুলী নদী থেকে সাহিদা আক্তার শারমিন (২২) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার বিকালে রাউজান উপজেলার খেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীতে লাশটি ভাসতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত শারমিন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানা মকবুল আহমেদ বাড়ির মো. শহীদুল্লাহর মেয়ে।

এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ ভূঁইয়া বলেন, ‘কর্ণফুলী নদী থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে সুরতাহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত করা হবে। নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা তার মৃত্যুর ব্যাপারে ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাব। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ও তার নিখোঁজের ব্যাপারে আরও তদন্ত শেষে ঘটনার রহস্য উম্মোচিত হলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

নিহত শারমিনের স্বজনরা জানায়, গত বছরের ২ নভেম্বর শারমিনের সাথে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ নোয়াগাঁও ফকিরখীল এলাকার নবীর হোসেনের পুত্র মো. আলমগীরের বিয়ে হয়। আলমগীর ঢাকার ধানমন্ডি ৬/এ আবাসিকে একটি ভবনে কেয়ারটেকারের কাজ করেন। বিয়ের পর থেকে সুখেই সংসার কাটছিল তাদের। সম্প্রতি বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে স্বামীসহ শারমিন বাপের বাড়ীতে যায়। প্রায় ১০ দিন থাকার পর ২৮ এপ্রিল শ্বশুর বাড়িতে ফিরে যান তারা।

এরপর সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাতে তার স্বামী ঢাকার কর্মস্থলে চলে যায়। পরদিন ৩০ এপ্রিল ভোরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় শারমিন । এই ব্যাপারে তার বাবা ঐদিনই রাঙ্গুনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। পরদিন বুধবার কর্ণফুলীতে তার লাশ পাওয়া যায়।

গৃহবধুর স্বামী মো. আলমগীর বলেন- বিয়ের পর থেকে সুখেই সংসার কাটছিল দু’জনের। আমাদের পরিবারের সবাই তাকে অনেক ভালবাসতো। সম্প্রতি আমার আত্মীয়ের মৃত্যুর সংবাদে লাশ দেখে ফেরার পর থেকে তার আচার-ব্যবহারে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা দেয়। সে তার মাথা ও চুল টানতে টানতে কেমন যেন লাগছে বলে জানায়।

বিষয়টি আমি আমার শ্বশুরকে বললে উনি বৈদ্য দিয়ে নানা কোরআনি চিকিৎসা চালান। আমিও বেশ কয়েকজন বৈদ্যকে দেখায় এবং ডাক্তারি চিকিৎসাও করি। গত ২৯ এপ্রিল আমি কর্মস্থলে ঢাকা ফিরে যাওয়ার সময় আমাকে সে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে এবং বিদায় জানায়। ঢাকা পৌছে মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি ভোর হতে তার স্ত্রী নিখোঁজ। ঘরে কাউকে কিছু না বলে সে কোথায় চলে গেছে, কেউ জানে না। খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে আসি। শ্বশুরের সাথে একসাথে আমিও তাকে সম্ভাব্য স্থানে খুঁজতে শুরু করি। বৈদ্যের বাড়িতে গিয়ে তার ব্যাপারে জানার চেষ্টা চালায়।

তিনি আরো বলেন, ইদানিং সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। হয়তো সেই কারণেই অবচেতন মনে সে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে।’

নিহত শারমিনের বাবা শহীদুল্লাহ জানান, মেয়ে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে বৈদ্যের বাড়িতে গিয়ে হাজিরা দেখেন। পরে রাঙ্গুনিয়া থানায় গিয়ে একটি নিখোঁজের ডায়েরি করি। তার মেয়ে ও স্বামীর সাথে তেমন কোন মতানৈক্য ছিল না। তবে সাংসারিক ছোটখাট কিছু অশান্তি ছিল। হয়ত এই কারণেই আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

মেয়ের চাচা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘একটি মেয়ে নিজে নিজে বের হয়ে যাওয়া এবং পরে কর্ণফুলী থেকে লাশ পাওয়া। এরমধ্যে রহস্য অবশ্যই আছে। এমনি এমনি একজন সুস্থ মানুষ কিভাবে মারা যেতে পারে। এটি আসলে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। এই ব্যাপারে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’