অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দু’দিনের বজ্রপাতে নিহত ৮১ জন

0

74811_1গত বৃহস্পতি (১১ মে) ও শুক্রবার (১২ মে) বজ্রপাতে দেশের ২৬ জেলায় ৮১ জন মারা গেছেন। ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ মে) সচিবালয়ে বজ্রপাতে হতাহত ব্যক্তিদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ ও বজ্রপাতে মানুষের করণীয় বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এসব তথ্য জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) বজ্রপাতে এ মৃতের তালিকা তৈরি করেছে। বজ্রপাতে নিহত ৮১ জনের মধ্যে ৫৫ জনই মাঠে অবস্থানের সময় মারা গেছেন।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন গণমাধ্যম দু’দিনের বজ্রপাতে নিহতের বিভিন্ন সংখ্যা প্রকাশ করেছে, তবে তা সর্বোচ্চ ৬০ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১২ ও ১৩ মে বজ্রপাতে দেশের ২৬ জেলায় শিশুসহ ৮১ জন মারা গেছেন। এজন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা মনে হয় সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন স্কুলে লেখাপড়া করতাম তখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে মাঠে নেমে আসতাম, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নামত, বজ্রপাতের শব্দ শুনতাম। আমরা খেলাধুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। এখন বিষয়টি অন্যরকম হয়ে গেছে।’

এ ধরনের বজ্রপাত বাংলাদেশ এমনকি বিশ্বের ইতিহাসে ‘নজিরবিহীন’ মন্তব্য করে মায়া বলেন, ‘৮১ জন মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়টি আমাদের আসলেই ভাবিয়ে তুলেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল জানান, ১২ মে কাল বৈশাখীর সময় কিশোরগঞ্জের ইটনায় নৌকা ডুবিতে ৪ জন ও দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে গাছ চাপা পড়ে একজন মারা গেছেন।

গত বছর এপ্রিল, মে ও জুন মাসে বজ্রপাতে ১৭ জন মারা গেছেন বলে জানান সচিব।

বজ্রপাতের পূর্বাভাস আমরা ৬ ঘণ্টা আগে দিতে সক্ষম জানিয়ে শাহ কামাল বলেন, ‘এজন্য সবাইকে আবহাওয়ার তথ্য নিয়মিত শোনার আহ্বান জানাচ্ছি। ১০৯৪১ ফোন করলেও আমরা পাঁচটি অপশনে সকল তথ্য দিতে পারি।’

কি কারণে বজ্রপাত বাড়ছে-জানতে চাইলে মন্ত্রী ও সচিব সুনির্দিষ্ট কোন জবাব দিতে পারেননি।

বজ্রপাতের কারণ অনুসন্ধানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হবে কীনা-জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইতোমধ্যে আমি আলোচনা করেছি। তারা গবেষণার উদ্যোগ নেবে।’

নিহতের পরিবারকে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা সহায়তা :প্রত্যেক জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য থোক বরাদ্দ দেওয়া হয় জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কাছে সব সময় ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতে থাকে। এছাড়া ৫০ থেকে ২০০ টন খাদ্য মজুদ থাকে। দুর্যোগ হলে জেলা প্রশাসন দাফনসহ পরিবারকে সহায়তা হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। বজ্রপাতে নিহত ৮১ জনের পরিবারকে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট ১৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছি আমরা।’

‘আমরা বসে নেই। দু’দিনের ঘটনার পর আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে গেছি। আমরা মুর্হুমুর্হু (বার বার) বৈঠক, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে বজ্রপাতের আগে, বজ্রপাতের সময় ও পরবর্তীকে কী করণীয় সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জিনিস তৈরি করেছি’ বলেন মন্ত্রী।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বলেন, ‘বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও আহত ব্যক্তিকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।’

কোন জেলায় কত জন মারা গেলেন : বজ্রপাতে নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৭ জন করে মারা গেছেন। রাজশাহী ও পাবনায় ৬ জন করে মারা গেছেন। কিশোরগঞ্জে মারা গেছেন ৫ জন। ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ি, সিলেট ও বাহ্মণবাড়িয়ায় ৪ জন করে মারা গেছেন। জয়পুরহাট ও নওগাঁতে ৩ জন করে বজ্রপাতে মৃত্যুবরণ করেছেন।

দু’জন করে মারা গেছেন গাজীপুর, নেত্রকোণা, দিনাজপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, নাটোর, নীলফামারী ও চট্টগ্রাম জেলায়।

বজ্রপাতে একজন করে মারা যাওয়া জেলার মধ্যে রয়েছে- যশোর, নড়াইল, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর।