অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রেলের বাসা বরাদ্দ নিয়ে জমজমাট বাণিজ্য, দুদকের তদন্ত শুরু

0
.

সাইফুল ইসলাম শিল্পীঃ

বাংলাদেশ রেলওয়ের সরকারী বাসা বরাদ্দ নিয়ে তা বাইরে লোকজনকে ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে আয় করছে রেলের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারীরা রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে যুগযুগ ধরে এই বেআইনী কাজের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অপর দিকে রেলে চাকুরী করে বছরের পর বছর রেলের বাসা বরাদ্দ পাচ্ছে অধিকাংশ কর্মচারী।

সম্প্রতি এ নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি শুরু হলে টনক নড়েছে প্রশাসনের।  দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম এ ব্যাপারে অনুসন্ধ্যান শুরু করেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

.

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম এ অভিযান পরিচালনা করেন। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন উপ-সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ, সহকারী পরিদর্শক অধির চন্দ্র নাথ ও কনেস্টেবল ফিরোজ মাহমুদ।

রেলওয়ের তথ্যমতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রামের ৩০টি কলোনিতে চার ক্যাটাগরিতে মোট পাঁচ হাজার ৩২৯টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ২৩৭টি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য দুই হাজার ২৫৫টি এবং চতুর্থ শ্রেণির জন্য দুই হাজার ৬৮৪টি বাসা রয়েছে।

.

চট্টগ্রামে রেলওয়ের অধীনে থাকা কলোনিগুলো হলো- স্টেশন কলোনি, স্টেশন রোড এলাকা কলোনি, পলোগ্রাউন্ড কলোনি, হাসপাতাল কলোনি, সিআরবি অফিসার্স কলোনি, টাইগারপাস কলোনি, ফ্লোরাপাস কলোনি, বয়নিউ কলোনি, লালখান বাজার কলোনি, পাহাড়তলী নিউ ঝাউতলা কলোনি, পাহাড়তলী ঝাউতলা কলোনি, পাহাড়তলী টিপিপি কলোনি, পাহাড়তলী ডিজেল কলোনি, পাহাড়তলী উত্তর আমবাগান কলোনি, পাহাড়তলী ওয়্যারলেস কলোনি, পাহাড়তলী দক্ষিণ আমবাগান কলোনি, পাহাড়তলী সেগুনবাগান ও রেঞ্জ রোড কলোনি, পাহাড়তলী এক্স-ই জন কলোনি, পাহাড়তলী ফিল্টার বেড কলোনি, পাহাড়তলী মাস্টার লেন কলোনি, পাহাড়তলী শহীদ লেন কলোনি, পাহাড়তলী নিউ শহীদ লেন কলোনি, পাহাড়তলী ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভেলুয়ার দীঘিরপাড় কলোনি, পাহাড়তলী সিগন্যাল কলোনি, পাহাড়তলী পাওয়ার হাউস ও বাজার কলোনি, পাহাড়তলী স্টেশন কলোনি, পাহাড়তলী লোকো কলোনি, পাহাড়তলী হাসপাতাল কলোনি, ফ্রান্সিস রোড কলোনি এবং ইঞ্জিনিয়ার কলোনি।

.

অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই বাসা বরাদ্দ নিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য’ করছেন। তারা পুরো বাসা ভাড়াই দেননি, অনেকেই কোয়ার্টারের আঙিনা ও আশপাশের খালি জায়গায় নির্মাণ করেছেন কাঁচা-পাকা অনেক ঘর। এসব ঘর ভাড়া দিয়ে ‘উপরি আয়’ করছেন। এমন আয়ের সুযোগ থাকায় রেলওয়ের বাসার চাহিদাও বেশি। তাই বরাদ্দ এবং পছন্দের বাসাটি পেতে ঘাটে ঘাটে দিতে হয় অর্থ। অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া এসব বাসায় থাকা পানি ও বিদ্যুতের সংযোগও অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে।

এসব বাসায় রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাস করার কথা থাকালেও ৯০ শতাংশ বাসাতেই বাস করছে বহিরাগতরা। মূলত রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্ত-কর্মচারীর ও স্থানীয় প্রভাবশালীরাই তাদের থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। যার বিনিময় প্রতিমাসে আদায় করছে কোটি টাকা। অথচ নাম মাত্র কিছু টাকা রেল কর্তৃপক্ষ পেলেও বেশির অংশই কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রভাবশালীদের পকেটে।

.

দুদকের অভিযান সূত্রে জানা যায়, নগরীর টাইগারপাস, পাহাড়তলী রেলওয়ে কলোনীতে থাকা পাঁচ হাজার বাসার মধ্যেই ৯০ ভাগ বাসাই রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় বহিরাগতরা দখল করে আছে। একই সাথে প্রভাবশারী এই চক্র প্রতিটি কোয়াটারের সামনে ১০ থেকে ১৫ টি করে প্রায় কয়েকশত ঘর তুলেছে। যা থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করছে। অথচ এসব টাকার এক পয়সাও পায়না রেল কর্তৃপক্ষ।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঠক ডট নিউজকে বলেন, দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযান চালায় দুদক টিম। এসময় দুদক সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কোয়ার্টার বরাদ্দ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা এবং সরেজমিন পরিদর্শ করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশ করে কমিশন বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করবে অভিযানকারী দুদক টিম।

দুদক জানায়, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে রেলে বাসা বরাদ্দের বিষয়ে খবর প্রকাশের পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিজেরা গত ২৭ অক্টোবর ১৫৪টি বাসায় সিলগালা করে দিয়েছে কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এমন অনিয়ম চলে আসলেও এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থায় নেয় নি। এছাড়া কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া কিছু কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে দেখা যায় এই পাঁচ হাজার বাসার মধ্যে পাঁচ শতাধিক বাসা খালি রয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। রেলের শ্রমিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীরাই এসব বাসা দখলে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু এর এক পয়সাও যায়না সরকারি কোষাগারে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি।

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি দুদক কমিশনের অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হবে। অনুসন্ধানের অনুমতি পাওয়া গেলে এ বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।