অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নোয়াখালীতে গণপরিবহনে নৈরাজ্য

0
.

গিয়াস উদ্দিন রনি, নোয়াখালী:
পবিত্র ঈদুল ফিততের ছুটি শেষে নোয়াখালী থেকে কর্মস্থলে ফেরার পথে পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে দ্বিগুণ ভাড়া। এ নিয়ে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকারও হচ্ছেন তারা।

জেলায় ঈদ যাতায়াতে এই লাগামহীন বাস ও গনপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধিতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন ঢাকা-চট্রগ্রাম সহ জেলার বাহিরে কর্মরত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তারা ভাড়া বৃদ্ধি রোধে পরিবহন আইনের দাবি করেছেন।

তবে বাস মালিক নেতাদের দাবি- বাস ভাড়া কিছুটা বৃদ্ধি করা হলেও যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধায় অন্যবারের তুলনায় চলাচল করছে পর্যাপ্ত বাস সার্ভিস। ছাড়া যাওয়ার পথে পর্যাপ্ত যাত্রী হলেও আসার পথে যাত্রীশূন্য গাড়ি নিয়ে ফিরতে হয়।

.

অন্যদিকে গণপরিবহনে কয়েকটি চক্রের চাঁদাবাজিতে যানবাহনের চালক, মালিকরা অনেকটা অসহায় হয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন বলেও দাবি পরিবহন মালিকদের।

জেলার মহাসড়কে সড়ক ক্লিয়ার ফি, টার্মিনাল সিরিয়াল, পার্কিং ফির নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। রোববার বিকালে জেলার সর্ববৃহৎ বাস টার্মিনাল সোনাপুর বাস স্ট্যান্ডে হিমাচল এবং লাল সবুজ পরিবহনে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে।

নোয়াখালী-ঢাকা যাতায়াতে হিমাচল, লাল-সবুজ ও একুশে এক্সপ্রেস প্রতি জনের বাস ভাড়া ৩৮০ টাকার স্থলে ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা আদায় করছে। নোয়াখালী-চট্রগ্রাম গামী বাঁধন, রেসালাহ্, শাহী ও জোনাকী পরিবহন ২০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। উপকূলে নোয়াখালী থেকে কুমিল্লার নির্ধারিত ভাড়া ১২০ টাকার স্থলে নেয়া হচ্ছে ১৮০ টাকা। বসুরহাট টু ঢাকা রুটে ড্রীম লাইন পরিবহন ৩০০ টাকার ভাড়া ৩৭০ টাকা আদায় করছে অন্যদিকে বসুরহাট টু চট্রগ্রাম রুটে বসুরহাট এক্সপ্রেসে ১৮০ টাকার ভাড়া ২৫০ টাকা আদায় করছে।

এছাড়া জেলার সোনাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফেনীগামী সুগন্ধা সুপার সার্ভিস, লক্ষ্মীপুরগামী আনন্দ পরিবহন, রামগঞ্জগামী জননী পরিবহন, চেয়ারম্যান ঘাটগামী সুবর্ণ সুপার সার্ভিস, রামগতিগামী সুবর্ণ সুপার সার্ভিস যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছে। শুধু বাস নয়, সিএনজিচালিত, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট পরিবহনগুলোতেও দ্বিগুণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

.

ঢাকাগামী বাস চালক আবদুর রশিদ বলেন সোনাপুর থেকে শুরু করে মাইজদী নতুন বাসস্ট্যান্ড, বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা, সোনাইমুড়ি, কুমিল্লার একাধিক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। তাই ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছি।

সোনাপুর থেকে মাইজদীগামী সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালক এমরান ও মোজ্জামেল হোসেন বলেন, প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা নিচ্ছি। আগে শ্রমিক সংগঠন, মালিক সমিতি, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড, পৌরসভাসহ বিভিন্ন চাঁদা বাবদ ৮০ টাকা দিতে হতো। এখন ঈদকে কেন্দ্র করে সেটা দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে বাড়তি বাড়া না নিলে নিজের খরচ তোলা সম্ভব হবে না।

নোয়াখালী জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা রেদোয়ানুল কবির ক্ষোভ প্রকাশ করে তার ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে বলেন, গাড়িতে চাঁদা আদায় করে আজ অনেকে কোটিপতি। অসাধুসহ মালিকরা অনেক অনিয়ম করে সরকার, যাত্রীদের ফাঁকি দিচ্ছেন। ভাড়া কমাতে হলে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তাহলে মালিকরা দুইশত টাকায় ঢাকায় যাত্রী সেবা দিতে পারবে।

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবু ইউসূফ বলেন, ঈদকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী পরিবহন-মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিক পরিবহন ও ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে। চাঁদাবাজির ব্যাপারে সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলেই সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

১১ পরিবহনকে জরিমানা, অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত
এদিকে নোয়াখালী রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী বাসগুলোতে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া আদায়ের দায়ে ১১টি পরিবহনকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ফেইসবুক পেইজ ও মোবাইল ফোনে প্রাপ্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (১০ জুন) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বাসগুলোকে জরিমানা ও তাৎক্ষণিকভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়।

এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রোকনুজ্জামান খান। আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন, দেবানন্দ সিনহা, সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়, নোয়াখালী ও আতিকুর রহমান, সহকারী পরিচালক, বিআরটিএ নোয়াখালী সার্কেল এবং আইন শৃঙ্খলায় সহযোগিতা করেন র্র্যাব-১১, লক্ষীপুর।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. রোকনুজ্জামান খান জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪০ধারায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে ঢাকাগামী পরিবহন একুশে এক্সপ্রেস ৫হাজার টাকা, হিমাচল পরিবহনকে ৫হাজার টাকা, জননী পরিবহনকে ৫হাজার টাকা, মোহনা পরিবহনকে ৫হাজার টাকা ও চট্টগ্রামগামী বাস সার্ভিস জোনাকী পরিবহনের ২টি বাসকে ৫হাজার ৫শত টাকা, বাধন পরিবহনকে ২হাজার টাকা, শাহী পরিবহনকে ৪হাজার টাকা, নিলাচল পরিবহনের ২টি বাসকে ৩হাজার ৫শত টাকাসহ মোট ১১টি পরিবহনকে ৩৫হাজার টাকা জরিমানা দন্ড আরোপ ও আদায় করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে আরো জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার মীর ওয়ারিশপুরে বাস থামিয়ে নোয়াখালী-ঢাকা ও নোয়াখালী-কুমিল্লাগামী বাসগুলোতে যাত্রীদের যাত্রী টিকেট যাচাই ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা যায়- বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে স্থানভেদে ৩০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসময় গাড়ীর সুপারভাইজার ও ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেন এবং একই সাথে যাত্রীদের তাৎক্ষণিক অভিযোগে তারা টিকেটে নির্ধারিত ভাড়া উল্লেখ করেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন। এ অবস্থায় বাসগুলোকে জরিমানা করা হয় ও যাত্রীদের থেকে সংগৃহীত অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়। এসময় যাত্রীদের মাঝে আনন্দ উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখ্য এ রুটে চলাচলকারী একমাত্র গাড়ী উপকূল পরিবহনকে নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করতে দেখা যায়।

দুপুর ২টার দিকে স্থান পরিবর্তন করে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীর বাজারের পূর্ব পাশে সেতুভাঙ্গা এলাকা দিয়ে চলাচলকারী নোয়াখালী-চট্টগ্রাম, নোয়াখালী-ফেনী ও লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রামগামী পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের যাত্রী টিকেট যাচাই ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদে দেখা যায়- বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে স্থানভেদে ১৭০ টাকা থেকে ১২০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসময় গাড়ীর সুপারভাইজার ও ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। তখন বাসগুলোকে জরিমানা করা হয় এবং যাত্রীদের থেকে সংগৃহীত অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়। এসময় বাসযাত্রীগণ এ অভিযানে সন্তোষ্টি প্রকাশ করেন ও আরো বেশি সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার অনুরোধ করেন।