অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রঙিন পাখা মেলে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে দেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্ক

1
01
প্রজাপতির আবাস।

প্রজাপতি এমন একটি পতঙ্গ যে, এমন কেউই নেই যা দেখার পর চোখের পলক সরাতে পারবে। সত্যি অভাবনীয় এক সৌন্দর্য্য নিয়ে প্রজাপতি তার রঙিন পাখা মেলে ঘুরে বেড়ায়, আর যা দেখার পর সত্যিই গাইতে ইচ্ছে করে সেই গানটি

”প্রজাপতি প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা?
টুকটুকে লাল-নীল,
ঝিলিমিলি আঁকাবাকাঁ।”

প্রজাপতি এতোটাই মনমুগদ্ধকর একটি পতঙ্গ যা দেখে ইচ্ছে জাগে ওর সাথে রঙিন পাখা মেলে যদি হারিয়ে যেতে পারতাম। আর তাই হয়তো দর্শনার্থীদের হারিয়ে নিয়ে যেতে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্ক।

03
আপন ভুবনে খেলছে প্রজাপতি।

চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গায় অবস্থিত এ প্রজাপতি পার্ক। ব্যস্ততার যান্ত্রিক নগরী থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিচরণ করে আসতে পারেন। অনেকটা নীরবে এ পার্কটির যাত্রা শুরু হয়। ৬ একর জায়গার ওপর এ পার্ক গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন ৩ শতাধিক দর্শনার্থী এ পার্কটি দেখতে আসেন, আসে বিদেশি দর্শনার্থীরাও।

একটি মিউজিয়াম, একটি রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ওয়াটার রাইড, কৃত্রিম ঝরনা, বর্ণিল ফুলের বাগান আর সেই বাগানে প্রজাপতির মেলা সব মিলিয়ে বিনোদন উপভোগের অপূর্ব সমন্বয় আছে পার্কটিতে। মাত্র ১০০ টাকায় টিকিট কেটে ঘুরে আসা যাবে পার্কটিতে।
আমাদের দেশে ঠিক আগের মতো রঙ বেরঙের প্রজাপতি দেখা যায় না, এখানে গবেষণাগারটি পূর্ণ রূপে চালু করা হলে দেশে প্রজাপতির বিস্তারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

04
একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিচরণ।

দেশে বনভূমি কমে আসায় প্রজাপতির প্রজনন কমে আসছে আর প্রজনন বাড়াতে এ পার্কটি আগামীতে আরো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। প্রজাপতি নিয়ে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গবেষণা করতে পারবে। আর এ গবেষণার বিষয়টি এগিয়ে নিতে এর পেছনে কাজ করছে দেশের প্রজাপতি এ পার্কটি। দেশে প্রজাপতির ৬০০ প্রজাতি থাকলেও এ পার্কেও মিউজিয়ামে ২০০ প্রজাপতি সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, ব্যবসায়িক উদ্দেশে নয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে পারছি সেটাই তাদের জন্য বড় কথা।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা আরো জানান, প্রজাপতি সংরক্ষণ ও রক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালাতে আগামীতে প্রজাপতির লগো সংবলিত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হবে এবং ব্যাপক পরিসরে কাজ শুরু করতে আরা দুই একর জায়গার ওপর পার্কটি বর্ধিত করা হবে।

05
২০০৯ সালে ৬ একর জায়গা নিয়ে দর্শনার্থীদের নজর কারতে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র প্রজাপতি পার্ক।

দেশে দিন দিন বনভূমি কমে আসার কারণে জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জীববৈচিত্র্য। আর এই প্রতিষ্ঠানটির মতো দেশের অন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠান জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসলে একদিকে দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অন্যদিকে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতো এমন মত বিশেষজ্ঞদের।

চট্টগ্রামের ১৫ নং নেভাল একাডেমীর এয়ারপোর্টের পাশ ঘীরে ২০০৯ সালে ৬ একর জায়গা নিয়ে দর্শনার্থীদের নজর কারতে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র প্রজাপতি পার্ক। প্রায় ৮০ প্রজাতির প্রজাপতির মেলা নিয়ে বসেছে পার্কটি। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য পার্কটিতে রয়েছে, নৌকা ভ্রমণ, কৃত্রিম ঝর্ণা, শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, প্রজাপতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বাটারফ্লাই মিউজিয়াম, বিভিন্ন পশু-পাখির মাটির তৈরী বিশাল ভাষ্কর্য্য ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য হল এবং উন্নত মানের রেস্তোরা এবং রিসোর্ট।

02
”প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা”

প্রজাপতি পার্ক ঘুরে পার্কে অবস্থিত বিভিন্ন দিক ও দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে পাঠক ডট নিউজের পাঠকদের জন্য

সংক্ষিপ্ত ”এক নজরে প্রজাপতি পার্ক” তুলে ধরা হলো-

প্রজাপতির জোনঃ পার্কে ডুকতেই হাতের বামে দেখা মিলবে বড় আকৃতির জালি দিয়ে একটি স্থানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে পার্কটির মূল আকর্ষণ ৮০ প্রজাতির প্রজাপতির বিভন্ন রঙ-বেরঙের প্রজাপতির সাথে।
প্রজাপতির দেখার সময়ঃ রৌদ্র উজ্বল দিন প্রজাপতি দেখার উত্তম সময়। তাই পার্কটিতে অবস্থিত প্রজাপতি জোনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশি সংখ্যক প্রজাপতির দেখা মিলবে। বিকেল বেলা বা মেঘলা আবহাওয়ায় ওরা সাধারনত পাতার নিচে অথবা ঝোপঝাড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকে।

প্রজাপতির খাবারঃ প্রজাপতি মূলত তার পায়ের সাহায্যে ফুলের মধু আহোরন করে থাকে। আর তাই তাদের পচ্ছন্দের গাছ অর্থাৎ ফুল গুলো চাষ করা হয় পার্কের বাগান জুড়ে। এদের প্রিয় ফুল হচ্ছে, একজোড়া ও ন্যানথোনা ফুল। এছাড়া তাদের কৃত্রিম ভাবে আনারাস কেটে খাওয়ানো হয়।

প্রজাপতির প্রজননঃ বাংলাদেশে সাধারনত মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রজাপতির প্রজননকাল।

14233635_1803452796557285_1457701249_o
পার্কের নিজস্ব দীঘিতে রয়েছে নৌকা ভ্রমণের সুবিধা।

নৌকা ভ্রমনঃ পার্কের পূর্ব দিকে অবস্থিত তাদের নিজস্ব দীঘিতে রয়েছে নৌকা ভ্রমণের সুবিধা ।

কৃত্রিম ঝর্ণাঃ পার্কের মধ্যে রয়েছে সর্বমোট ৩টি কৃত্রিম ঝর্ণা যা আপনাকে সাময়িক ঝর্ণা উপভোগের আনন্দ দিতে প্রস্তুত।
বাটারফ্লাই মিউজিয়ামঃ বাটারফ্লাই মিউজিয়ামে কয়েক প্রজাতির মৃত প্রজাপতির মোমী বানিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। এছাড়াও সেখানে প্রজাপতির জীবনচক্র সহ নানান উপাদান তুলে ধরা হয়েছে।

06
দর্শনার্থীদের আর্কষণ করতে তৈরী করা হয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা।

মাটির ভার্ষ্কয্যঃ পার্কটিকে সাজাতে বিভিন্ন পশুর মাটির ভাষ্কর্য্য রাখা হয়েছে। যা নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের।

শিশুদের খেলাধূলাঃ শিশুদের খেলাধূলার জন্য পার্কটি সাজানা হয়েছে তাদের পছন্দনীয় রাইড গুলো নিয়ে।

রিসোর্ট,হল ও রেস্তোরাঃ পার্কটিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রয়েছে হল এছাড়া দূর হতে আগত দর্শনার্থীদের থাকা ও খাওয়ার জন্য রয়েছে মান সম্মত রিসোর্ট ও রেস্তোরা।

08
শিশুদের খেলাধূলার জন্য পার্কটি সাজানা হয়েছে তাদের পছন্দনীয় রাইড গুলো নিয়ে।

সবকিছু এক সাথে দেখতে কেমন লাগল জানতে চাইলে পুরো পরিবার নিয়ে প্রজাপতি পার্কটিতে ঘুরতে আসা শিক্ষক মুবিনুল ইসলাম আমাদের জানায়, ছুটির দিন গুলো ছাড়া পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারিনা। আর তাই আজ ছুটির দিনে বাচ্চাদের একটু প্রকতির সাথে পরিচয় ও আনন্দ দিতে এখানে নিয়ে এসেছি। তারা এখানে খেলতে পারছে, মন খুলে ঘুরতে পারছে আর এই আনন্দ নিতেই প্রায় ছুটির সময় আমি পুরো পরিবার সহ এখানে চলে আসি।

09
প্রজাপতিরা আনারসের রস খেতে খুবই পচ্ছন্দ করে, আনারসের রসে মগ্ন কিছু প্রজাপতি।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রজাপতি পার্কটি নিয়ে বর্তমান ও ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পার্কটির সিনিয়র ম্যানেজার (প্রশাসন) মাহাবুব হাসান পাঠক ডট নিউজকে জানায়, গত ২৩ আগষ্ট আনোয়ারায় অ্যামেুনিয়া গ্যাস বিষ্ফোরনে আমাদের প্রায় ২ হাজার প্রজাপতি মারা যায়। আমরা প্রথমে ৮০ প্রজাতির প্রজাপতি নিয়ে কাজ শুরু করলে বর্তমান আমাদের পার্কে রয়েছে ৪০ প্রজাতির প্রজাপতি। আমরা খুব শীঘ্রই দেশি বিদেশিসহ নানান প্রজাতির প্রজাপতি আমাদের পার্কে আনার ব্যবস্থা করব। এছাড়াও শিশুদের খেলার জন্য আরো বেশ কিছু রাইড যোগ করবো।

১ টি মন্তব্য
  1. Tasnuva Promee বলেছেন

    অনেক সুন্দর প্রতিবেদন বদ্দা। পড়ে ভাল্লাগসে। যদিও এখনও যাইনি তবে যেতে হবে। 🙂