অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কথিত বন্দুকযুদ্ধে একরাতেই ৫ জন নিহত

0
.

কক্সবাজার, যশোর ও পাবনায় এক রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ বলছে, নিহতদের মধ্যে দুজন মানবপাচারকারী, একজন ডাকাত দলের সদস্য, একজন ইয়াবা কারবারি এবং বাকি একজন অজ্ঞাত।

গতকাল সোমবার দিবাগত গভীর রাত এবং আজ মঙ্গলবার ভোররাতে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

কক্সবাজার থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সদর ও টেকনাফ উপজেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কক্সবাজার শহরের কাটা পাহাড় এলাকায় একজন এবং টেকনাফ উপজেলায় দুজন নিহত হন।
পুলিশ দাবি করেছে, কক্সবাজার শহরের কাটা পাহাড় এলাকায় নিহত সৈয়দুল মোস্তফা ওরফে ভুলু তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং টেকনাফে নিহত দুজন মানবপাচারকারী।

সৈয়দুল মোস্তফা কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। মাদক বেচাকেনার জন্য তাঁর নিজস্ব বাহিনী রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দিন খন্দকার দাবি করেন, মোস্ট ওয়ান্টেড ইয়াবা কারবারি ভুলুকে নিয়ে গতকাল রাত আড়াইটার দিকে শহরের কাটা পাহাড় এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে যায় পুলিশ। এ সময় ভুলুর নিজস্ব বাহিনী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করে।
‘এতে ভুলু গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।’

ওসি ফরিদ উদ্দিন আরো দাবি করেন, এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ ইয়াবা, একটি এলজি, দুটি তাজা কার্তুজ ও ছয়টি গুলির খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।

অপরদিকে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর মেরিন ড্রাইভ সড়কে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতরা হলেন টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা আজিম উল্লাহ (২০) ও উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা শিবিরের আবদুস সালাম (৫২)। দুই রোহিঙ্গা নাগরিক চিহ্নিত মানবপাচারকারী ছিলেন।

পুলিশের দাবি, এ সময় চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল, কনস্টেবল মোবারক হোসেন, মানিক মিয়া ও কায়রুল।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস দাবি করছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাতে পুলিশ শামলাপুর মেরিন ড্রাইভ সড়কে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মানবপাচারকারীরা। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে পালানোর সময় দুই মানবপাচারকারী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে দুটি দেশি অস্ত্র (এলজি) ও ১০টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি করছেন ওসি প্রদীপ কুমার।

ওসি প্রদীপ কুমার আরো বলেন, ‘নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। নিহতরা তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারী ছিলেন।’

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাকারিয়া মাহমুদ জানান, পুলিশ গুলিবদ্ধ দুই রোহিঙ্গাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। দুজনের শরীরে দুটি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

যশোর: আজ মঙ্গলবার ভোরে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে উপজেলার নোঙ্গরপুর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব হাসান দাবি করেন, দুই দল ডাকাতের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর পেয়ে পুলিশ নোঙ্গরপুরে যায়। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। এর কাছাকাছি এলাকায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ।

‘গুলিবিদ্ধ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ানশুটার গান, তিনটি গুলি, তিনটি হাঁসুয়া ও এক জোড়া স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে,’ যোগ করেন এসআই মাহবুব।

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শফিউল্লাহ সবুজ বলেন, আজ ভোরে কোতোয়ালি থানার পুলিশ গুলিবিদ্ধ একটি মরদেহ নিয়ে আসে হাসপাতালে। মরদেহটি মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পাবনা: ঈশ্বরদী উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাফিজুর রহমান তিতাস (৩৬) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার সারা ঝাউদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিতাস ঈশ্বরদী উপজেলার বাঁশেরবাগা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ ১৬টি মামলা রয়েছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস দাবি করেন, গোপন সূত্রে পুলিশ জানতে পারে, ঈশ্বরদী উপজেলার সারা ঘাটের ঝাউদিয়া এলাকায় একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ খবরের ভিত্তিতে ঈশ্বরদী সার্কেল এএসপি জহুরুল হক এবং এসআই মানিক কুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো দাবি করেন, এ সময় তিতাস গুলিবদ্ধ হয়। দ্রুত তাঁকে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু গুলির খোসা ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে।

নিহত তিতাসের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।