অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রিংকেল-অ্যান্টি ফেসিয়াল

0
.

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বকের কানেকক্টিভ টিস্যুতে থাকা কোলাজেন এবং ইলাস্টিন দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে ত্বকের টানটান ভাব কমতে থাকে। ফলশ্রুতিতে চামড়া কুঁচকে যাওয়া, ভাঁজ পড়া বা ঝুলে যাওয়া ইত্যাদি নানা সমস্যা তৈরী হয় যেগুলো রিঙ্কেল হিসাবে পরিচিত। এটি হয় আমাদের শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট কমে যাওয়ার ফলে। এটি সাধারণত মুখে, গলায় এবং হাতে দেখা যায়। যখন দেখবেন চোখের কোনা, ঠোঁটের আশেপাশের সেনসিটিভ ত্বকে লাইনড বা ক্রিজ স্কিন দেখাচ্ছে তখনই বুঝবেন আপনি রিঙ্কেলের শিকার হয়েছেন। যদিও কিছু ক্রিজ সাময়িক কিন্তু তাৎক্ষণিক যত্ন না নিলে এই দাগ গুলো স্থায়ী হয়ে যায়। তাই আজ এমন এক ফেসিয়ালের কথা বলবো যেটির নিয়মিত অ্যাপ্লিকেশন আপনাকে একটি স্মুদ ত্বক উপহার দিতে বাধ্য। অনেকে আমার কাছে অ্যান্টি-রিংকেল ক্রিমের নাম জানতে চেয়েছেন তাই সেই সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিব কিছু প্রোডাক্টের সাথে। এবার দেখা যাক ফেসিয়ালের পদ্ধতি।

ক্লিনজ এবং এক্সফলিয়েসনঃ

প্রথমে আমরা আমাদের ত্বক ঘরোয়া কিছু উপাদান দিয়ে পরিষ্কার করে নেবো। এতে পরবর্তীতে যে মাস্ক ব্যবহার করবো তার উপকারিতা ভোগ করা সহজ হবে। ১ স্লাইস খোসাসহ গ্রেটেড আপেলের সাথে ২ টেবিল চামচ দই, ১ চা চামচ অলিভ অয়েল আর ১ চা চামচ সাইট্রাস জুস (লেবু , কমলা ) একসাথে মিশিয়ে মুখে এবং গলায় হালকা হাতে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। তারপর কিছুটা সময় মুখে ঐভাবে রেখে দিন। এতে ক্লিনজার আপনার ত্বকের উপর কাজ করবে আর রক্ত সারকুলেশনের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এরপর এক্সফলিয়েসন করা জরুরী। এতে আপনার ত্বকের সব মরা কোষ দূর হবে আর যে মাস্ক দেয়া হবে তার উপকারিতা সম্পূর্ণ রূপে পাওয়া যাবে। ডালিমের শুকনো খোসা চূর্ণের সাথে দুধের সর এবং গোলাপ জল মিশিয়ে স্ক্রাবিং এর কাজটি সেরে ফেলুন। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

লোমকূপ ওপেন করার জন্য স্টিম করুনঃ

আপনার ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করার জন্য স্টিম নেয়া জরুরী। ১০-১৫ মিনিট ধরে গরম পানির ভাপ নিন মুখে।

ফেসিয়াল মাস্কের ব্যবহারঃ

এবার পালা ফেসিয়াল মাস্ক লাগানোর। আমি কয়েকটি মাস্কের কথা বলবো আপনারা আপনাদের আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়তা, উপকরণ প্রাপ্যতা এবং ত্বকের ধরনের ভিত্তিতে মাস্ক বেঁছে নিবেন।

বানানা পিল মাস্কঃ

কলাতে আছে অনেক ধরনের ভিটামিন, যা আপনার ত্বককে রিজুভিনেট করে আর রিংকেল থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই আপনার মুখে যদি রিংকেলের প্রভাব থাকে তবে খোসা সহ পাকা কলার কয়েক টুকরা পেস্ট করে নিন এর সাথে ডিমের কুসুম, টক দই এবং মধু মিশিয়ে অ্যান্টি- রিঙ্কেল মাস্ক বানিয়ে ফেলুন। ১০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখলেই চলবে।

কিউকাম্বার মাস্কঃ

১/৪ ভাগ খোসা ছাড়ানো শশা গ্রেট করে নিন। এর সাথে ১টি ডিমের সাদা অংশ, ১ চা চামচ লেবুর রস নিন। এই সবগুলো উপাদান ব্লেন্ডারে ব্লেণ্ড করে নিন।শশা মুখের কালো দাগসহ রিঙ্কেল কমিয়ে দেবে, ডিমের সাদা অংশ ত্বককে টাইট করবে আর লেবুর রস এক্সফলিয়েট করবে।

এভোক্যাডো মাস্কঃ

১টি ডিমের সাদা অংশ স্টিফ টেক্সচার না পাওয়া পর্যন্ত ফেটান। এর সাথে ১/৪ ভাগ ম্যাশড এভোক্যাডো, আর ১ চা চামচ মধু মিশান। এই স্মুদ পেস্ট ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়েশ্চারাইজ করবে। যেটির অভাবে ত্বকে সাধারনত ভাঁজ পড়ে।

পাকা পেঁপের মাস্কঃ

১ চামচ শুকানো পাকা পেঁপের খোসার গুঁড়া নিন। এর সাথে ২-৩ ফোঁটা গ্লিসারিন এবং ১ চামচ গোলাপ জল নিন। ভালো ভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মুখে লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা যোগাবে, করে তুলবে প্রাণবন্ত।

ভিটামিন ই মাস্কঃ

৩টি ভিটামিন ই ট্যাবলেটের কনটেন্ট একটি বাটিতে নিন তারপর এতে যোগ করুন ২ টেবিল চামচ টক দই, ১/২ চা চামচ মধু এবং ১/২ চা চামচ লেবুর রস। এই মিশ্রণটি একটি কটন বলের সাহায্যে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বাঙ্গির মাস্কঃ

ত্বকের ভাঁজ পড়া কমাতে ও কালচে ভাব দূর করতে বাঙ্গির খোসা (পাল্প), মটর ডাল বাটা, ডিমের কুসুম, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ক্লিঞ্জিং, স্ক্রাবিং এর পর নিয়মিত এই মাস্ক ব্যবহারে আস্তে আস্তে ত্বকের ভাঁজ পড়া ভাব কমে ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ।

এবার আসুন কিছু অ্যান্টি-রিংকেল ক্রিমের আলোচনায়। প্রথমেই শুরু করা যাক সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী কিছু ক্রিমের পরিচিতিতে।

L’Oreal Revitalift Anti-Wrinkle and Firming Day Cream- এটি লোকাল দোকানগুলোতে ৮০০-৮৫০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। এটি আপনার জন্য সানস্ক্রিনের কাজ করবে। ভাঁজ পড়া ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে বেশ কার্যকরী এই ক্রিমটি। ত্বকে দ্রুত শোষণ হয় বলে ইন্সট্যাণ্টলি আপনি পেয়ে যাবেন একটি নরম তুলতুলে ত্বক। দিনের বেলা বাইরে যাবার পূর্বে মুখে এবং গলায় লাগিয়ে নিবেন।

Neutrogena Healthy Skin Anti-Wrinkle Intensive Night Cream- রিজনেবল প্রাইজের মধ্যে নিউট্রেজেনা এর স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো বেশ ভালোই। ক্লিনিক্যালি টেস্টেড এই ক্রিমে থাকা hyaluronic acid বয়সের ছাপ লুকিয়ে ফেলে ৪ সপ্তাহ ব্যবহার করার পরেই। দাম পড়বে ১২০০ টাকার মত।

এছাড়াও আপনি যদি বেস্ট, ওয়ার্ল্ড ফেমাস কোন অ্যান্টি- রিঙ্কেল ক্রিম চান আর আপনার বাজেট একটু বেশি হয় তবে নীচের যেকোনো একটি বেঁছে নিতে পারেন।

LancГґme RГ©nergie Cream Anti-Wrinkle and Firming Treatment- সাড়ে ছয় হাজার টাকার এই ক্রিমটি যেন পুরোটাই জাদু। প্রমানিত হয়েছে একদম নাটকীয়ভাবে এটি ফাইন লাইন, রিঙ্কেলের আ্যাপিয়ারেন্স কমিয়ে দেয়। আপনার ত্বক হয়ে উঠবে স্মুদ, প্রানবন্ত।

Clinique Repairwear Day SPF 15 Intensive Cream- এই হাইড্রেটেড ক্রিমটি খুব দ্রুত ত্বক রিপেয়ার করে। Spf ১৫ সমৃদ্ধ এই ক্রিমটিতে যোগ করা হয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেণ্ট যার অভাবে সাধারণত আমাদের ত্বকে ভাঁজ পড়ে। দাম পড়বে ৪৮০০ টাকা।

এছাড়াও আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার প্রতিও যত্নশীল হতে হবে। টানটানে ত্বকের জন্য ব্যালেন্স ডায়েট অনেক বেশি কার্যকর। তাজা ফল, সবজি এবং হোল গ্রেন রিঙ্কেল ফ্রি ত্বকের জন্য অপরিহার্য। তবে এটি না বললেই নয় তিসির তেল এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি এটি যোগাড় করতে পারেন তবে প্রতিদিন অল্প করে খেতে পারেন আর প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি আপনার ত্বকে আর্দ্রতা যোগাবে আর আপনি থাকবেন রিঙ্কেল থেকে কয়েকশ হাত দূরে।