অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পোকায় খাচ্ছে তাজমহল!

0
.

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি ধরা হয় তাজমহলকে। মোঘল সম্রাট শাহজাহানের বানানো এই সুরম্য স্থাপনাটি দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ভারতে এসে থাকেন। এই স্থাপনাটিকে কেন্দ্র করে ভারতের পর্যটন অনেকখানি এগিয়েছে বলা যায়। তবে সম্প্রতি এই স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণে বেশকিছু সমস্যা পোহাতে হচ্ছে তাজমহল কর্তৃপক্ষকে। উগ্রপন্থী শিবসেনা সদস্যরা শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার তাজমহলে আরতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কয়েকদিন আগে। এই অনুপ্রবেশের হাত থেকে তাজমহলকে রক্ষা করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে আরেকটি সমস্যা।

শিবসেনাদের চেয়েও এই সমস্যাকে আরও ভয়াবহ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ এক ধরনের পোকার বিষ্ঠার কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে মোঘল আমলে নির্মিত এই সৌধটির। তাজমহলের শ্বেত পাথরের তৈরি এই সৌধটির শ্বেত পাথরের মধ্যে পোকার বিষ্ঠার কারণে কালো এবং সবুজ রঙের ছোপ পড়তে শুরু করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এটি বিশেষ এক প্রজাতির পোকা যার বিষ্ঠা পাথরের মধ্যে বসে যায় খুব দ্রুত।

সাদা মার্বেল পাথরের ওপর জাফরি ও মিনার শিল্পকর্ম এই স্থাপনাটিকে বিশ্ব দরবারে অনন্য স্থাপনা হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। কিন্তু মার্বেল পাথরের ওপর কালো সবুজ রঙের ছোপ এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে বেশ চিন্তায়ই ফেলেছে বলা যায়। এই সমস্যার একটি সমাধান অবশ্য মিলেছে গবেষকদের হাতে। আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানাচ্ছে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে যমুনা নদীতে স্রোত বাড়াতে হবে। এর ফলে যেই পোকার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি সেটি দূর হয়ে যাবে খুব দ্রুত।

বর্তমানে প্রতি শুক্রবার তাজমহলে পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়। সপ্তাহের এ দিনটিতে পৃথিবীবিখ্যাত এই স্থাপনাটির পরিচর্যা করা হয়। তাজমহলের দেয়াল পরিষ্কার থেকে শুরু করে এর আশেপাশের যত্নও নেওয়া হয় এইদিন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রাশ ব্যবহার করে ঘষে ঘষে পোকার বিষ্ঠা তুলে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সাথে তা ধুয়ে ফেলা হচ্ছে জীবাণুমুক্ত ডিস্টিলড ওয়াটার দিয়ে। কিন্তু তারপরও এই পোকার হাত থেকে নিস্তার মিলছে না কোনো মতেই।

জানা গেছে, গোয়েল্ডি চিরোনোমাস প্রজাতির এই পোকাটি যমুনা নদীর জমে থাকা পানিতে খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করছে। আর ঝাঁকে ঝাঁকে এসে বসছে তাজমহলের দেয়ালে। সেখানেই মল ত্যাগ করে রেখে যাচ্ছে দামি শ্বেত পাথরের ওপর। এতে করে বেশ বড়সড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তাজমহল।

তাজমহল কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্বেতপাথরের রক্ষণাবেক্ষণ এমনিতেই খুব কঠিন একটি কাজ। যেমন তেমন পানি দিয়ে এই শ্বেত পাথর ধৌত করা নিরাপদ নয়। তাই তাজমহলের শ্বেত পাথর পরিষ্কারের ক্ষেত্রে পরিশুদ্ধ পানি দিয়ে তা ধোয়া হচ্ছে। তবে এত বেশি ঘষামাজার ফলে পাথরের ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এর থেকে সমাধানের পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ। যমুনা নদীর পানি কমে যাওয়ার কারণে এর প্রবাহ অনেক কমে গেছে। আর এখানে বাসা বাঁধছে অসংখ্য পোকা মাকড়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে যমুনা নদীর সংস্কার দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।