অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

কক্সবাজারে সাগরে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ এক

0
বাম থেকে নিহত রুয়েট ছাত্র রফিক মোহাম্মদ। ডানে নিখোঁজ আরিফুল ইসলাম।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা গেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রফিক মোহাম্মদ। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে একই বিশ্বকিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম

শনিবার (১০ আগষ্ট) বিকেল দিকে শৈবাল পয়েন্ট থেকে রফিক মোহাম্মদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত রফিক রুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। নিখোঁজ আরিফুল বইদ্দরঘোনা এলাকার জাহেদ হোসেনের ছেলে। দুই দিন আগে তাঁরা রাজশাহী থেকে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে এসে সাগরে গোসল করতে নামেন।

পুলিশ জানায়, সকালে আরিফুল ইসলামসহ পাঁচজন সৈকতের গোসল করতে নামেন। ঢেউয়ের ধাক্কায় তারা গভীর সাগরের দিকে ভেসে যায়। এ সময় লাইফগার্ডকর্মী ও টুরিস্ট পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করেন। তবে আরিফুল ইসলাম ও তার বন্ধু রফিক আহমদ নিখোঁজ হন।

শুধুই স্মৃতি।

এদিকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতক্ষ্যদর্শী তাদের বন্ধু গালেব বিন জাবের জানায়, সকালে বয়েজ স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলার পর আমরা আটজন মিলে লাবণী পয়েন্টে যায় গোসলের উদ্দেশ্যে! আজকে মাত্র কুমিল্লা থেকে আসার কারণে শরীর ঠিক লাগছিলনা আমার, তাই আমি বলেছিলামও অন্য একদিন যেতে। কিন্তু তা আর হয় নি। আনুমানিক ১০ঃ৫০ এর দিকে আমি সী বীচের সিটে বসি সবার মোবাইল পাহারা দিতে আর বাকি সাতজন (রফিক, আরিফ, শাহেদ, রাফি, নোহাদ, কালাম, আহমেদ) যায় গোসল করতে। আনুমানিক ১১ঃ১০ ঘটিকায় আমি যাই আর নোহাদ ও কালাম সিটে যায় মোবাইল পাহারা দিতে। তখন বাকি পাঁচজন (রফিক, আরিফ, রাফি, শাহেদ, আহমেদ) গোসল করতে করতে পিছনের দিকে যাচ্ছিলো। আমি যখন তাদের থেকে আনুমানিক দশ হাতের মত দূরে তখনি হঠাৎ করে তাদের কোমর সমান পানি হয়ে যায় মাথার চুল সমান, শুধু হাত দেখা যায়, একটু সামনে পা বাড়তেই বুঝতে পারি সামনে গর্তের মত একটা স্ট্রাকচার। তৎক্ষণাৎ আমি কোনরকম ভাবে অনুরোধ করে একজন লোকাল ছেলে টিউব সহ পাঠিয়ে দিই এবং ঐ টিউব করে ভেসে আসে রাফি এবং শাহেদ, অন্যদিকে আহমেদ কিছুটা সাতঁরিয়ে এগুতে পারলেও তার মুখ থেকে সাদা ফেনা পড়তে থাকে আর অবস্থা বেগতিক দেখে কোনরকমভাবে টেনে পাড়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ঐ ক্ষুদ্র সময়ে আরিফ আর রফিকের কোন চিহ্ন মিলেনা। এরপর বাকিদেরকে ওদের খুঁজে পাঠিয়ে আহমেদকে নিয়ে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। তখনও তার মুখ দিয়ে লোনা পানি বের হচ্ছিল থেমে থেমে।অবস্থার অবনতি হলে তাকে ICU তে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর পরবর্তীতে সে সুস্থ হয় আল্লাহর অশেষ কৃপায়। হাসপাতাল থেকে লাবণী পয়েন্টে যায় আবার। ততক্ষণে প্রশাসন,ফায়ার ব্রিগেড চলে এসেছে। অনেক খুঁজাখুঁজির পর আনুমানিক সাড়ে তিনটার সময় হলি ডে এর মোড় বরাবর কবিতা চত্বর সি বীচে রফিকের বডি উদ্ধার করে তৎক্ষনাৎ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এক লাইফ গার্ড কর্মী বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে আটজন স্টুডেন্ট একটা টিউব নিয়ে সমুদ্রে গোসল করতে নামেন। আটজনের মধ্যে পাঁচজন টিউব থেকে পড়ে যান। আমাদের লাইফ গার্ড দুইজনকে উদ্ধার করে। একজন এমনিতেই চলে আসে। এরপর সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’

অন্যদিকে, কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আটজন বন্ধু মিলে সৈকতে বেড়াতে এসেছিলেন। ভাটার সময় সবাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একটা ঢেউ আসে। তখনই পানিতে পড়ে যান সবাই। পাশে গুপ্ত খাল ছিল। খালে পড়ার কারণে সবাইকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দুজনকে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা উদ্ধার করেছি। পরবর্তীতে একজনকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। যেহেতু নিখোঁজ একজন আছেন। তাঁকে উদ্ধারের জন্য সার্বিকভাবে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’

বর্তমানে নিখোঁজ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, লাইফ গার্ড, সৈকত কর্মী ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সমন্বয়ে উদ্ধার কাজ চলছে।