সরকার চামড়া দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারী মালিকদের কারসাজির কারণে চট্টগ্রামে এবার চামড়া ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। নির্ধারিত দাম না পেয়ে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়িরা এবার লোকসান দিয়েও চামড়া বিক্রি করতে পারছে না। ফলে এ ব্যবসায় লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনছে মৌসুমি ব্যবসায়িরা। মঙ্গলবার গরু ও খাসি কোরবানীর পর মাঠ পর্যায়ে প্রচুর চামড়া সংগ্রহ করে মৌসুমী ব্যবসায়িরা।
কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এসব চামড়া কিনতে কেউ আগ্রহী না হওয়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে নিজ উদ্যোগে ট্যানরীতে গিয়ে চামড়া বিক্রি করলেও ন্যয্য মূল্যের চেয়ে কমদামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা।
তবে ট্যানারী মালিকরা জানিয়েছে মৌসুমী ব্যবসায়িরা নিজেদের খেয়ালখুশি মত চামড়া কিনেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম থাকায় এবার কমদামে চামড়া কিনতে হচ্ছে।
তবে স্থানীয় পর্যায়ে চামড়া ব্যবসায়িদের অভিযোগ এবার ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনার জন্য বিনিয়োগ না করায় চামড়া ব্যবসা জমে উঠেনি। এবং মাঠ পর্যায়ে যারা নিজের বিনিয়োগ করা টাকায় চামড়া কিনেছে তারা সঠিক দাম না পেয়ে লোকসান দিয়েছে।
জানাগেছে, গত শুক্রবার রাজধানীতে চামড়া ব্যবসীদের তিনটি সংগঠনের নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ বছর রাজধানীতে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৫০ টাকা, রাজধানীর বাইরে ৪০ টাকা। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ২০ টাকা, বকরির চামড়া দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ও মহিষের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা চামড়ার দর পতন অব্যাহত থাকায় এবারও চামড়ার দাম কমানো হয়েছে। পরে বণিজ্য মন্ত্রলণালয়ের সচিব ব্যবসায়িদের সাথে বৈঠক করে এ দামে প্রজ্ঞাপণ জারী করেন।
খুচরা ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় সরকার চামড়া দাম নির্ধারণ করে দিলেও এ দামে চামড়া ক্রয় করছে না চট্টগ্রামের ট্যানারী ব্যবসায়িরা।
নগরীর অক্সিজেন চালতাতলী এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রকারী মৌসুমী ব্যবসায়ি আব্দুল গাফ্ফার বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামের মধ্যেই আমরা চামড়া সংগ্রহ করেছি। কিন্তু ট্যানরী মালিকরা এবার চামড়া কিনতে আগ্রহী না। আমি গড়ে ১২ থেকে ১৩ শ টাকা মধ্যে গরুর চামড়া কিনে অনেকটা জোর করে বাকিতে এক হাজার টাকা ধরে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আমার অন্তত অর্ধ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।
অপর চামড়া ব্যবসায়ি মোর্শেদও জানালেন একই কথা। তিনি জানান, গরুর চামড়া লোকমান দিয়ে বিক্রি করা হলেও বকরীর চামড়াতো ট্যানারীর মালিকরা কিনছেন না। ফলে যারা বকরী বা ছাগলের ছামড়া কিনেছে তারা পুরোটাই লস দিয়েছে।
এ ব্যাপারে চামড়া ব্যাবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আফতাব খান বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনে আমাদের ওপর লোকসানের দায় চাপাচ্ছেন। আমরা এর চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের কাছে লোকসান দিতে পারবো না। তিনি বলেন, ৭শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত দরে চামড়া কিনছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে অলি গলি এবং রাস্তার পাশে চামড়া স্তুপ করে রেখেছে স্থানীয় ব্যবসায়িরা। বিভিন্ন আড়তদারদের অনেকে দরদাম করলেও বেচাবিক্রি তেমন চোখে পড়েনি।
নগরীর পোস্তারপাড় দেওয়ানহাট এলাকায় সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় ৪/৫ জন মৌসুমি ব্যবসায়ি শতাধিক চামড়া নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রেতার আশায়। তাদের মধ্যে শওকত নামে একজন জানান, দুপুর থেকে তারা চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত দাম না উঠায় চামড়া বিক্রি করেননি। তাই তারা ট্যানারি চামড়া নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ প্রসঙ্গে মদিনা ট্যানারির মালিক আবু মোহাম্মদ বলেছেন, চামড়া দাম ছাড়াও অন্য অরো কারণে চামড়া ক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে ট্যানারী মালিকরা। তিনি বলেন, এক সময় সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের টানারি চামড়া সংগ্রহে এগিয়ে ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের দুটি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তারা বৈষম্যের শিকার ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবু মোহাম্মদ আরও বলেন, তার মালিকাধীন মদিনা ট্যানারিতে ৩০ লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে এবং ট্যানারি বন্ধ থাকার কারণে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তার মতে এসব কারণে এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়িরা।