অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রামে ইসির দুই কর্মকর্তাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক শুরু

0
.

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকশ’ রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেয়ার পেছনের কারিগর দুই নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নির্বাচন কমিশনের ওই সাতজন হলেন- চট্টগ্রাম জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান ও চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা (বর্তমানে পাবনায় কর্মরত) আব্দুল লতিফ শেখ, ঢাকা এনআইডি প্রজেক্টের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাগর, একই শাখার সাবেক টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সত্য সুন্দর দে, চট্টগ্রামের পটিয়ার বড় উঠান ইউনিয়মের শাহানুর মিয়া, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী অপারেটর জনপ্রিয় বড়ুয়া ও চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন।

প্রাথমিকভাবে ইসির ওই সাতজনের বিরুদ্ধে ৫১ জন রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার অভিযোগে এ অনুসন্ধান শুরু হল। ওই পরিচয়পত্রের প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট পেয়েছে বলেও প্রমাণ মিলেছে।

সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া ও ল্যাপটপসহ নির্বাচনের সরঞ্জাম আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে বিতারিত রোহিঙ্গাদের এনআইডি দিয়ে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনেরও বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে দুদক।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ, উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন ও মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীর সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশনের কাছে এক চিঠির মাধ্যমে অনুসন্ধানের অনুমতি চায়।

চট্টগ্রামের এনফোর্সমেন্ট টিম চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের তিনটি পাসপোর্ট কার্যালয়সহ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা প্রায় দেড়শ’ পাসপোর্ট আবেদনপত্রের নথি সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে।

দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো এনফোর্সমেন্ট টিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় রোহিঙ্গাদের এনআইডি সংক্রান্ত নিউজ প্রকাশিত হলেও নির্বাচন কমিশনের সবাই দায়সারা কাজ করেছেন। তারা এই অভিযানের আগ পর্যন্ত ল্যাপটপ হারানো সংক্রান্ত কোনো জিডি বা মামলা এবং ল্যাপটপ উদ্ধারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সম্প্রতি দুদক থেকে অভিযান চালানোর পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিস কোতোয়ালি থানায় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শিমুল শর্মা বাদী হয়ে জেলার সদর থানায় ভোটার তালিকায় ৬০০ রোহিঙ্গার নাম উঠানোর অভিযোগে মামলা করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ কর্মচারীকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এটা ‘আইওয়াশ’ ও দায়িত্ব এড়ানোর কৌশলমাত্র। নির্বাচন কমিশনের অসৎ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সহযোগিতা ব্যতীত ভোটার তালিকায় নাম উঠানো কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া সম্ভব নয়। এতে বলা হয়,গুটিকয়েক কর্মচারীর পক্ষে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা অসম্ভব। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা ভোটার হলেও ফরম-২ দেয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা জড়িত মর্মে রেকর্ডপত্রের প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়।

তথ্য আপলোড দেয়ার ক্ষেত্রে ল্যাপটপ ছাড়াও ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন, আইরিশ মেশিন, ডিজিটাল সিগনেচার প্যাডসহ এনআইডিতে ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো কোনো কর্মচারীর নিকট থাকার কথা নয়। ল্যাপটপ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যহারের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। দুদককে পাশ কাটানোর জন্য দায়সারা মামলা করে জড়িত কর্মকর্তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।