অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

‘৪০ লাখ টাকায় ছাত্রলীগ নেতা হয়েছি, ছয় মাসে দ্বিগুণ হবে’

8
.

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ৪০ লাখেরও বেশি টাকা দিয়ে নেতা হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এই টাকা আগামী ৬ মাসে ডাবল হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের এই সংক্রান্ত ৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ স্টার মেইলের হাতে এসেছে। কথোপকথনে হাইকোর্টের রায় কেনাবেচা হয় এবং টাকা হলে যেমন খুশি তেমন রায় কেনা যায় এমন কথাও বলেছেন রাকিব।

গত ঈদুল আজহার পূর্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন নেতার সঙ্গে রাকিবের এই কথোপকথন হয় বলে জানা গেছে। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

সাধারণ সম্পাদকের ৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ওই কথোপকথন থেকে জানা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) মাহমুদুল হাসান নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নেতা বানিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। মাহমুদুলকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মাধ্যমে পাবিপ্রবির নেতা বানাতে পারবে বলে জানান রাকিব। রাব্বানী তাকে আঞ্চলিক নেতা বানানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।

ফোনালাপে রাকিব বলেন, ‘ঢাকা যায়ে খাটতে হয়। ঢাকা যেয়ে খাটতে বলতে কি, বহুত কাঠখড়ি আছে। তবে এখন আমার যে হিসাব নিকাশ, রাব্বানী ভাইয়ের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, এ আঞ্চলিক, এ বিষয়টা আমি যদি ভাইরে বলি ভাই আমার কথা শুনবে। ভাই অলরেডি আমাকে বলেছেও আঞ্চলিক বিষয়গুলো দেখার জন্য।’ কথোপকথনের একপর্যায়ে মাহমুদুলকে নেতা বানাতে খরচ কেমন হতে পারে এমন আলোচনাও হয়। এ সময় রাকিব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা হতে চল্লিশ লাখের মত টাকা খরচ করেছে বলে অডিও থেকে উভয়ের কথোপকথোনে জানা যায়। অজ্ঞাত ব্যক্তি: তোমার (রাকিব) ইয়ে সম্পর্কে তুমি যেভাবে বলছিলে আরকি, বিভিন্নভাবে কমিটি ভাঙ্গা, গড়া, প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার খরচ টরচ দিয়ে তোমারতো একটা বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।

.

রাকিব: হুমম.. হিউজ.. হিউজ.. অজ্ঞাত ব্যাক্তি: সেই ফিগার তো আমি জানি, তা প্রায় মনে হয় চল্লিশের কাছে হবে। রাকিব: হুমম। রাকিব: না ভাই শোনেন কোনো ছেলেরে ইয়ে করতে গেলে… । এখন আমার যা খরচ হইছে এটা কোনো ব্যাপার না। ওইটা ছয় মাস গেলে সব ডাবল হয়ে যাবে, সমস্যা নাই। কিন্তু ওরে হচ্ছে ফোন দিতে কন আমি গিয়ে হচ্ছে দেখা করে আসবোনি। অডিও থেকে আরও জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্বের কমিটি ভাঙতেও কাজ করেন রাকিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্যই কমিটি ভাঙা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের মাধ্যমে কমিটি ভাঙা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।

রাকিব: কমিটি যদি ভাঙে একজনের ওয়াইফের জন্য, বোর্ড করার জন্য। ম্যাথের বোর্ডটা স্থগিত করার জন্য। একজনকে করার জন্য আমরা কমিটি স্থগিত করি সিস্টেমে, সেটা আরেকটা লাইনে, এটা শোভনের লাইন। আমি তখন চিন্তা করলাম যে আমি একা নেতা হব? বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে শিক্ষক পদে আবেদন করেছিলেন ইবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। ওই বিভাগে চাকরি হয়নি তার।

গণিত বিভাগের নিয়োগ বোর্ড নিয়ে একজন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেছিলেন বলে জানা গেছে। অডিওতে টাকার বিনিময়ে হাইকোর্টের রায় কেনা বেচা হয় বলেও দাবি করেন রাকিব। রাকিব: সাইফুলের ওয়াইফ সে ব্যপারটা কম বলেনি..অনেক টাকা লাগবে, ৩০ লাখ টাকা লাগবে। হাইকোর্টে রিট করতে হবে, রায় কিনে নিয়ে আসতে হবে। সে লাইনও আছে, টাকা লাগবে। হাইকোর্টে এমন এমন জায়াগায় এমন এমন লাইন আপনি যেভাবে রায় চাইবেন রায় সেভাবেই দেবে, টাকা লাগবে। এসব পথ আমি পাড়ি দিয়ে আইছি, তো রায় মায় সব কিনা যায়, সব রায় কিনা যায়। রাকিবের সঙ্গে অজ্ঞাত ব্যক্তির এই সাত মিনিট ২৭ সেকেন্ডর অডিওর মধ্যে ৪ মিনিটের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন আইডি থেকে এই অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত রোববার সাধারণ সম্পাদক রাকিবের সঙ্গে ওই ব্যাক্তির বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার নিয়োগ বাণিজ্যের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে ওই ব্যক্তিকে প্রার্থী যোগাড় করতে বলেন রাকিব। এক মিনিটের অডিও ফাঁস হলে ওইদিনই একটি ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থাকায় জিডি করেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ডায়েরি নং- ৪২৫।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ আট মাস কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর গত ১৪ জুলাই ইংরেজি বিভাগের রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে সবেক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে রাখে কেন্দ্রীয় কমিটি।

ইবি ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত কর্মী তন্ময় সাহা টনি বলেন, টাকার বিনিময়ে নেতৃত্বে আসলে আদর্শিক এবং যোগ্য কর্মীরা বঞ্চিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে নেতৃত্ব বাছাই করলে এমন নেতৃত্ব আসতো না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক কর্মীরা কখনো কিনে আনা নেতৃত্ব মানে না। আমার মনে হয় অডিওটি শোনার পর কোনো দালাল ছাড়া আদর্শিক কর্মী তাকে নেতা মানবে না। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি অডিও শুনেছি, তবে এ বিষয়ে আমার কোনো আইডিয়া নেই। রাকিবকে ফোন করে কারণ জানতে চেয়েছি। তাকে শোকজ করা হবে। সে কেন, আর কার সঙ্গে কথা বলেছে এর ব্যাখ্যা অবশ্যই তার কাছে জানতে চাওয়া হবে।

এছাড়াও ওই অডিওতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার নিয়োগে প্রার্থী খোঁজার বিষয়টি উঠে আসে। রাকিবের বিরুদ্ধে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ইবি শাখার সম্পাদক হওয়ার আগের দিনও তার বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিক কথোপকথন আমার না।

আমার কণ্ঠ নকল করে এটি তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওখানে চল্লিশের কথা উল্লেখ আছে। লাখ বা হাজারের কথা উল্লেখ নেই। হাইকোর্ট নিয়ে কথোপথনের বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব বলেন, এমন কোনো কথা আমি কারো সঙ্গে বলিনি।- ষ্টার লাইন।

৮ মন্তব্য
  1. Manna Mazumder বলেছেন

    এখন আর আদর্শিক কর্মী কোথায় পাওয়া যায়?????????

  2. Saiful Alam বলেছেন

    বীমা কোম্পানি

  3. Md Abul Hossain বলেছেন

    এই হালায় জামায়াত পরিবারের।

  4. Jakir Hossen Ziku বলেছেন

    সত্যিটা তাহলে বেরিয়ে এলো~তাই যদি না হয়। পদ পদবী নিয়ে এতো মারামারী হানাহানি কান্নাকাটি হওয়ার কথা নয়?

  5. Sarwar Hossain বলেছেন

    সত্যতা জানা জরুরী

  6. Nasir Uddin বলেছেন

    Where will Bangladesh stand if the mentality of the people is one

  7. Ashraf Ali বলেছেন

    Dislike.

  8. Kbd Nurul Hoque বলেছেন

    ছাত্র জীবনেই দক্ষ ব্যবসায়ী!