অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নগরজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশাল রথযাত্রা অনুষ্ঠিত

1
.

চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা অনুষ্ঠিদ হয়েছে। দুপুরে নগরীর নন্দনকাননস্থ শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির সামনে ডিসি হিল প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম এসে শেষ হয়। মহাশোভাযাত্রায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের নরনারীসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানার, প্লে-কার্ড, ফেস্টুন, পৌরাণিক সাজ ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যোগদান করেন।

এদিকে বিশাল রথযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণকালে নগর জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দিনভর জ্যামে পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার নগরবাসী।

.

আজ বুধবার সকালে নগরীর নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম সম্মুখে ডি.সি. হিল প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) চট্টগ্রাম আয়োজিত ২২তম কেন্দ্রিয় রথযাত্রার ধর্মীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কাউকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেয়া মেনে নেবে না। জনগণ যার যার ধর্ম পালন করবে। কেউ যদি তার ধর্ম পালন করতে না চায় সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অধিকার তার নেই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। নিজ ধর্মের পাশাপাশি অন্যের ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এটাই বাস্তবতা। উপমন্ত্রী নিজেদের সংখ্যালঘু মনে করে খাটো না ভাবার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। জাতির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সব সম্প্রদায়ের অসামান্য অবদান রয়েছে। বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। সকল ধর্মের মানুষ সমান ধর্মীয় অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সকল ধর্মের মানুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছে।

.

রথযাত্রায় হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসকনের হেডকোয়ার্টার ভারতের মায়াপুর হতে আগত ইস্কনের অন্যতম সন্যাসী শ্রীমৎ অমিয় বিলাস স্বামী মহারাজ, শ্রীমৎ ভক্তি নিত্যানন্দ স্বামী মহারাজ। রথযাত্রায় পৌরহিত্য করেন ভারতের চেন্নাই থেকে আগত শ্রীপাদ রোহিত দাস। নন্দনকানন ইস্কন মন্দিরের অধ্যক্ষ পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী’র সভাপতিত্বে ও সুমন চৌধুরী’র সঞ্চালনায় উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী।

তিনি বলেন, ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই রথযাত্রার বিশ্বায়ন এক চমৎকার ভূমিকা পালন করেন। ইস্কনের বিভিন্ন কার্যক্রম সারাবিশ্বে প্রশংসিত আমি এতে গর্ববোধ করি।

চট্টগ্রাম ইস্কনের বিভাগীয় রিজিওন্যাল সেক্রেটারি শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার মো: মাহবুবর রহমান। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসেস হাসিনা মহিউদ্দিন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এড. চন্দন তালুকদার, জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক বিমল কান্তি দে, চট্টগ্রাম মহানগর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, কেন্দ্রীয় জন্মষ্টমী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. তপন কান্তি দাশ, বাংলাদেশ হিন্দু ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দুলাল মজুমদার, কোতোয়ালী থানার ওসি মো: মহসীন, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, মহিলা কাউন্সিলর নিলু নাগ, কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর শ্রী শচীনন্দন গোস্বামী, প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অরবিন্দ পাল অরুণ, মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইস্কন মোহরা মন্দিরের অধ্যক্ষ সর্বমঙ্গল গৌর দাস ব্রহ্মচারী, নন্দনকানন ইস্কন মন্দিরের অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, সাধারণ সম্পাদক তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, বলরাম করুনা দাস, সুবল সখা দাস ব্রহ্মচারী, শেষরুপ দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী, বলরাম শ্যাম দাস, কিশোর সরকার প্রমুখ। ধর্মীয় মহাসম্মেলনে হিন্দু নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রীয় অবজ্ঞা, অবহেলা আজও সুস্পষ্ট। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে পূর্বেকার মত ধর্মীয় বৈষম্য অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, লোক গণনা পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিলে প্রকল্পভেদে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ১১ থেকে ১২ টাকা আর সংখ্যালঘুর মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৩ টাকা। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তীর্থ ভ্রমণ, কেন্দ্রীয় উপাসনালয় পরিচালনা, পুরোহিত, সেবায়েত, দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণে, মডেল মন্দির স্থাপনে চলিত অর্থ বছরেও বাজেটে কোন বরাদ্দ রাখা হয় নাই। হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুরোহিত ও সেবায়েতদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বিগত অর্থবছর পর্যন্ত বরাদ্দ থাকলেও এবারের অর্থবছরে অনুরূপ কোন বরাদ্দ নেই। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঘোষিত ২০০ কোটি টাকার অনতিবিলম্বে ছাড়, কল্যাণ ট্রাস্ট সমূহকে বাতিল করে ফাউন্ডেশনে রূপান্তর, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবী জানান।

এদিকে মহাশোভাযাত্রা আগামী ৫ জুলাই থেকে ৭ দিনব্যাপী জে. এম সেন হলে ভাগবত সপ্তাহ অনুষ্টিত হবে। উল্লেখ্য যে ১২ জুলাই উল্টো রথযাত্রা নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম হতে শুরু করে উল্টো পথে নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দিরে এসে শেষ হবে।

১ টি মন্তব্য
  1. Liton Shak বলেছেন

    রথযাত্রা কি কেনো কি জন্য এতো বেয়ারিং দরকার