সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কালঃ প্রস্তুত হচ্ছে জেলেরা
ইলিশের ভরা মৌসুমে দেশের উপকূলীয় জেলার সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায়। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে মাছ শিকারের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন উপকূলের জেলেরা। তবে মৌসুমের শেষ ভাগে বিনিয়োগে ঝুঁকি নিতে নারাজ অনেকেই।
বরগুনার মহিপুরের একাধিক জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার, দাদনদার ও বরফকল মালিকরা জানান, প্রতি মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু এবারই প্রথম মৌসুমের সিংহভাগ নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় তারা ঝুঁকি নিতে পারছেন না। জেলেরা জানান, মাঝারি কিংবা বড়ো সাইজের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধারদেনায় জর্জরিত তারা। পাশাপাশি আড়তদার কিংবা দাদনদাররাও খুব একটা ঝুঁকি নিতে রাজি নন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পযন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা কেবল চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোটের জন্য বলবৎ ছিল। এবারই প্রথম সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। সরকার নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের মধ্যে সহায়তা চাল দেয়। তবে প্রথম কিস্তি পরিবারপ্রতি ৪০ কেজি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পেলেও দ্বিতীয় কিস্তির চাল পায়নি এখনো। নিষেধাজ্ঞার দুই দিন বাকি থাকলেও কবে নাগাদ দ্বিতীয় কিস্তির ঐ চাল পাবে, তা জানেন না কেউ। জেলেরা অভিযোগ করেন, সহায়তার চাল সংগ্রহ করতে তাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। তারা বলেন, ‘আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছি, নিষেধাজ্ঞার সময় সাগরে অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় জেলেরা মাছ নিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ জুলাই কলাপাড়ায় ৩২টি ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলারসহ ৫১৯ জন জেলের চলে আসা আমাদের কথার প্রমাণ। তারা নিরাপদে মাছ ধরে নিয়ে গেলেও কেউ ঠেকায়নি।
উপকূলের বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ মহিপুর আড়তদার মালিক সমিতি ও বরফকল মালিক সমিতির নেতা গাজী মজনু জানান, এবারের নিষেধাজ্ঞায় তাদের এই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, আগের মতো প্রাণ নেই জেলেপল্লিতে। অনেক জেলেই বাঁচার তাগিদে শহরমুখী হয়েছেন নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলো মাছশূন্য হয়ে পড়ায় মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদ-নদীতে যে সামান্য মাছ ধরা পড়ছে, তা চাহিদার সিঁকিভাগও নয়। সামান্য যে পরিমাণ মাছ আসছে, তার দাম নাগালের বাইরে। মত্স্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক ড. মো. অলিউর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন উপকূলের বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৮৪ জন জেলেকে ঈদের আগে সরকারি সহায়তার প্রথম কিস্তি (৩০ দিন) ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দ্বিতীয় কিস্তির (৩৫ দিনের) ৪৬ কেজি চাল খুব শিগগির দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।