অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে বিকাশের প্রতারণার শিকার হয়ে জীবন দিল কিশোরী শারমিন! (ভিডিও)

4
.

দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিকাশ। কিন্তু এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে প্রতারণার হার কমছে না। নতুন করে যোগ হয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা।

বিকাশের সর্বশেষ প্রতারণার শিকার হয়ে এবার জীবন গেলো এক কিশোরীর। শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্ব কলোনীতে বিকাশের প্রতারণার শিকার হয়ে অপমানে আত্মহত্যা করেছে শারমিন (১৬) নামে এক কিশোরী।

পুলিশ এ ঘটনায় স্থানীয় বিকাশ দোকানের (মায়ের দোয়া ইলেকট্রিক) এক কর্মচারীকে আটক করেছে।

আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কিশোরী নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বিকাশে টাকা পাঠানোর ঘটনায় প্রতারণার শিকার হয়ে সে অপমানে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় বিকাশ দোকানের এক কর্মচারীকে থানায় আনা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, আজ বিকালে বিশ্ব কলোনীর এল-ব্লকের বাসিন্দা কিশোরী শারমিন বিকাশ কোম্পানীর নামে প্রতারণার শিকার হয়ে স্থানীয় বিকাশ দোকান থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু দোকানদারের টাকা পরিশোধ না করায় দোকানী মেয়েটিকে ৩/৪ ঘন্টা দোকানে বসিয়ে রেখে সন্ধ্যায় ইফতারের আগে ছেড়ে দেয়। পরে বাসায় গিয়ে সে অপমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

রাত ৮টার দিকে পুলিশ খবর পেয়ে কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

https://www.youtube.com/watch?v=QGK1XID8dU0

তবে এ ঘটনার ব্যাপারে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত আকবরশাহ থানার ওসি জসিম উদ্দিনকে বার বার ফোন দিয়েও বিস্তারিত ঘটনা জানা সম্ভব হয়নি।

তিনি আটক বিকাশ দোকানদারের নাম বলতে পারেন নি। তিনি বলেন, বিষয়টি বিশ্ব কলোনীর দোকান মালিক সমিতির নেতারা সমাধানের চেষ্টা করছে।

রাতে বিশ্বকলোনীতে গিয়ে মেয়েটির স্বজন ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেলা ১২টার দিকে শারমিন (১৬) এর ফোনে কল আসে। তাকে মোটা অংকের পুরস্কার জিতার লোভ দেখিয়ে নিজের একাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ঢুকাতে বলে প্রতারক চক্র। তার আগেই শারমিন থেকে কৌশলে তার আইডি পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয়।

শারমিন স্থানীয় মায়ের দোয়া ইলেকট্রিক নামে পরিচিত টেলিফোনের দোকানে গিয়ে তার একাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা বিকাশ করার পরপরই প্রতারক চক্র তা অন্য একাউন্টে ট্রান্সপার করে ফেলে। এতে প্রতারণার শিকার হয়েছে বুঝতে পারে শারমিন।

.

ফলে শারমিন দোকানদারকে টাকা দিতে না পারলে তারা শারমিনকে দোকানে আটকে রাখে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আবছার জানান, বিকালে বিকাশের দোকানদার শারমিনে বাবাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানালে তিনি দুরে আছেন এবং রাতে এসে টাকা দেবেন জানানোর পর বিকালে শারমিনকে ছেড়ে দেয় দোকানদার।

স্থানীয় প্রতিবেশীদের ধারণা এ ঘটনায় পিতার বকুনী এবং দোকানে আটকে রাখায় অপমান সহ্য করতে না পেরে কিশোরী শারমিন নিজ বাসায় দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আত্মহত্যার ঘটনা জানাজানি হলেও ঘটনাস্থল থেকে কয়েকশ গজ দুরে অবস্থিত আকবর শাহ থানা পুলিশ রাত ৯টার দিকে ঘরের লোহার দরজা কেটে শারমিনের লাশ উদ্ধার করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের মে মাসে অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন সুবিধা চালু করে বিকাশ। এরপর থেকে নতুন করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।

শুধু এ ঘটনায় নয়, বিকাশ অ্যাপকে কেন্দ্র করে নিত্য-নতুন প্রতারণার পদ্ধতি খুঁজে বের করছে প্রতারকরা। তারা ব্যবহারকারীদের কাছে ফোন করে নতুন কোনো অফারের কথা বলছে। পরে অ্যাপ বা তথ্য হালনাগাদের কথা বলে ব্যবহারকারীদের কাছে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিজেদের ভুলে ফাঁদে পা দিলেও বিকাশের কাছ থেকে এর প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। তাদের বড় অভিযোগটি হলো, বিকাশের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই প্রতারণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

.

মো. মাহাবুর রহমান নামে এক ভুক্তভোগী জানান, গত ২৮ মার্চ বিকেলে একটি নম্বর থেকে বিকাশ কল সেন্টার পরিচয় দিয়ে তার নম্বরে কল আসে। পরবর্তী সময়ে ওই নম্বর থেকে তার কাছে বিভিন্ন কোড ও অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া হয়। যখন তিনি বুঝতে পারেন, তখন সবশেষ।

মাহাবুরের ভাষ্য, ‘আমাকে বলে যে, আমি বিকাশ কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি। আপনার আইডি রিকভার করা হবে। আমি বললাম, আপনি যে বিকাশের কাস্টমার কেয়ারের লোক, তা আমি বিশ্বাস করব কীভাবে? তখন তিনি আমাকে আমার ঠিকানা ও কোন তারিখে কত টাকা বিকাশ থেকে ক্যাশ আউট ও ইন করেছি, তা বলে দেয়।

তখন আমার বিশ্বাস হলো এবং আমি বললাম যে, ঠিক আছে, আমি পরে কথা বলি। তিনি বললেন, যদি আপনি এখন আমাকে কোনো তথ্য দিতে না পারেন, তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি আমাকে পিন কোডসহ কিছু তথ্য দিতে বলল। পরে অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখলাম, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে।’

প্রতারণার বিষয়টি বিকাশ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে মাহাবুর বলেন, ‘আমি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে বিকাশ হেল্প লাইনে কল দেই এবং বিষয়টি জানাই। তবে হেল্প লাইন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন নাই তারা।’

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে জানিয়েছেন কেউ কেউ। তাদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দীনা।

.

২৪ জুন ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে দীনা লিখেন, ‘কিছুক্ষণ আগে বিকাশ মহাখালী অফিস থেকে আমার কাছে ফোন আর মেসেজ আসে। সেখানে বলে, ওরা বিকাশ অ্যাপ চালু করেছে। ওদের সিস্টেম আপডেট হচ্ছে। আমার লাস্ট ট্রানজ্যাকশন ওরা আমাকে জানায় এবং আমার মোবাইলে একটা কোড নাম্বার পাঠায় এবং নতুন পাসওয়ার্ড দিতে বলে। আমি পরে দেখি, আমার বিকাশ ব্যালেন্স শূন্য। সঙ্গে সঙ্গে আমি হেল্পলাইনে কল করি। ওরা বলে এক শ্রেণির প্রতারক দল এখন এভাবে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেয়। দেশের এত বড় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সিকিউরিটির এত দুর্বল হাল!!!’

মো. বশির আহমেদ নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘আমাকে একজন ব্যক্তি কল দিয়ে বলল যে, বিকাশ অ্যাপে কি নতুন কোনো কিছু অ্যাড দিয়েছে? বলে, আমার কাছ থেকে কোড নাম্বার নিয়েছে। এ ব্যাপারে কিছু জানতে চাই আমি।’

সম্প্রতি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়ে বেশ কয়েকটি খবর প্রকাশ হয় দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে। দেশের এক দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিকাশ সংশ্লিষ্ট এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি পদ্ধতিতে বিকাশ অ্যাপের নিরাপত্তা দুর্বলতা কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পদ্ধতিটি হচ্ছে, গ্রাহককে বিকাশ গ্রাহকসেবাকর্মী পরিচয় দিয়ে তার অ্যাকাউন্ট নম্বর ও নাম জেনে নেওয়া। তারপর কৌশলে গ্রাহককে দিয়ে কিছু নম্বর চেপে সিমটি ডাইভার্ট করিয়ে নেওয়া।

এ ক্ষেত্রে ইউএসএসডি মেনুর শর্ট কোড ব্যবহার করা হয়। এরপর বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন কোডের আবেদন জানানো হয়। ফিরতি মেসেজে বিকাশ যে ভেরিফিকেশন কোডটি পাঠায়, সেটি চলে যায় সরাসরি অপরাধীদের হাতে।

ওই ভেরিফিকেশন কোড দিয়েই অ্যাপে প্রবেশ করে পিন নম্বর পরিবর্তনের আবেদন জানায় অপরাধীরা। পরে তারা নতুন পিন নম্বর সৃষ্টি করে ওই অ্যাকাউন্টের টাকা সরিয়ে নেয়। এ পদ্ধতিতে সফল না হলে বিকল্প হিসেবে মাস্কিং ও ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সুযোগ নেয় অপরাধীরা।

বিকাশের ভাষ্য

এ বিষয়ে বিকাশের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার বিষয়ে তিনি জানান, বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছে, কথাটা সঠিক নয়; বরং অ্যাপ ব্যবহারের ফলে গ্রাহকরা কোনো ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত ও নিরাপদে লেনদেন করতে পারছেন।

গ্রাহকের অসেচতনতার কারণে এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটছে জানিয়ে বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনসের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘কিছু কিছু অপরাধীচক্র মোবাইল ফোন প্রযুক্তির অপব্যবহার করে গ্রাহককে ভুয়া মেসেজ দিয়ে বা ফোন কলের মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো গ্রাহকের অসেচতনতা, সরলতা বা লোভের কারণে সফলও হচ্ছে।’

গ্রাহক সচেতনতায় বিকাশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডালিম বলেন, ‘বিকাশ এই ধরনের প্রতারণা সম্পর্কে গ্রাহকদের সচেতন ও সর্তক করতে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে।’

প্রতারিত গ্রাহক ও প্রতারকদের বিষয়ে বিকাশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে, বিকাশ কর্তৃপক্ষ কোনো উত্তর দেয়নি। তারা নিজেদের অ্যাপকে সুরক্ষিত অ্যাপ দাবি করে জানিয়েছে, বিকাশ অ্যাপে নিরাপত্তাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পিন ব্যবহার ব্যতীত বিকাশ অ্যাপের কোনো কার্যক্রম সম্ভব নয়।

লিখিত উত্তরে বিকাশের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের জন্য দুটি উপদেশ দেওয়া হয়।

১. প্রতিবার অ্যাপ ব্যবহারের শুরুতেই একবার পিন দিতে হবে এবং যেকোনো ধরনের লেনদেন করতে আবারও পিন ব্যবহার করতে হবে। পিন গোপন রাখলে অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থাকবে সর্বোচ্চ নিরাপদ ও সুরক্ষিত। এমনকি মোবাইল হারিয়ে গেলেও বিকাশ অ্যাকাউন্টের টাকা সুরক্ষিত থাকবে।

২. বিকাশ অ্যাপ কোনো মোবাইল ডিভাইসে ডাউনলোড করে প্রথমবার লগ ইন করার সময় সঠিক পিন নম্বর দেওয়ার পর গ্রাহকের বিকাশ নম্বরটিতে একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে এসএমএসের মাধ্যমে। সেটা সঠিকভাবে না দিতে পারলে অ্যাপে প্রবেশ করা যাবে না। ফলে যে কেউ চাইলেই বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে প্রতারণা করতে পারবে না।

*বিশ্ব কলোনীতে গলায় ফাঁস দিয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা, আটক ১

 

৪ মন্তব্য
  1. M Nazmul Islam বলেছেন

    নেতারা সমাধান করলে ওসি কেন সরকারি বেতন নিচ্ছেন? হাতে চুড়ি পরা উচিৎ

  2. Fais Al বলেছেন

    মানুষিক টর্চার অনেক খারাপ জিনিষ। ক্ষুদ্রতর স্বার্থে মানুষ কত জঘন্য ভূমিকা পালন করে। অথচ আত্নহত্যায় প্ররোচিত করার ফলাফল যদি জানতো, অপদার্থরা নিজেদের মুখ নিজেরা সেলাই করে দিতো! তবুও এই গর্হিত কাজের ইহ-পরকালীন শাস্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতো! এখন প্ররোচকটা জেল খাটবে, প্রতারণাকারীটাও ধরা পড়লে রক্ষা নাই, ধরা পড়বেও সম্ভবত, ডিজিটাল যুগ বলে কথা! এটা দুনিয়াবি শাস্তি, বাকিটা ওপারে। আসলে মানুষ বডই অনুভূতিহীন। কথায় আছে “যার ঘা তার ব্যাথা”। তীব্রভাবে অন্যকে কষ্ট দেওয়ার আগে মানুষ যদি নির্যাতিতের স্থান থেকে তার ফিলিংসটাকে অনুভব করতে পারতো পৃথিবীটাই অন্যরকম হতো। প্রতারণা, প্ররোচনা ইত্যাদি গর্হিত কাজ থেকে সবাই বিরত থাকতো! কিন্তু তা কেন হবে, পৃথিবী যে স্বার্থান্বেষণের এক বিশাল চারণভূমি!

  3. Rivana Nibiha Ritrika বলেছেন

    MD Sakib

  4. Marjia Juhi বলেছেন

    Nazmul Hoque Chowdhury Al Zobair Shakil…😭