অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

যুবলীগ নেতার ক্যাসিনোতে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকা লেনদেন হতো!

0
.

রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। ক্লাবটির মালিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদকেও বুধবার রাতে গুলশান-২ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত আট মাস ধরে অবৈধভাবে চলা ক্লাবটির ক্যাসিনোতে দিনে প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি হাতবদল হতো! আর ক্লাবের প্রতিদিনের জমার হিসাব খাতা বলছে, দিনে কমপক্ষে ২০-২৫ লাখ টাকা আয় করতো ক্লাবটি।

ক্লাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্লাবটিতে একটি ভিআইপি রুম আছে। যেখানে ৮ জন একসঙ্গে ‘ফ্লাশ গেম’ নামের জুয়া খেলতে পারতো। সেই আসরেই টাকার লেনদেন বেশি হতো। তাছাড়া ৮টি জুয়ার টেবিল, ৬টি ইলেকট্রনিক ক্যাসিনো মেশিন ছিলো ক্লাবটিতে।

.

পুরো ক্লাবটি সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরাতে নজরদারি রাখা হতো। ক্লাব সংশ্লিষ্ট নয় এমন কেউই সেখানে সহজে প্রবেশ করতে পারতো না।

দোতলাবিশিষ্ট ওই ক্লাবের নিচতলায় ছিলো ক্যাসিনো। উপরে টিনশেডে তৈরি কক্ষে থাকতেন ক্যাসিনোর কর্মচারীরা। ক্লাবটিতে প্রবেশের মুখেই রয়েছে খালেদের অফিস। দিনে নির্দিষ্ট এক সময়ে সেখানে আসতেন তিনি।

এই অভিযান সম্পর্কে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, জুয়া খেলার আসর থেকে ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে ক্লাব থেকে মদ, ইয়াবা ও সিগারেটসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

.

তিনি আরও জানান, এর মধ্যে ১৬ জন ক্লাবের স্টাফ। গ্রেফতারকৃত অন্য ১৩১ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। বাকি ১০ জনকে ৬ মাস করে। অভিযান শেষে ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, শুধুই ইয়ংমেনসে না, মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন। আর কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই তার ডাক পড়ত খালেদের টর্চার সেলে।

যুবলীগের এই নেতার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারে একটি টর্চার সেল আছে বলেও জানা গেছে।

জানা যায়, টর্চার সেলে নির্যাতনের জন্য অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে টর্চার সেলে নিয়ে নির্মমভাবে তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো।

এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘খালেদের একটি টর্চার সেল পাওয়া গেছে। এখানে যা দেখেছি লোম শিউরে ওঠার মতো অবস্থা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাকে এখানে এনে নির্যাতন করা হতো।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অপসারণ হলে গুঞ্জন উঠে যুবলীগের নানা অপকর্ম ও দৌরাত্ম্য নিয়েও। এরইমধ্যে গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের অপকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ নেতার খালেদের ক্যাসিনোতে অভিযানসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার বিকেলে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় গোলারটেক মাঠে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ডের যৌথ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওমর ফারুক চৌধুরী এক বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘আপনি বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনারা ৬০ জনে কি এত দিন আঙুল চুষছিলেন? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গার থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ থানার যে র‌্যাব ছিল, তাদের অ্যারেস্ট করা হোক।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো অভিযোগ এলো না, হঠাৎ কেন অভিযোগ আসলো? আর অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?’

যুবলীগ চেয়ারম্যান যখন এই বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন কিংবা ঠিক তার আগ মুহূর্তে ফকিরাপুরে ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়।

এসময় উত্তেজিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে অ্যারেস্ট করবেন? করেন। আমি রাজনীতি করি, ১০০ বার অ্যারেস্ট হব। আমি অন্যায় করেছি, আপনারা কী করেছিলেন? আপনি অ্যারেস্ট করবেন, আমি বসে থাকব না। আপনাকেও অ্যারেস্ট হতে হবে। কারণ, আপনিই প্রশ্রয় দিয়েছেন।’

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গুলশান-২–এর নিজ বাসা থেকে খালেদ মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয়। আর ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান শুরু হয় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে।