অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকাতে ক্যাম্পে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তাব পুলিশের!

0
.

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। খুন-ধর্ষণ থেকে শুরু করে চুরি-ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ মাদক ব্যবসাতেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের অপরাধপ্রবণতা ঠেকানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পটভূমিতে রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকাতে ক্যাম্পের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে পুলিশ। ক্যাম্প এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দফতরে। প্রতিবেদনে অন্যান্য প্রসঙ্গের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে তা নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হোস্ট কমিউনিটি বা স্থানীয় জনসংখ্যার তুলনায় রোহিঙ্গা জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে অপরাধের ঘটনা কম। তবে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাস করা সাড়ে ১১ লাখের বেশি মানুষের মনিটরিং করা এমনিতেই চ্যালেঞ্জের বিষয়। ভবিষ্যতে তা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেওয়া বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কারণে একদিকে ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের হুমকির সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারও তাদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই শরণার্থী ইস্যুকে অন্যদিকে মোড় দেওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া অনেক দেশি-বিদেশি নাগরিক বা সংগঠন রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠাসহ অসৎ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এজন্য তারা মূলত তরুণ রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখাচ্ছে। আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে তুলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বাংলা বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে তুলনামূলক অপরাধ বিচার করলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধের পরিসংখ্যান বেশি নয়। তবে একসঙ্গে ১০ লাখ মানুষ অবস্থান করা মানে সেখানে যেকোনও সময় বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।’ এত লোকজনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। তবে ভবিষ্যতের জন্য আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলারসহ মোট সাড়ে ৯০০ পুলিশ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। দুটি ব্যাটালিয়ন চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি মঞ্জুর হয়েছে। তবু সদস্য সংখ্যা কম। ক্যাম্পগুলোতে ৭টি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। সব মিলিয়ে যথাযথভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি করেন তিনি।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থানাধীন এলাকায় সাড়ে ৫ লাখ স্থানীয় অধিবাসী রয়েছে। অতিরিক্ত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তার জন্য ২টি থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য চাপ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য ৩টি অতিরিক্ত থানা, একাধিক পুলিশ তদন্তকেন্দ্র স্থাপন এবং রোহিঙ্গাদের অপরাধ বিচারের জন্য একটি অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন বলেও প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প এলাকা ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তর ঠেকাতে চেকপোস্ট, যৌথটহল ও মোবাইল দল কাজ করছে। কিন্তু বর্তমান শুকনো মৌসুমে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পাহাড়িপথে হেঁটে কক্সবাজার ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট নিরাপত্তাবেষ্টনীতে আবদ্ধ রাখা প্রয়োজন। এজন্য জরুরিভিত্তিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য পুলিশের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি স্থাপন করা প্রয়োজন।

পুলিশ সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে টেকনাফ ও উখিয়া থানা এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ১৪ এপিবিএন, কক্সবাজার নামে একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। এর অপারেশনাল কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আরেকটি ব্যাটালিয়ন গঠন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মোতায়েন করা প্রয়োজন।

সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন