অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে চান নুসরাতের পরিবার

0
.

ফেনীর আলোচিত মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহার রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৬ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়ায় আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন নুসরাতের ভাই মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান। তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কারনেই আমরা আজ সুবিচার পেয়েছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

সব আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন। এসময় তদন্ত দ্রুত শেষ করায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান নুসরাতের বাবা।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দুপুরে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের এ তারিখ ঘোষণা করেন। মাত্র ৬১ কার্যদিবসে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে।

চলতি বছরের ১০ জুন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ আদালত। সেদিন থেকে মোট ৬১ কার্যদিবস চলে মামলার কার্যক্রম। এ সময়ের মধ্যে চলে ৮৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন, রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় অধ্যক্ষের সহযোগীরা।

৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আট জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে; যা মৃত্যুশয্যায় নুসরাত বলে গেছেন। ১০ এপ্রিল ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আসামিদের।

২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিআইবি) কর্মকর্তারা। সেদিন অভিযোগপত্রসহ মামলার নথি বিচারক ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির তারিখ ধার্য করেন।

পরে ১০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পরিদর্শক মো. শাহ আলম আদালতে মোট ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেন।

তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অন্য পাঁচজনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে পিবিআই। আদালত তা অনুমোদন করেন। তারা হলেন- নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলাম।

মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে ৭ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলায় গ্রেপ্তার মাদ্রাসারা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।