অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ইসি মাহবুব তালুকদারের সাথে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের এ কি আচরণ!

0
.

রিজেন্ট এয়ারের বিজনেস ক্লাসের টিকেট কাটার পরও ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

এই অভিযোগ তুলে বেসরকারি বিমান সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।

বিষয়টি সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশনকে ‘হেয়’ করার শামিল হিসেবে দেখে ইসি সচিবালয়ও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

তবে বিষয়টি জেনে দুঃখ প্রকাশ করে রিজেন্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

গত ২৭ জুন স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে রিজেন্ট এয়ারের বিজনেস ক্লাসের টিকেট কেটেছিলেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলছেন, বিমানে ঢুকে তিনি দেখতে পান পুরো বিজনেস ক্লাসে যাত্রীরা বসে রয়েছে। তাদের আসন দুটিও ফাঁকা নেই। বোর্ডিং পাসে ভিআইপি সিল থাকা তাদের দুজনকে তখন বসানো হয় ইকোনমি ক্লাসে।

এ বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, “আমি আর এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। নির্বাচন কমিশন ও ইসির আইন শাখার সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।” ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রিজেন্ট এয়ারের ফ্লাইটের ঘটনার বিষয়ে কমিশনার মাহবুব তালুকদার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ইউও (আন-অফিসিয়াল) নোট দিয়ে অভিযোগ করেছেন। চিঠিতে মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, এই ঘটনায় শুধু একজন নির্বাচন কমিশনারের সম্মানহানিই হয়নি, বিষয়টি সামগ্রিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি অমর্যাদাকর। তিনি ঘটনার বিবরণ দিয়ে সিইসিকে লিখেছেন, রিজেন্ট এয়ারের আরএক্স ০৭৮৬ ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসে তাদের আসন নম্বর ছিল ১ এ ও ২ডি। উড়োজাহাজে উঠে তিনি দেখেন ওই দুটি সিটে পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও তার স্ত্রী বসে আছেন।

উড়োজাহাজে উঠার আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি রুমে পুলিশের মহাপরিদর্শক জাভেদ পাটোয়ারীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল মাহবুব তালুকদারের। তিনি লিখেছেন, “আমরা যে একই ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাচ্ছি, তা আগে বুঝতে পারিনি। বিমানটি রানওয়েতে রাখা ছিল বলে আইজিপিকে গাড়িতে করে আগেই নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের তোলা হয় সবার পরে। গিয়ে দেখি বিজনেস ক্লাসের কোনো আসন খালি নেই। আমাদের আসনে বসে আছে আইজিপি ও তার স্ত্রী। উড়োজাহাজের কর্মীরা আমাদের ইকোনমি ক্লাসের আসনে বসায়।” বিজনেস ক্লাসের টিকেট থাকার পরও ইকোনমি ক্লাসে কেন বসানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন করে রিজেন্টের কেবিন ক্রুদের কাছে উত্তর পাননি বলে জানান মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “চিফ পার্সার বলেছেন, গ্রাউন্ড স্টাফরা ভুল করে আমাদের ইকোনমি ক্লাসে বসিয়েছে। আমি তখন বলি, তাহলে আমাদের টিকিট অনুযায়ী উপযুক্ত স্থানে বসানো হোক। একথারও কোনো উত্তর তাদের ছিল না।” তখন উড়োজাহাজ থেকে নেমে যেতে চেয়েছিলেন বলে জানান মাহবুব তালুকদার। “কিন্তু ততক্ষণে বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা ইকোনমি ক্লাসে বসে চট্টগ্রামে আসি।” উড়োজাহাজ আকাশে থাকতেই এয়ার হোস্টেসকে ডেকে লিখিত অভিযোগ দিতে চেয়েছিলেন মাহবুব তালুকদার। “এতে এয়ার হোস্টেস একটি মূল্যায়ন ফরম এনে দিয়ে বলেন, ‘স্যার সাদা কাগজ তো নেই, আপনি ফরমে অভিযোগ লিখে দিতে পারেন’। আমি ফরমটি ফেরত দিয়ে বলি, আমার অভিযোগ এই ফরমে লেখার উপযুক্ত নয়।” পরে বিমানের পাইলটকে ঘটনাটি জানান এ নির্বাচন কমিশনার। পাইলট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর আশ্বাস দেন বলে জানান তিনি। গত ২ জুলাই সিইসিকে ইউও (আন-অফিসিয়াল) নোট দেন মাহবুব তালুকদার। সহকর্মী অন্য তিন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে এর অনুলিপি দেওয়া হয়। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা মনে করি, এ ধরনের আচরণে নির্বাচন কমিশনকে হেয় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ যাত্রীদের ক্ষেত্রেও তা ঘটতে পারতো। কেন এ ঘটনা হয়েছে, তা আমরা নোটিস করতে চাই; দেখতে চাই।” এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, “সাধারণত আইনগতভাবে বিষয়টি দেখবে ইসি সচিবালয়। সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে লিগ্যাল নোটিস দিতে পারে। কীভাবে তা হ্যান্ডেল করবে তা সচিবালয় দেখবে। আমরা মনে করি, এটা অন্যায় হয়েছে।” রিজেন্ট এয়ারে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার বিষয়ে রোববার ইসির উপ সচিব মো. শাহ আলম নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ইসির আইন শাখাকে পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, রিজেন্ট এয়ারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে ইসির প্যানেল আইনজীবীদের থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। রিজেন্ট এয়ারের চিফ অপারেটিং অফিসার আশিষ রায় চৌধুরী সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, “নির্বাচন কমিশনার মহোদয় আমাদেরকে একটি মেইল পাঠিয়েছিলেন। আমরা ইতোমধ্যে (ওইদিনই) ঘটনাটি জেনেছি। তদন্তও শুরু করেছি।” কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছি। রিজেন্ট এয়ার কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা এ ঘটনার তদন্ত করছি। দায়ীদের পানিশমেন্ট দেওয়া হবে। “আমাদের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার হানিফ জাকারিয়া নির্বাচন কমিশনে যাবেন; উনার কাছে ক্ষমা চাইতে।”