অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে ফেঁসে যাচ্ছেন আসলাম

0

পিপুন বডুয়া: ভারতের মাটিতে বসে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা “মোসাদে’র” সাথে সরকার উৎখাতে গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সদ্য নতুন পদবী পাওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের বিএনপির নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরী।

দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে যে কোন মূহুর্তে গ্রেফতার হতে পারেন এ শীর্ষ নেতাও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ি আসলাম চৌধুরী।

প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিকে ইসরাইলের প্রভাবশালী নেতা মেন্দি এন সাফাদির সাথে বৈঠকের ছবি এবং ইসরাইলি একটি অনলাইনে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৎপর হয়ে উঠেছে।

ইতোমধ্যে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ দেশের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রমাণ সংগ্রহ করে।এর পর মোসাদের দুই বাংলাদেশি এজেন্ট, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানাগেছে।

এ সাতজন যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারে দেশের বিমানবন্দরসহ সব রুটে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আসলামসহ এ সাতজন যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন। সাতজনের মধ্যে জামায়াত ঘরানার চার নেতা, চট্টগ্রামের বাঁশখালী বাড়ি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক সাংবাদিক এবং মোসাদের দুই এজেন্ট রয়েছেন।

সূত্র জানায়, মোসাদের বাংলাদেশি ওই এজেন্টের নাম সিপান কুমার বসু। তার বাড়ি খুলনায়। আরেকজনের নাম বিবেক দেব। তার বাড়ি ভারতের কলকাতায়। সম্প্রতি ভারতে মোসাদের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পর সিপানকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়।

তবে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র অস্বীকার করলেও ইসরাইলি নেতা মেন্দি এন সাফাদির সাথে পরিচয়ের পর ছবি তোলা এবং বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এ কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা।

ইসরাইল ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জেরুজালেম অনলাইন ডট কম’ এ চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি সকাল ৯.২৫ মিনিটে আপ হওয়া সংবাদটি থেকে জানা গেছে, “ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি”র প্রধান মেন্দি এন সাফাদি সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করছেন তিনি। বৈঠকে এন সাফাদি বলেন, ‘শিগগিরই সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলিদের জন্য খুলে দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন সরকার ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’

তবে এ সংবাদে কোথায় কার সাথে বৈঠক হয়েছে বা বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিল এ সংক্রান্ত কোন তথ্য নাই। তাছাড়া সংবাদের সাথে একটি গ্রুপ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এ ছবিতে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীকে দেখা যায় নি।

এ অনলাইনের উদ্বৃতি দিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র এবং আসলাম চৌধুরীর সাথে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গোপন বৈঠকের খবর প্রকাশিত হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠে। ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাতে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর সঙ্গে ভারতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশিদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সফিকুল ইসলাম জানান, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্তের কিছু প্রমাণ আমারা পেয়েছি, এক্ষেত্রে যাদের সম্পৃক্তার কথা এসেছে তাদের ব্যাপারে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছি। তদন্তে যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে এনিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরীসহ অপর এক সাংবাদিক বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন।

এব্যাপারে জানতে আসলাম চৌধুরীর দুটি মোবাইল ফোন নম্বারে গত কয়েকদিন ধরে চেষ্টার পরও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অজ্ঞাতস্থান থেকে অনলাইনে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় আসলাম চৌধুরী মোসাদের সাথে বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, ওদের নিজস্ব বৈঠক ছিল। সরকার উৎখাতের বৈঠন নয়। দিল্লি সফরকালে ট্যুরিস্টবাসে চলার সময় শিপন বাবুর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পরে আমরা লোটাস টেম্পলে তাদের সাথে একটি ছবিও তুলি। তার পর আমি আগ্রা চলে যায়। আগ্রা থেকে ফেরার পথে ওরা একটি চা চক্রের আয়োজন করে। আমি কৌতুহল বসত সেখানে যায় দর্শক হিসেবে। ওখানকার মেয়রের সাথে ওদের নেতা মেন্দি এন সাফাদির সাথে বৈঠক হয়। এতে আমার সাথে কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না। আমি গেছি ব্যবসায়িক কাজে। আমি মোসাদ সম্পর্কে জানতাম না, এখন লেখা লেখির পর এ ইসলাইলী গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কে জানি।

Screenshot_6তিনি বলেন, আমরা সবসময় দেশের পরিস্থিতি এবং আমাদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বলে লোকেল বলেন সবার সাথে কথা বলি। এটাতো সরকার উচ্ছেদের কোন কিছু না। আমি মনে করি সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এটা আওয়ামী লীগ ও অন্যকোন সরকারই হোক। চক্রান্ত করে কোন সরকার পরিবর্তন করা যায় না বলে আমি মনে করি।

ইসলাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সম্পর্কে সাবেক সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, তাদের কার্যক্রম পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে পরিচালনা করতে পারে। তারা মুসলিম দেশগুলোতে মারাত্মক ধরণের অশান্তি ও অস্থিরতা তৈরি করে যাচ্ছে। এটা একেবারে দৃশ্যমান। বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ। সেই সূত্রে তারা টার্গেট করতে পারে। মুসলমান প্রধান দেশ হিসেবে এখানে তাদের সাবোটেজ তারা চালাতে পারে। মোসাদের সেই সক্ষমতা রয়েছে।