অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিকাশ-রকেটে ব্যালেন্স দেখার খরচ কে দেবে?

0
.

বিকাশ-রকেট-নগদের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স জানতেও চার্জ দিতে হবে ভেবে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করছেন ব্যবহারকারীরা।

ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে সমালোচানার ঝড় উঠেছে। নিজ অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স জানতে এসএমএস চার্জ দিতে হবে এটিকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ খরচ ভাবছেন অনেকে।

বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী, মোবাইল ফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার কারণে এমএফএস অপারেটরদের তাদের সেশনভিত্তিক চার্জ দিতে হবে। সেখানে একটি এসএমএসে শুধু ব্যালেন্স চেক করতে চার্জ দিতে হবে ৪০ পয়সা।

এখন প্রশ্ন মোবাইল ফোন অপারেটরদের এই চার্জ বিকাশ-রকেট-নগদ নিজেরা দেবে না গ্রাহকের কাছ হতে কেটে নিয়ে তারপর অপারেটরদের দেবে ?

এমএফএস সার্ভিস প্রোভাইডাররা বলছেন, চার্জ কে দেবে তা নির্ভর করবে নির্দেশনা কীভাবে কার্যকর হয় তার উপর।

অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে এই খরচ গ্রাহকের উপর চাপবে না।

এখন কীভাবে চার্জ কাটা হয় আর কে দেয় ?

এখন প্রতি ১০০ টাকা লেনদেনে গ্রাহকের কাছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা নেওয়া হয়। এর ৭৭ শতাংশ এজেন্ট, ৭ শতাংশ মোবাইল ফোন অপারেটর আর বাকি ১৬ শতাংশ এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পায়।

মানে মোবাইল ফোন অপারেটরদের দেয়া চার্জ এমএফএসগুলো গ্রাহকের কাছ হতেই কেটে নিচ্ছে।

নতুন নির্দেশনায় চার্জ বিন্যাস :

বিটিআরসির নির্দেশনা অনুয়ায়ী, প্রতিবার লেনদেন, ব্যালেন্স চেক বা স্টেটমেন্ট নেওয়াসহ নানা ধরণের কাজকে একেকটি সেশন ধরা হবে। এসব কাজ ইউএসএসডি হিসেবে পরিচিত, যেখানে লেনদেন শেষে ফিরতি এসএমএস পান গ্রাহকরা আবার ব্যালেন্স দেখতে একটি শর্টকোড ডায়াল করলে ফিরতি এসএমএস আসে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সেশনের সময় হবে ৯০ সেকেন্ড। প্রতি ৯০ সেকেন্ডের একেকটি সেশনের জন্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদেরকে ৮৫ পয়সা করে দিতে হবে।

একেকটি সেশনের মধ্যে দুটি এসএমএসও থাকবে। যেখানে ব্যালেন্স চেকের এসএমসের জন্য চার্জ হবে ৪০ পয়সা।

এমএফএস সার্ভিস প্রোভাইডারের বক্তব্য :

বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, তারা শুনেছেন তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দেশনাটি এখনও পাননি।

‘নির্দেশনা কার্যকর করার কতগুলো প্রক্রিয়া আছে। মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে একটা এগ্রিমেন্ট হতে হবে। কোনটা রেভিনিউ সেশন, কোনটা নন-রেভিনিউ সেশন এগুলো স্পেসিফিক করার বিষয় রয়েছে। এসব শেষে এগ্রিমেন্ট বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক দেখবেন, অনুমোদন করবেন তারপর সেটি কার্যকর করা হবে’ বলছিলেন তিনি।

শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, নতুন নির্দেশনা কার্যকর করার আগে এই সময়ে কোথাও কোনো বাড়তি চার্জ করা হচ্ছে না। বিকাশ এখন দুইভাবে রেভিনিউ সংগ্রহ করে, ক্যাশআউট এবং সেন্ড মানি (পিটুপি ট্রেড)।

’আগের যা চার্জ ছিল তাই থাকছে। তাই নতুন নির্দেশনা যতদিন পর্যন্ত কার্যকর না হচ্ছে ততদিন গ্রাহক পর্যায়ে চার্জে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না’ জানান এই কর্মকর্তা।

মোবাইল ফোন অপারেটরের বক্তব্য :

মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএস নিয়ে বিটিআরসির সমন্বিত নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা সাহেদ আলম বলেন, গত চার বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসি, মোবাইল অপারেটর এবং এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ আলোচনার পর সবার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের দাবি সেশন-ভিত্তিক চার্জ শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে।

‘এই চার্জ মোবাইল অপারেটরকে প্রদান করবে সংশ্লিষ্ট এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, গ্রাহকদের ওপর এ চার্জ বর্তাবে না’ উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, এমএফএস সেবার শুরু থেকেই এ চার্জগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল যা থেকে মোবাইল অপারেটররা বঞ্চিত ছিল। এমএফএস খাতের বিকাশের মূল হাতিয়ার দেশজুড়ে বিস্তৃত মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। এই নির্দেশনাটির মাধ্যমে ব্যয়বহুল এই অবকাঠোমার গ্রহণযোগ্য একটি আর্থিক প্রবাহ নিশ্চিত হয়েছে।

দেশে এমএফএসের বর্তমান লেনদেন অবস্থা :

চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুয়ায়ী , মার্চের শেষে তিন কোটি ২৪ লাখ কার্যকর সংযোগ ছিল।

যেখানে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৭৫ লাখ। ওই সময়ের হিসাবে সব মিলে দিনে গড়ে ১১’শ থেকে ১২’শ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

দেশে ১৬টি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন করার অনুমোদন রয়েছে।

এক সময় লাইসেন্সের সংখ্যা ২৯টিতে চলে গিয়েছিল। তবে এর মধ্যে অনেক ব্যাংক তাদের লাইসেন্স ফিরিয়ে দিয়েছে।