অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ইসলামে মৃত ব্যক্তির দোষ চর্চা বা প্রতিহিংসা চরিতার্থ নিষিদ্ধ

0
.

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল খালেকঃ

ইসলামে মৃত ব্যক্তির দোষ চর্চা বা তার ওপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো মুসলমান মারা গেলে তাকে যথাসম্ভব দ্রুত সম্মানের সঙ্গে দাফন করাই ইসলামী বিধান। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মৃত ব্যক্তিদের গালমন্দ কর না। কারণ তারা যা করেছে তার প্রতিফল পাওয়ার স্থানে পৌঁছে গেছে। (বুখারি)

কারও মৃত্যুর পর তাকে মন্দ বলা ও গালিগালাজ করা জায়েজ নয়। সে যেসব খারাপ কাজ করেছে তার প্রতিফল আল্লাহর কাছে ভোগ করছে অথবা তিনি তার প্রতি দয়াপরবশ হয়েছেন। মৃত ব্যক্তিকে গালি দিয়ে নিজের আমলনামা কালো করা উচিত বলে বিবেচিত হবে না। জাহেলিয়ার যুগে মৃত ব্যক্তির নিন্দা চর্চা এমনকি তার ওপর প্রতিহিংসাপরায়ণতার চর্চা ছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘৃণ্য চর্চার অবসান ঘটান। হজরত যুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে (অজ্ঞাতসারে) আগেকার জাতিসমূহের রোগ, অর্থাৎ হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা সংক্রমিত হয়ে গেছে। এসব রোগ ন্যাড়া করে দেয়। আমার কথার অর্থ এই নয় যে, তা চুল ন্যাড়া করে দেয়, বরং দীনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। (মুসনাদে আহমাদ থেকে মিশকাতে)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাক। কেননা হিংসা মানুষের ভালো গুণসমূহ এমনভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেমনিভাবে আগুন শুকনো কাঠ জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)
শুধু মৃত ব্যক্তি নয়, সাধারণভাবে এক মানুষ অপর মানুষের প্রতি হিংসা বিদ্বেষের মনোভাব দেখাক তা ইসলামে কাম্য নয়। এ ধরনের মনোভাব সামাজিক শান্তির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

হজরত আবু আইউব আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য তার মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা হালাল নয়। অবস্থা এই দাঁড়ায় যে, দুজন মুখোমুখি হলে একজন এদিকে এবং অপরজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। দুজনের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি যে প্রথমে সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু করে। (বুখারি ও মুসলিম থেকে মিশকাতে)

অপর এক হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল বাদিউ বিস-সালাম বারিউম-মিনাল কিবরে’। অর্থাৎ প্রথমে সালাম উচ্চারণকারী অহঙ্কার থেকে মুক্ত। উপরোক্ত দুটি হাদিসে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, অপর মানুষের প্রতি সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ককেই ইসলাম গুরুত্ব দেয়। মৃত বা জীবিত কারও প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা ইসলামী দৃষ্টিতে পরিত্যাজ্য।

লেখক : ইসলামী গবেষক।