অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

থানা হাজতে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা: এলাকাবাসীর থানায় হামলা

0
.

রংপুরের পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানায় পশু ব্যবসায়ী সামসুল হক (৫৫) নামের এক আসামীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বুধবার পুলিশ-এলাকাবাসী সংঘর্ষ শুরু হলে ফাঁড়ি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসময় ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে।

এর আগে বুধবার সকালে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করলে এই সংঘর্ষের সূচনা হয়। নিহত পশু ব্যবসায়ী সামসুল হকের পরিবারের দাবি, তাঁকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করে ২ লাখ টাকা চাঁদা দেয়ার দাবি পূরণ না করায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে গামছা দিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, মঙ্গলবার রাতে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম মিঠাপুকুর উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের পশু ব্যবসায়ী সামসুল ইসলামকে বড়দরগা থেকে গ্রেফতার করে। পরে বুধবার সকাল ৯টায় ফাঁড়ির হাজতখানার গ্রিলের সাথে গামাছা ও পাঞ্জাবী পেচিয়ে সামসুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছে দাবি করে খবর দেয় পুলিশ।

তবে নিহত সামসুলের পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারের পর এসআই আমিনুল ইসলাম তাদের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় পুলিশ ফাঁড়ির হাজতখানায় সামসুর ইসলামকে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রীলের সাথে গামছা ও পাঞ্জাবী পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।

এদিকে বুধবার সকালে সামসুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে সামসুল হত্যার বিচার দাবি করে। পুলিশ এলাকাবাসীকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের সাথে এলাকাবাসীর তুমুল সংঘর্ষ বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এলাকাবাসীকে বেধড়ক পিটুনি ও মানুষের উপর রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় রাবার বুলেটে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান, পুলিশের ডি সার্কেলের এএসপি হাফিজ উদ্দিন, ভিক্ষুকসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে বড়দরগা থেকে পুলিশ সামসুল ইসলামকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করলে এলাকাবাসী তাতে বাঁধা দেয়। এসময় এলাকাবাসী পুলিশকে জানায়, তিনি (সামসুর ইসলাম) মাদক ব্যবসায়ী নন, একজন পশু ব্যবসায়ী। তারপরেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ফাঁড়ির ইনচার্জ অভিযুক্ত এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকেও আমি সামসুল ইসলামের সাথে ‘কথা বলেছি’। কিছুক্ষণ পরেই ‘গিয়ে দেখি’ থানা হাজতের গ্রিলের সাথে গামছা ও পাঞ্জাবী গলায় পেচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তাকে ‘কোন নির্যাতন করা হয়নি’। তার কাছে কোনো ‘চাঁদাও চাওয়া হয়নি’। তিনি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।

এ ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আছেন। সার্কেল এএসপি এ ঘটনায় আহত হয়েছে বলে শুনেছি। আমিও ঘটনাস্থলে আছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।