অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

প্রাইম মুভার ট্রেইলর ধর্মঘট ৫দিনে, ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি

0
screenshot_2
ধর্মঘট চলাকালে বন্দর এলাকায় দাড় করিয়ে রাখা প্রাইম মুভার ট্রেইলর।

পোষাক শিল্প খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতির পর অবশেষে ৫ দিনের মাথায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহণে নিয়োজিত প্রাইম মুভার ট্রেইলর ধর্মঘট স্থগিত করা হলো। কিন্তু এ দায় কার, কে বা কারা পূরণ করবে ব্যবসায়িদের এ বিশাল ক্ষতি। এমন প্রশ্ন ব্যবসায়ি নেতাদের।

জানাগেছে এ অযুক্তিক ধর্মঘটে শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট নয়, দেশের সার্বিক আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বিমানে পণ্য পাঠাতে গিয়ে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে পোশাক শিল্প মালিকদের।

দেশের সিংহভাগ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক বেসরকারি আইসিডিগুলো থেকে কনটেইনারে ভরে প্রাইম মুভারে করে নেয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে প্রতিটি দিন যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে প্রাইম মুভার ধর্মঘটে গত চার দিন ধরে কোনো পণ্য শিপমেন্ট না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে পোশাক শিল্প মালিকরা।

screenshot_2
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার অনলোড কাজে প্রাইম মুভার ট্রেইলর।

ধর্মঘটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রফতানি পণ্যবাহী কন্টেনার বন্দরে পৌঁছতে পারেনি। এর ফলে ৮৯৮ টিইইউএস কন্টেনার রেখে বন্দর ছেড়ে গেছে তিনটি বিদেশি জাহাজ। গত বুধবার এমভি এক্স ওরশোলা বন্দর ত্যাগ করে ১৭৭ টিইইউএস কন্টেনার রেখে। ঐ সন্ধ্যায় এমভি এক্সপ্রেস লর্ডসি ৬৭০ টিইইউএস এবং এমভি ওইএল কলম্বো ৫১ টিইইউএস কন্টেনার রেখে বন্দর ছেড়ে সিঙ্গাপুর এবং কলম্বোর পথে যাত্রা করে। এগুলো সিঙ্গাপুর বা কলম্বোর জাহাজে বোঝাই করার সিডিউল থাকলেও মূলত চালানগুলো ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের তৈরি পোষাক রয়েছে।

রফতানি পণ্যের এসব কন্টেনার নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ে বড় জাহাজ ধরতে না পারলে বিমানে পাঠাতে হবে। এতে লোকসানে পড়বে প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ চুক্তি অনুযায়ী পণ্য পৌঁছাতে না পারলে বায়াররা অর্ডার বাতিল করতে পারেন। এদিকে ৮৯৮ টিইইউএস কন্টেনারের মধ্যে ৯৫ শতাংশ পোশাক শিল্পের বলে জানা গেছে।

বিজিএমইএ’র অভিযোগ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে কোনো আলোচনা ছাড়া মহাসড়কে গাড়ির ওজন নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় এমন অবরোধের মুখে পড়তে হয়েছে।

এক্ষেত্রে বিদেশি ক্রেতা ধরে রাখতে হলে বিমানে পণ্য পরিবহন করা ছাড়া উপায় নেই। তবে এর খরচ বহন করা ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে আইসিডিতে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্য আটকা পড়ায় এসব পণ্যের শিপমেন্টে ব্যাপক চাপে পড়েছে পণ্য পরিবহনের সাথে যুক্ত ফ্রেইট ফরওয়ার্ডাররা।

বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এফবিসিসিআই জানায়, চারদিনের ধর্মঘটে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা দ্রুত এ ধর্মঘটের অবসান না হলে ক্ষতির পরিমাণ শুধু বাড়বে না, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে।

img_6127
ঢাকাস্থ বিজিএসইএ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।

এদিকে দুপুরে প্রাইম মুভার মালিক চালকদের ৫ দিনের ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক শিল্পের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমের ৮০ ভাগই সম্পাদিত হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে। এই অতি গুরুত্বপূর্ন বন্দর ব্যবহার আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে এই বন্দরকে অচল করে ফেলা হয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরন হচ্ছে – গত ৪ দিনসহ আজ অর্ধদিবসের প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার ধর্মঘট। আর এর চরম মাশুল দিতে হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পকে। এই ক্ষতির কোনো মাপকাঠি নাই। গত ৪ দিনে কন্টেইনারবাহী গাড়ীর মালিক ও শ্রমিকদের টানা কর্মবিরতির কারনে পণ্য খালাস করতে না পারায় কন্টেইনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিকে জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছেন আমাদের উদ্যোক্তাগণ। কয়েক হাজার কোটি টাকার শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে। আমাদের অপরাধ কি ? পোশাক রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছি এটাই কি আমাদের অপরাধ ? যদিও আজকে আমরা জেনেছি যে, আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত রাখা হয়েছে, এটা তো কোনো স্থায়ী সমাধানের কথা বলে না। আমরা মনে করি, চট্টগ্রাম বন্দর কখনো দাবি আদায়ের হাতিয়ার হতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বিদেশ থেকে দেশে এসে আমি দেখি যে প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছেন। আমি তখন এ ব্যাপারে পোশাক শিল্পের উদ্বেগ জানানোর জন্য মাননীয় বানিজ্যমন্ত্রীকে ফোন দেই। তারপর নৌপরিবহন মন্ত্রী দেশে না থাকায় নৌপরিবহন সচিব এর সাথে কথা বলি। একই দিনে ৩বার সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর সাথেও কথা বলি। ২৮ সেপ্টেম্বর সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রনালয়ে যেয়ে বিষয়টি নিয়ে মাননীয় মন্ত্রীর সাথে কথা বলে বিষয়টি সুরাহার অনুরোধ করি। এটিও অনুরোধ করি যে যেহেতেু ৪ অক্টোবর তারিখে পূর্বনির্ধারিত সভা রয়েছে, সেহেতু আগের নিয়মে ৪/৫ দিন প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিকদেরকে পন্য পরিবহনের অনুমোদন দেয়া হোক। এ অনুরোধের পর আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষন করতে থাকি। আমরা প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিকদেরকেও শিল্পের স্বার্থে নমনীয় হওয়ার অনুরোধ জানাই। কিন্তু গতকাল পর্যন্তও ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়নি।
২৯ তারিখে বানিজ্য মন্ত্রী মহোদয় এ ব্যাপারে মাননীয় সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। আজ ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও ধর্মঘট আহবানকারী নেতাদের সাথে এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে এ ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।

মনে রাখা জরুরি, বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তৈরি পোশাক শিল্প। আমরা সরকারকে বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়, সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ সবাইকে অনুরোধ করছি এ ব্যাপারে আগামী ৪ঠা অক্টোবরের মধ্যে একটি ঐক্যমতে আসার জন্য, যাতে করে আগামীতে বন্দরে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ২৭,৯১৭ টিউস কন্টেইনার (যার অর্ধেক প্রায় ১৩,৫০০ টিউস পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানী পণ্য)সহ ৪০,২৫০ টিউস কন্টেইনার অবস্থান করছে। বন্দরের ধারণ ক্ষমতা ৩৬,৩৫৭ টিউস। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ৩,৮৯৩ টিউস কন্টেইনার বন্দরে অবস্থান করছে। এই কন্টেইনারগুলো কারখানায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্য প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক শ্রমিক ভাইদেরকে উদ্যোগী ভ’মিকা পালনের অনুরোধ করছি। অন্যদিকে প্রাইভেট আইসিডিতে যাওয়ার জন্য যে ৪২১৮টি আমদানী পণ্যবাহী ঋঈখ কন্টেইনার বর্তমানে বন্দর জেটিতে অপেক্ষামান রয়েছে সেগুলোকেও জেটিতে পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। রপ্তানি পণ্যবাহী ৬৯০০ কন্টেইনার বিভিন্ন প্রাইভেট আইসিডি’তে অবস্থান করছে, যা দ্রুত বন্দর জেটিতে জাহাজীকরনের জন্যে পৌঁছানো জরুরি। এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক শ্রমিক ভাইদেরকে অনুরোধ করছি।