অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি, ঢামেকেই ৪ জনের মৃত্যু

0
.

দিন যতো যাচ্ছে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ততোই বাড়ছে। প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভাঙছে। দিনে দিনে ডেঙ্গু মহামারিতে রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে নারী-শিশুসহ ৯৯ জন। গতকালের রেকর্ড ভেঙে শুধু আজই সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৭৩ জন। যার মধ্যে রাজধানীতেই ৪০৭ জন। বিশেষ কর্নার খুলেও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

২৪ ঘণ্টায় ৯৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ঢামেকে
সারাদেশে ব্যাপকহারে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বিশেষ করে রাজধানীতে এর প্রভাব বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধুমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে নারী-শিশুসহ ৯৯ জন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ঢামেক সূত্রে জানা গেছে। ভর্তি হওয়া রোগীরা ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ও নতুন ভবনে চিকিৎসা নিচ্ছে।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত একজনের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, হঠাৎ গায়ে জ্বর, বমি বমি ভাব, আর চোখে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করায় উদ্বিগ্ন হয়ে আসেন ঢামেক হাসপাতালে। সেখানে তাকে দেখে চিকিৎসক সঙ্গে সঙ্গে ভর্তির পরামর্শ দেন। টেস্টে ধরা পড়ে তার ডেঙ্গু জ্বর।

ঢামেকের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের নতুন ভবনের চার, পাঁচ, ছয়তলায় মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। সর্বশেষ সোমবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৪৯ জন। এ পর্যন্ত ঢামেকে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছে চারজন। নতুন ভবনের মতো একই চিত্র ঢামেকের পুরাতন ভবনের শিশু বিভাগে। সেখানেও অধিকাংশ শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত তিন থেকে আট বছরের শিশুরা বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। দেড়-দুই বছরের শিশুরাও আসছে। কিন্তু তাদের সংখ্যা কম।

ঢামেক সূত্রে আরও জানা গেছে, এ বছরের জুলাই পর্যন্ত ঢামেকে ডেঙ্গু রোগে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৪ জন। যার মধ্যে ৯১১ জন ভর্তি হয়েছে গত ২২ দিনে। জুলাইয়ের ২২ দিনে এক লাফে এ সংখ্যা ৯১১ তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছরের জুলাইয়ের পরিস্থিতি অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় ভয়াবহ।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৪৯ জন ঢামেকে ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী হাসপাতালের আউটডোরে আসছে। আমরা যাদের অবস্থা খারাপ মনে করছি, তাদের ভর্তি রাখছি। জুলাইয়ে ডেঙ্গু রোগে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হয়েছে, যা হাসপাতালের জন্য একটি বাড়তি চাপ। তবে আমরা আমাদের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছি।

একদিনেই আক্রান্ত ৪৭৩
ডেঙ্গু আতঙ্ক রাজধানীজুড়ে এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নগরবাসী জ্বর হলেই ছুটছেন চিকিৎসকের কাছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, গতকালের রেকর্ড ভেঙে শুধু আজই সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৭৩ জন। যার মধ্যে রাজধানীতেই ৪০৭ জন। বিশেষ কর্নার খুলেও রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শয্যা সংকটে অনেকের জায়গা হয়েছে মেঝেতে। ভয় না পেয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পুরো ওয়ার্ডই যেন মশারি দিয়ে ঘেরা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২০টি শয্যা ছেড়ে দেয়া হয়েছে কেবল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য। তবে চাপ বাড়ার সাথে সাথে আতঙ্কও বাড়ছে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে। রোগীর স্বজনরা বলেন, ডাক্তার হয়ে সে নিজেই ডেঙ্গু থেকে রেহায় পায়নি। এটা দেখে আমাদের ভয় আরো বাড়ছে।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, জ্বর হওয়ার পর চোখে ও গায়ে ব্যথা শুরু হয়। তাহলে ডাক্তারের কাছে আসা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণে বর্তমান পরিস্থিতিকে বিপদজনক বলে অভিহিত করা হয়েছে। এবারের ডেঙ্গুতে যেহেতু মাল্টি অর্গান আক্রান্ত হবার বিষয়টি নতুন সেই সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে ব্যাপক গবেষণার পাশাপাশি সরকারকে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।