অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মাসুমের দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স অবশেষে বাতিল (ভিডিও)

2
.

২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল নগরীর লালখান বাজার এলাকায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সমাবেশে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি করা করেছিল তৎকালিন যুবলীগ শীর্ষ সন্ত্রাসী ‍দিদারুল আলম মাসুম। পরদিন দেশের সকল জাতীয় দৈনিকে অস্ত্রহাতে গুলি করার মাসুমের সেই ছবি ছাপা হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এরই মধ্যে মাসুম বাহিনীর হাতে তার নিজ দলের ৮ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন পরপরই লালখান বাজার এলাকায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ও বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়।

অবশেষে ৬ বছর পর নিজ দলে অপর এক নেতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণলয় দিদারুল আলম মাসুমের সেই অস্ত্রসহ দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে।

প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি করার সেই ভিডিও-

দিদারুল আলম মাসুম মহানগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।  গত ২২ জুলাই (সোমবার) তার প্রতিপক্ষ একই দলের নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এফ কবির মানিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসী মাসুমের দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

কাউন্সিলর মানিক তার নিজের ও এলাকাবাসীর ‘নিরাপত্তাহীনতার’ কথা বলে মাসুমের অস্ত্র বাতিলের আবেদনটি করেছিলেন। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে উপ-সচিব আব্দুল জলিলের স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসক বরাবার একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।

.

এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মানিক বলেন, ’বৈধ অস্ত্রে অবৈধ গুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র প্রদর্শন করেছেন মাসুম। সে জন্য আমি ও এলাকার মানুষ সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।  কথায় কথায় সে অস্ত্র প্রদর্শন করে। এসব কারণে আমি সরকারের কাছে আবেদন করেছি। তার অস্ত্রের লাইন্সেস বাতিলের।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন বলেন, দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে ‘গত বুধবার আমরা চিঠি পেয়েই খুলশী থানাকে নির্দেশ দিয়েছি দিদারুল আলম মাসুমের নামে ইস্যু করা অস্ত্রগুলো জব্দ করার জন্য।’

খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চিঠি পেয়ে দিদারুল আলম মাসুমের অস্ত্র জব্দ করতে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। বাসা থেকে জানানো হয়েছে তিনি চট্টগ্রামের বাইরে। তাই অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আমরা নোটিস দিয়েছি।’

পুলিশের সভায় মাসুম ও তার প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর মানিক।

এ প্রসঙ্গে দিদারুল আলম মাসুম বলেন, আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কান্সিলর মানিক আমার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেছে। লাইসেন্স বাতিলের এ অভিযোগটি আইনসিদ্ধ নয় দাবি করে মাসুম বলেন, তার কিছু অনিয়মের প্রতিবাদ করায়ও তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।

তিনি অভিযোগে যে ছবিটি তুলে ধরেছেন, তা ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের ধংসাত্মক কর্মকান্ড প্রতিহত করার ঘটনা। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। আমি খুলশী থানার ওসিকে বলেছি ঢাকা থেকেে এসে অস্ত্র জমা দেয়ার আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো।’

.

সর্বশেষ ২৯ জুন (শনিবার) লালখান বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম ও নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিলো। ওই ঘটনায় মাসুমেরই এক অনুসারী আল আমিন বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২২ জনকে গ্রেফতার করে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সময়ে (৯৬-২০০০) সালে মাসুম তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে লালখানবাজার এলাকায় জায়গা দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দিদারুল আলম মাসুম পালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান। মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে তার ব্যবসা-বাণিজ্যও। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফের দেশে ফিরে আসেন মাসুম।

বিভিন্ন সময়ে তার নামে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের সুপারিশ নিয়ে প্রতাহার করিয়ে নিতেও সক্ষম হন মাসুম। দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে থাকাকালীন সময়ে তার শক্ত অবস্থান গড়েন আরেক নগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদ মাহমুদ।

.

দেশে ফেরার পর মাসুম তার হৃতরাজ্য ফিরে পেতে এবং এলাকার আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ফরিদ মাহমুদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মাসুম। আধিপত্যের দ্বন্দ্বে তাদের মধ্যে একাধিকবার বন্দুকযুদ্ধও হয়েছে। কয়েক বছর আগেও মাসুম ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাধিক মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি পুলিশের তালিকা থেকেও নাম কাটিয়ে নেন মাসুম। শুধু তাই নয়, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে নিজ নামে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সও বাগিয়ে নেন তিনি।

চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের গ্রুপিং রাজনীতিতে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিপক্ষ প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিনের সঙ্গে যুক্ত দিদারুল আলম মাসুম। চট্টগ্রামের লালখানবাজার এলাকায় তার নিজের একটি ক্যাডার বাহিনীও গড়ে তোলে।