অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চুল আপনার পি এইচ ব্যালেন্সড তো?

0
.

পি এইচ বা পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন হল কোন একটি পদার্থের এসিডিক বা এলকালীর পরিমাপ। ০-১৪ পর্যন্ত মাপের স্কেল দ্বারা এটি পরিমাপ করা হয়। মানুষের চুল, মাথার তালুর তেল, সেবামের পি এইচ সাধারণত ৪.৫ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত থাকে। যা স্কেল অনুযায়ী এসিডিক। এই ন্যাচারাল হেয়ার এসিডিটি চুল এবং মাথার তালুকে ফাঙ্গাস আর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে আর কিউটিক্যালকে রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। কিছু কিছু চুলের প্রোডাক্ট এই ন্যাচারাল পি এইচ ব্যাহত করে। নীচের স্কেল থেকে সহজেই বুঝতে পারবেন কত থেকে কত রেঞ্জ হলে হবে এসিড, ন্যাচারাল আর আ্যালকালি।

আপনার চুল পি এইচ ব্যালেন্সড কিনা তা বোঝার উপায়ঃ

– যদি আপনার মাথার তালুতে ফাঙ্গাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন থাকে তাহলে বুঝবেন আপনার চুল অনেক বেশি আ্যালকালি। তার মানে আপনি চুলের জন্য যে প্রোডাক্ট ব্যবহার করছেন তার পি এইচ ৭ এর উপরে। যা আপনার চুলের স্বাভাবিক এসিডিক সেবামকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই সেবামই ফাঙ্গাসের আক্রমন থেকে আপনার চুলকে রক্ষা করে।

.

– যদি আপনার চুল কার্লি হয়ে থাকে তাহলে আপনার চুলের কিউটিক্যাল অলরেডি ওপেন আর এই ওপেন থাকার কারণে আপনার চুলের পি এইচ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ উপরে।

– সোজা চুলেও সঠিক পি এইচের ঘাটতি দেখা দিতে পারে যদি না আপনার নির্বাচিত চুলের প্রসাধনীর উপর গুরুত্ব না দেন বা নির্বাচন ভুল হয়ে থাকে।

– কালার করার পর চুলের স্বাভাবিক পি এইচ অনেকটাই নষ্ট হয়। কেননা অধিকাংশ কালারিং কিটস গুলোতে আ্যালকালি জাতীয় পদার্থ থাকে।

– যখন দেখবেন চুল শুষ্ক হয়ে এসেছে, নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছে, সহজেই ভেঙ্গে যাচ্ছে তখন বুঝতে হবে যে আপনার চুল সঠিক পি এইচ রেঞ্জের মধ্যে নেই।

আমাদের চুলের ওপর পি এইচ এর প্রভাবঃ

কিছু কিছু চুলের প্রোডাক্ট আছে যেগুলো আ্যালকালাইন পি এইচ লেবেলে তৈরি যা চুলের কিউটিক্যাল ওপেন করে এবং চুলের স্বাভাবিক রঙ নষ্ট হয়, চুল ড্যামেজ হয়ে যায়। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে আবার চুলের নরমাল পি এইচ পুনরুদ্ধার করবেন চলুন তা জানা যাক।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারঃ

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের পি এইচ ৩। আধা কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের সাথে আধা কাপ পানি মিশিয়ে নিন এতে ভিনেগারের পি এইচ হবে ৪। এবার মিশ্রণটি গরম করুন। হালকা গরম থাকতে থাকতেই মাথার তালুতে অ্যাপ্লাই করুন। ভিনেগারে থাকা এসিড আপনার স্কাল্পের পি এইচ রিষ্টোর করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে ১-২ বার এটি করবেন।

এলোভেরা জেলঃ

টাটকা এলোভেরা পাতার ভেতরের জেল ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর স্প্রে বোতলে ভরে পুরো চুলে ছিটিয়ে দিন। এভাবে টানা কয়েক সপ্তাহ করুন। দিনে কয়েকবার করে করবেন।

পি এইচ ব্যালেন্সড শ্যাম্পুঃ

শ্যাম্পু কেনার আগে বোতলের গায়ে লাগানো লেবেল দেখে নিন। শ্যাম্পুর পি এইচ হইত ৪-৮ এর মধ্যে হবে। কিন্তু এটি আপনার মাথার স্কাল্পের পি এইচ কাছাকাছি যেমন ৫ হওয়া উচিত।

ঘরোয়া শ্যাম্পুঃ

১ ১/২ কাপ নারকেলের দুধ, ১ ৩/৪ কাপ এলোভেরা জেল একসাথে ভালো ভাবে মেশান যেন একটির সাথে আরেকটি উপাদান একদম মিশে যায়। তারপর এই মিশ্রণ বরফ জমানোর ট্রেতে জমিয়ে নিন। প্রত্যেক সময় গোসলের ১৫ মিনিট আগে একটি একটি কিউব বের করে নিন আর ব্যবহার করুন শ্যাম্পুর মত। এভাবে কয়েক সপ্তাহ করলেই বেশ উপকার পাবেন।

লেবুর রসঃ

২টি লেবুর রস নিন। এর সাথে ১ কাপ পানি মিশান, সঙ্গে দিন ২-৩ ফোঁটা লেমন অয়েল। যতক্ষণ পর্যন্ত না মিশ্রণটি ঘোলা দেখাবে ততক্ষণ মিশাতে থাকুন। এবার হারবাল কোন শ্যাম্পু করার পর এই সলিউশনটি দিন কিউটিক্যাল ক্লোজ করার জন্য। তারপর কিন্তু এই সলিউশনটি ধুয়ে ফেলবেন না। ঐ ভাবেই থাকুন দিনভর।

লিভ-ইন-কন্ডিশনারঃ

ভেজা চুলে লিভ-ইন-কন্ডিশনার লাগান। এতে করে চুল আবার ন্যাচারাল পি এইচ ৪.৫-৫.৫ এসিডিটি তে চলে আসবে। ঘরোয়া পদ্ধতিতেও এই কন্ডিশনার তৈরি করতে পারেন। ৩০ মিলি লিটার সিলিকন ফ্রি কন্ডিশনার নিন ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল এবং ২ টেবিল চামচ জজোবা অয়েল নিন। একটি চামচ দিয়ে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর ভেজা চুলে লাগিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।

টিপসঃ

– যদি আপনার চুল কার্লি হয়ে থাকে তবে লিভ-ইন-কন্ডিশনার রেসিপিতে বাদামের তেল বা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে নিন।

– লিভ-ইন-কন্ডিশনার বেশি দিন ভালো থাকে না। তাই শুধু মাত্র ব্যবহার করার আগেই বানিয়ে নিন।

আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। সবাইকে ধন্যবাদ।