অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ফটিকছড়িতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করে বিপাকে দুই ইউপি সদস্য

0
.

জেলার ফটিকছড়িতে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকে সরকারী প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করে বিপাকে পড়েছে দুই ইউপি সদস্যসহ সাক্ষীরা। দুদকে অভিযোগ করায় অভিযোগকারী ইউপি সদস্যসহ এক সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।  দুদকে বাদী হওয়া উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের দুই মেম্বার আনোয়ার হোসেন ও সুব্রত দেসহ যুবলীগ নেতা শাহিদুল আলম নাহিদ এ অভিযোগ করেন।

ইতোমধ্যে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে এক মাসের ব্যবধানে দুটি মিথ্যা কাল্পনিক মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে জানান ইউপি সদস্য আনোয়ার। এ ছাড়া দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়েছে এক সাংবাদিকের নামেও।

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলমকে প্রশাসনিকভাবে প্রশ্রয় দেয়া উপজেলার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে ব্যবহার করে এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে যে সব লোক দুদকে সাক্ষ্য দিয়েছে তাদেরকেসহ অনিয়মের সংবাদ গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশকারী সংবাদকর্মীকেও একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানির পরিকল্পনা করেছে উক্ত সিন্ডিকেট। প্রভাবশালী উক্ত সিন্ডিকেটের সহায়তায় ইতিপূর্বে আবু মুছা জীবন নামে এক সংবাদকর্মীকেও মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে।

জানা যায়, উপজেলার দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলমের বিরুদ্ধে ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয়ের ৪৬ প্রকল্প ও হতদরিদ্রদের জন্য গৃহীত কর্মসৃজন কর্মসুচীর কোটি টাকারও বেশী অর্থ অনিয়মের মাধ্যমে লোপাটের অভিযোগ দায়ের করা হয় দুদদকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে দায়ের করা দুটি অভিযোগেরই তদন্ত করছে দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়-২। এর আগে ৪৬ প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের উপ পরিচালক(স্থানীয় সরকার) মো. খুরশিদ আলম তদন্ত করে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে মর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাঁর প্রদত্ব তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা নেননি জেলা প্রশাসন। এদিকে এরই মধ্যে ২০১১-১২ অর্থ বছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর সময়ে হতদরিদ্রদের জন্য নেয়া কর্মসৃজন কর্মসুচীতেও অনিয়মের অভিযোগ করেন স্থানীয় উপজেলা যুবলীগ নেতা শাহিদুল আলম নাহিদ। বর্তমানে দুটি অভিযোগই দুদকের তদন্তাধিন।

অভিযোগের বাদী আনোয়ার হোসেন মেম্বার জানান, দুদকে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে উপজেলার একটি প্রভাবশালী মহল ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে ব্যর্থ হন। দফায় দফায় প্রচেষ্টা চালিয়েও অভিযোগ প্রত্যাহারে ব্যর্থ হয়ে উক্ত সিন্ডিকেট উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশকে প্রভাবিত করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তিনি জানান গত ১২ সেপ্টেম্বর উপজেলার মো. তকির হাটে একটি সাজানো মারামারির ঘটনায় তাঁকে এজাহার নামীয় ২ নম্বর আসামী করে ফটিকছড়ি থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় যিনি বাদী হয়েছেন তাঁর সাথে আনোয়ার মেম্বারের কখনও দেখা পর্যন্ত হয়নি। উপজেলার দক্ষিন ফটিকছড়ির মো.তকির হাটের জনৈক জাহাঙ্গীরের ফার্নিচার দোকানে ১১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৭টায় ঘটনা উল্লেখ করা হয়। অথচ আনোয়ার মেম্বার বাড়ী হচ্ছে উপজেলার উত্তরাঞ্চলে দাঁতমারা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে।

এছাড়া গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভুমি বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলার দাঁতমারা এলাকায় জনৈক হালিম এবং তাঁর বড় ভাই রাজ্জাকের করাত কলে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান করেন। ট্্েরড লাইসেন্সসহ যাবতীয় কাগজ পত্রে এ করাত কলের মালিক রাজ্জাক হলেও এ অভিযানের পর রহস্য জনকভাবে মামলা দেয়া হয় আনোয়ারের বিরুদ্ধে। অথচ এর কয়েকমাস আগে বন বিভাগের স্থানীয় দাঁতমারা বিট কর্মকর্তা করাত কলটি নিয়ে মালিক রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একটি পিওআর বন মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে দাঁতমারা বিট কর্মকর্তা এ.কে.এম আমিনুর রহমান বলেন, করাত কলটি রাজ্জাকের হওয়ার পরেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়েদুল আরেফিন এবং সহকারী কমিশনার ভুমি জানে আলম এ ঘটনায় আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দিতে তাঁকে অনেকটা বাধ্য করেন। অভিযানের পর প্রথম দিকে আনোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দিতে রাজি না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দাঁতমারা বিট কর্মকর্তা রীতিমত সাশিয়ে দেন।
চেয়ারম্যানের অনিয়মের বিষয়ে দুদকে অভিযোগকারী শাহিদুল আলম নাহিদ বলেন, চেয়ারম্যানের পক্ষে উপজেলার একটি শীর্ষস্থনীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আমাদেরকে কোন ভাবে আপোষে আনতে না পেরে এখন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

অভিযোগকারী অপর ইউপি সদস্য সুব্রত দে বলেন, দুদকে অভিযোগ দেয়ার পর চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি একাধিকবার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ঐ সিন্ডিকেট স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে এ ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তিনি জানান, এর আগে অনিয়মের সংবাদ প্রচার করায় সাংবাদিক আবু মুছাকেও মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করে। বর্তমানে উক্ত সিন্ডিকেটের এ ধরনের কর্মকার্ন্ডে দুদকে অভিযোগকারী বাদীসহ সাক্ষীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে তিনি জানান।

সাংবাদিকের মামলায় ফটিকছড়ির ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সমন জারী