অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ক্যাসিনো ডন সেলিম প্রধানের বাসা থেকে বিপুল মদ ও এককোটি টাকা উদ্ধার

0
.

অনলাইন ক্যাসিনো চালানো এবং মানিলন্ডারিংয়ে অভিযুক্ত সেলিম প্রধানের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে এক কোটি দেশি ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার র‌্যাব-১ এর অপারেশন অফিসার এএসপি সুজয় সরকার জানান, থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে রাতে সেলিমের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব এবং মো. আখতারুজ্জামান ও মো. রোমান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

.

আজ মঙ্গলবার সকালে সেলিমের বনানীর অফিসে অভিযান চালানো হয়।

সরকার বলেন, র‌্যাব ২৯ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা নগদ এবং ২৩টি দেশের ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার ২৩ টাকা সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা জব্দ করে। অভিযানে ৪১ বোতল বিদেশি মদ, ১২টি পাসপোর্ট, ৩২টি চেক, একটি ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপ এবং পাঁচটি মাস্টার কার্ড জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান জানান, সেলিম প্রধানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়।

এর আগে গুলশান-২ এর ১১/এ রোডে সেলিম প্রধানের বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ, নগদ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করে র‍্যাব।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক সারোয়ান বিন কাসেম জানান, আজ দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে র‌্যাব-১ এর বেশ কয়েকটি গাড়ি বনানীতে সেলিমের বাসায় অভিযান চালাতে রওনা দেয়। এছাড়া রাজধানীর গুলশান-২-এলাকায় সেলিম প্রধানের অফিস কাম বাসায় এখনো অভিযান চলছে। বনানীর বাসায় অভিযানের পর বিস্তারিত জানানো হবে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট থেকে ক্যাসিনো সেলিমকে নামিয়ে আনে র‍্যাব-১-এর একটি দল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তাকে নিয়ে গুলশান-২-এ তার বাসা কাম অফিস ‘মমতাজ ভিশনে’ অভিযানে যায় র‍্যাব। প্রথমে সেলিমকে সঙ্গে করে ঘটনাস্থলে যায় র‍্যাবের তিনটি গাড়ি। পরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ টিতে। ১৬ ঘণ্টা পার হলেও এখনো অভিযান চলছে। বাসায় ভেতরে র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান করছেন। সেলিম প্রধান এখনও ওই বাসার ভেতরে র‌্যাবের সঙ্গে আছেন।

সেলিম প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন।

সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহসভাপতি। এ ছাড়া এর আগে গ্রেফতার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও।

সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জালটাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে তিনি খাটাল, মাদক ও জালটাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেন। দুই বছরে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোর বাংলাদেশ প্রধান সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতেন।

পরে এই অর্থ তিনি বিদেশে পাচার করতেন। এসব বিষয়ে এখন তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সেলিমের কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পি২৪ গেমিং শুরুতে বিনোদনমূলক সফটওয়্যার তৈরি ও প্রকাশ করত। এখন তারা এশিয়ায় দ্রুত বড় হতে থাকা ক্যাসিনো কারবারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। এশিয়ার লাইভ ক্যাসিনো মার্কেটে প্রতিষ্ঠানটি যেন এক নম্বরে যেতে পারে, সেই চেষ্টা আছে তাদের। ২০১৬ সালে তারা শুধু কম্পিউটার গেমস বাজারে আনত। পরে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়ে। পি২৪-এর সঙ্গে বাংলাদেশে ১৫০টি অপারেটর এবং ক্যাসিনো যুক্ত আছে। অনলাইনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার ক্ষমতা আছে তাদের। জুয়াড়িদের মুঠোফোনে লাইভ ক্যাসিনোতে যুক্ত করে দেয়ার সুবিধা তারা এনেছে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর।