অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

বিষণ্নতা যখন মৃত্যুর কারণ

0
.

আমরা সবাই মাঝেমধ্যে দুঃখিত, বেদনার্ত এবং মনঃক্ষুণ্ণ বোধ করি। জীবনের অন্যান্য আবেগের মতই এগুলোও আমাদের জীবনের অংশ। কিন্তু কিছু কিছু অনুভূতি যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়; শারীরিক ক্ষতি হয় কিংবা অনেক সময়ের ব্যবধান ঘটে যায় তখন হিতে বিপরীত হয়ে যায়। সক্রিয় ও কর্মঠ জীবন থেকে আমরা তখন বেশ দূরে সরে যাই।

সে সময়েই আমাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্যের খুব প্রয়োজন হয়। আপনি নিয়মিত যে চিকিৎসকের কাছে যান, তাকে দিয়েই প্রথম স্তরের চিকিৎসা শুরু করুন। ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো তিনিই আপনাকে বিশদভাবে বিশ্লেষণ করবেন। প্রথম স্তরেই সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা করাতে না পারলে পরবর্তীতে এটি আরো বৃহদাকার ধারণ করবে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, দশ জন মানুষের মধ্যে গড়ে একজন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।

ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো জানা খুব জরুরি। দুর্ভাগ্যক্রমে অনেকেই এগুলো জানেন না বলে ঠিকমতো চিকিৎসা নিতে পারেন না।

লক্ষণ:
১। কাজে মনোনিবেশ করতে সমস্যা হয়, অনেক ব্যাপার সহজে মনে রাখা যায় না এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেগ পেতে হয়।
২। সামান্য ব্যাপারেই বেশ হতাশা এবং অপরাধবোধ হয়। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়।
৩। রাতে দ্রুত ঘুমাতে সমস্যা হয় এবং ঘুম থেকে উঠতেও কষ্ট হয়।
৪। আশেপাশের মানুষের অনেক ব্যবহার সহ্যের বাইরে চলে যায়।
৫। সব বিষয়ে খুব অস্থির অনুভূত হয়।
৬। হতাশা দূর করার জন্যে অতিরিক্ত খাবার প্রবণতা দেখা দেয় কিংবা একেবারে না খেয়ে থাকার অবস্থাও সৃষ্টি হয়।
৭। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং অস্থিরতার সৃষ্টি হয় যা সহজে দূর হতে চায় না।
৮। হজমে সমস্যা দেখা দেয় যা হয়তো চিকিৎসার মাধ্যমেও দূরীভূত হয় না।
৯। বিভিন্ন সময়ে আত্মহননের চিন্তা মাথায় আসে।

চিকিৎসা:
‘ডিপ্রেশন টেস্ট’ বলে আদতে কিছু নেই। চিকিৎসক আপনার রোগের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে এবং শারীরিক পরীক্ষা নিয়ে আপনার রোগ নির্ণয় করবেন।

চিকিৎসক জানতে চাইবেন-
:-কবে থেকে উপসর্গগুলো দেখা দিয়েছে
:-কতদিন যাবত আছে
:-কতোটা মারাত্মক আকারে আছে
:-পরিবারে আর কেউ ডিপ্রেশনের শিকার কি না?
:-আপনি কোনো ধরনের নেশা কিংবা অ্যালকোহলে আসক্ত কি না

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগীদের একটি সাধারণ প্রবণতা থাকে আত্মহত্যা করার। আত্মহননমূলক চিন্তা-ভাবনা নিঃসন্দেহে মারাত্মক। সে হিসেবে কিছু হুঁশিয়ারিমূলক ইঙ্গিত উল্লেখ করা হলো:
:-হঠাৎ করে আনন্দঘন পরিবেশ থেকে হতাশজনক পরিস্থিতিতে চলে যাওয়া।
:-সর্বদা মৃত্যুর ব্যাপারে কথা বলা কিংবা চিন্তা করা
:-গভীর মনোকষ্ট, যেকোন ব্যাপারে আগ্রহ হারানো, ঘুমে এবং খাদ্যাভ্যাসে ব্যাঘাত ঘটা।
:-এমন ঝুঁকিমূলক কাজ করা যেগুলোর পরিণতি মৃত্যু হতে পারে।
:-নিজেকে প্রতিটি ক্ষেত্রে অযোগ্য এবং অপদার্থ মনে করা।
:-আত্মহত্যার কথা মুখের বুলিতে রূপান্তর করা

আপনার নিজের কিংবা পরিবারের কারোর মধ্যে যদি এমন লক্ষণ দেখে থাকেন, তাহলে যতদ্রুত সম্ভব মনোবিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মনে রাখবেন, এসব ক্ষেত্রে যত দেরি করবেন তত ক্ষতির হার বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।