অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

মতিঝিলে গৃহকর্মী নির্যাতনে মৃত্যুকে ডেঙ্গু বলে চালানোর অভিযোগ

3
.

রাজধানীর মতিঝিলে এক চিকিৎসক দম্পতির বাসার শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুর পর তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহত ফাতেমা (৮) নামে ওই শিশুটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক সিফার বাসায় কাজ করত।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার ফাতেমার মৃত্যুর পর চিকিৎসক দম্পতি স্বজনদের কাছে দাবি করেন, ডেঙ্গুতে সে মারা গেছে।

লাশ দাফনের আগে গোসলের সময় শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন এবং গোপনাঙ্গে রক্ত দেখে স্বজনরা ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। গত বুধবার রাতে পুলিশ ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ ও চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন, ফাতেমার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্বজনরা অভিযোগ করছেন, নির্যাতনে ফাতেমার মৃত্যুর পর চিকিৎসক দম্পতি ডেঙ্গু জ্বর ছিল বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত দম্পতির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্বজনরা জানায়, মতিঝিলের কবি জসীমউদ্দীন রোডে ফাতেমা চিকিৎসক দম্পতির বাসায় কাজ করত। খিলগাঁওয়ের নন্দিপাড়া ছোট বটতলায় শিশুটির পরিবার থাকে। জামালপুর জেলার মেলানদহ উপজেলার শ্যামপুর বাজারের দুলাল ব্যাপারীর মেয়ে ফাতেমা। দুলাল ব্যাপারী অসুস্থ। তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা তৃতীয়। ফাতেমার মা শিখা বেগম মাদারটেক এলাকার একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আয়ার কাজ করেন।

শিশুটির মা শিখা বেগম ও খালু আব্দুল লতিফ বলেন, গত ২০ জুন তিনি ফাতেমাকে জসীমউদ্দীন রোডের চিকিৎসক দম্পতির বাসায় কাজে দেন। গত রবিবার গৃহকর্ত্রী সিফার ফাতেমার পরিবারকে জানায়, ফাতেমা অসুস্থ। পরদিন অসুস্থ ফাতেমাকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলে মায়ের সঙ্গে দেন। ওই হাসপাতালে নিলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ফাতেমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসক সিফা অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তুলে দিয়ে বলেন, ফাতেমাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যেতে। তিনি তাঁদের বলেছেন, ফাতেমার ডেঙ্গু হয়েছিল। তবে পরিবার ফাতেমার লাশ খিলগাঁওয়ের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে গোসল করাতে গিয়ে স্বজনরা দেখে, শিশু ফাতেমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শিশুটির গোপনাঙ্গ দিয়ে এবং নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। বিষয়টি সন্দেহ হলে স্বজনরা খিলগাঁও ও মতিঝিল থানায় যায়।

মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফর মৃতের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, শিশুটির শরীরে, মাথার ডান পাশে কানের ওপরে কালো জখম, নাক দিয়ে রক্ত নির্গত হচ্ছিল, মুখে ও দাঁতে কালো রক্ত দেখা যায়, বুকের মাঝখানে ও বাঁ পাশে কালো জখম, ডান কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত জখমসহ বিভিন্ন স্থানে জখম ছিল। প্রাথমিক তদন্তে বলেন, গত ২৫ জুলাই সে চিকিৎসক দম্পতির বাসায় অসুস্থ হয়, পরে ২৮ জুলাই তার মায়ের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান এসআই আবু জাফর।

এদিকে ময়নাতদন্তের চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ডেঙ্গুতে মারা গেছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শিশুটি হার্টে সমস্যা পেয়েছি, তাও পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

৩ মন্তব্য
  1. Masudul Amin বলেছেন

    😔

  2. Md Shahin Shikder বলেছেন

    বেশিরভাগ বড়লোক নামের এইসব নরপশুদের জন্য প্রতিবছর শতশত গৃহকর্মী নিহত হচ্ছে । আজকাল পড়ালেখা ও ধনসম্পদ মানুষকে পশুতে রুপান্তরিত করতিছে। ধিক্কার জানাই এইসমস্ত নরপশুদের।

  3. HA Jahirul Islam Bhuiyan বলেছেন

    এদের জন্যই আজ দেশের এ অবস্থা