অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

‘শয়তান খালি’তে ভ্রমণ

0
.

পুরনো একসহকর্মী ফেসবুকে ছবি দেখে বললো, খুব তো ঘোরাঘুরি করছেন, তো একটা ভ্রমণকাহিনী লিখেই ফেলেন। প্রথমেই প্রস্তাবটা ভালো লেগে যায়। তবে সময় বের করাটা আমার মত অলসের জন্য একটু কঠিন ছিল। দু’তিন দিন পর আবারও আমাকে অনলাইনে পেয়ে নক করলেন, লেখা শুরু করেছি কিনা? বললাম না, এখনও শুরু করতে পারিনি ভাই।

তবে মনে মনে ভাবলাম শুরু করে দেই, দেখি কি হয়। যদিও আমি ভালো লেখতে পারি না। আরে ভালো বললাম কেন? আমিতো লেখতেই পারি না। সেই ৭-৮ বছর আগে দু’একটা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখেছিলাম। এখন কি আর সেই অবস্থা আছে? এমন ৭-৫ ভাবনা ফেলে শেষ পর্যন্ত আগোছালো একটি ভ্রমণকাহিনী লিখেই ফেললাম। জানি না পাঠক পড়ে কতটা আনন্দ পাবেন। তবে পাঠকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে- লেখাটা পড়েই বিচার করবনে!

সেদিন আমরা কয়েক কলিগ মিলে ঠিক করলাম একটু ঢাকার বাইরে যাব। ঢাকার বাইরে মানে এমন জায়গায়- যেখানে সকালে গিয়ে আবার সন্ধ্যায় ব্যাক করা যায়। তো সবশেষ সিদ্ধান্ত হলো আমরা মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাট যাব। সেখান থেকে যেখানে যাব সে জায়গাটার নাম আমরা প্রথম শুনেছি, বিশেষ করে আমি। আমি বলছি এ কারণে যে, অফিসে আমার যে দায়িত্ব তা হলো এক কথায় সারা দেশ থেকে যত নিউজ আসে তা সংগ্রহ করে এডিট করা।

আমার এই কর্মের ৬ বছরে এতো এতো জেলা উপজেলা ইউনিয়ন গ্রামের নাম শুনেছি, কিন্তু এ নাম তো কখনোই শুনিনি! তাই একটু অবাক হলাম, এরকম আবার নাম হয় না-কি? জায়গাটার নাম প্রথমে বললেন- আমাদের এক সিনিয়ার কলিগ। ওনি এবং ভাবিও আমাদের ভ্রমণসঙ্গী ছিলেন।

এবার জায়গাটার নাম বলি, জায়গাটা হলো “শয়তান খালি”।

আমাদের মত অনেকেই হয়তো অবাক হয়ে ভাবছেন, এটা আবার কোথায়রে! আর যারা জানেন তারাতো জানেনই। এটা ফরিদপুর জেলায় অবস্থিত। বিশাল খোলা মাঠ ছাড়া যদিও এখানে দেখার আর কিছুই নেই। তারপরও খুব ভালো লেগেছে। কারণ আমরা যারা শহরের কর্মজীবী নারী, তারা প্রতিদিন জ্যাম ঠেলে অফিস, বাসা, বাচ্চা-কাচ্চা সামলিয়ে এতটাই ক্লান্ত থাকি যে, একটু খোলা জায়গা পেলে মনে হয় শান্তিতে নিশ্বাস নেই।

‘শয়তান খালি’তে যেভাবে গেলাম: মাওয়া ঘাটে (বর্তমানে শিমুলিয়া ঘাট) গাড়ি রেখে আমরা স্পিডবোট ভাড়া করলাম। ভেবেছিলাম ১৫-২০ মিনিট লাগবে। কিন্তু না, আমাদের স্পিডবোটে শুধু যেতেই এক ঘণ্টার মত লেগেছে। মাঝে এক চড়ে থেমে সকলে ফটো সেশনে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।

যারা স্পিডবোটে চলাচল করেন, তারা খুব ভালো করেই জানেন চরতে কেমন মজা! আর আমরা এতটা পথ গেছি। সে মুহূর্তে এতটাই ভালো লাগছিলো যে, কেউ ভাবেনি স্পিডবোটে ভাড়া কত আসতে পারে। যদিও এ নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যথা ছিলো না। তারপরও বলে রাখি, আগে থেকে দরদাম করে উঠলে কোন ঝামেলায় পরতে হবে না।

শয়তান খালি নেমে আমরা চা খেলাম সাথে সবাই ‘চাফি’ (চা পানের ছবি) তুলতে ভুললাম না। সেখানে কিছুক্ষণ বাচ্চাদের নিয়ে দৌড় ঝাপ করে সন্ধ্যায় ফিরলাম ঘাটে। ওহো, আরও একটা জায়গায় ঘুরলাম। তাতো বলাই হলো না।

যাবার পথে মানে- ঢাকা থেকে রওনা হয়ে আমরা প্রথমে গেলাম শ্রীনগরে রাড়িখালে অবস্থিত স্যার জগদিশ চন্দ্র বসুর বাড়িতে। সেখানে আমাদের ভাবির হাতে রান্না করা বিরানি দিয়ে সকালের নাস্তা করলাম। সবমিলে এতো অল্পতেও যে খুব আনন্দ করা যায়, তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম।

অফিসে ফিরে সবাইকে বলছিলাম আমরা ‘শয়তান খালি’তে গেছিলাম। শয়তান আমাদের ওপর ভর করেছে। তাই সবাই সাবধান!