অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নামের মিল: জুয়াড়ির বদলে ফেঁসে যাচ্ছেন খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ!

0
সম্রাটের সাথে তার ক্যাশিয়ার খোরশেদ আলম।

আলোচিত ক্যাসিনো কেলেংকারীতে শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ক্যাশিয়ার খোরশেদ আলমের জায়গায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তালিকায় নাম এসেছে খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম মাসুদের নাম।

ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অন্যদের সঙ্গে এ খাদ্য পরিদর্শকের নাম যুক্ত করে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংক হিসাব চেয়েছে দুদক। দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, পত্রপত্রিকা থেকেই খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম মাসুদের নাম তারা সংগ্রহ করেছেন। জুয়াড়ি খোরশেদের বিষয়ে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে, দ্রুতই খোরশেদসহ অন্য দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর থেকেই বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ক্যাশিয়ার হিসেবে তার বন্ধু খোরশেদ আলমের নাম চলে আসে। কিন্তু, গত দুই মাসেও এ খোরশেদকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উল্টো শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তালিকায় চলে এসেছে খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম মাসুদের নাম।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের তদন্তের বরাতে বারবার খোরশেদের নাম প্রকাশ করে। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত অন্যদের সঙ্গে এ খাদ্য পরিদর্শকের নাম যুক্ত করে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংক হিসাব চেয়েছে দুদক।

সম্রাটের ক্যাশিয়ার ভেবে দুদক তালিকাভূক্ত করেছে খাদ্য পরিদর্শক এই খোরশেদকে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধুমাত্র নামের মিল থাকার কারণেই জুয়ারি খোরশেদ আলমের পরিবর্তে দুদকের তালিকায় চলে আসে খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলমের নাম। তিনি খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি পদে ছিলেন। সরকারী চাকরিতে যোগদানের আগেই তিনি যুবলীগের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন।

মুহাম্মদ খোরশেদ আলম ২০০২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রমনা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওদিকে, যুবলীগের সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালে। মুহাম্মদ খোরশেদ আলম খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন ২০১৪ সালের মে মাসে। এর আগেই তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন।

খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলমের নাম তালিকাভুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা নিজেদের নাম প্রকাশ না করে বলেন, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত নাম থেকেই তারা এ তালিকা করেছেন।

খাদ্য পরিদর্শক মুহাম্মদ খোরশেদ আলম বাংলা ইনসাইডারকে বলেন: ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর খোরশেদের নাম পত্রপত্রিকায় আসা শুরু করে। নামের মিল এবং একই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় দুদকের এমন ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরিতে ২০১৪ সালে যোগদানের পূর্বেই যুবলীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলাম। এর আগে আমি মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি ছিলাম।’

তদন্ত সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে প্রতিমাসে বিপুল অংকের টাকা মাসোহারা পেতেন খোরশেদ। সম্রাটের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজধানীতে চাঁদাবাজিও করতেন। ক্যাসিনো জগতের আশীর্বাদে ফুলেফেঁপে ওঠেন। পাজেরো গাড়িতে এক সময়ের হতদরিদ্র খোরশেদ গানম্যানসহ চলাফেরা শুরু করেন। কোন পদপদবী না থাকলেও নিজেকে যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। যুবলীগ দক্ষিণের সভা সেমিনারে তাকে দেখা যেত অগ্রভাগে। সম্প্রতি তিনি ঠিকাদারিও শুরু করেছিলেন।

খোরশেদ আলম গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের মার্কেটের সামনে ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। সেখান থেকে বঙ্গমার্কেটের মজু চৌধুরী আর অলি চেয়ারম্যানের হাত ধরে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমের সাথে পরিচয়। চৌধুরী আলমই প্রথম তাকে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে জুয়া পরিচালনার দায়িত্ব দেন। সরকার পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবসহ ঢাকার ক্লাব পাড়ার দায়িত্ব নেন যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। সম্রাট এবং খোরশেদ দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারই সুবাদে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে জুয়া পরিচালনার দায়িত্ব পান খোরশেদ এবং কাকরাইলের হোটেল বয় জাকির। এরই মধ্যে র‌্যাবের অভিযানে জাকির গ্রেপ্তার হয়েছেন।

পরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার এনামুল হক আরমান এবং খোরশেদ যৌথভাবে ক্লাব পরিচালনা শুরু করেন। আরমানের সঙ্গে সিনেমা প্রযোজনার কাজও করেছেন খোরশেদ। ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমাটি তাদের দুজনের প্রযোজনায় নির্মিত।

দিনের অধিকাংশ সময় সম্রাটের কাকরাইলের অফিসে সময় কাটাতেন খোরশেদ। সেখানে সম্রাটের সঙ্গে তার কার্যালয়ে নিয়মিত জুয়া খেলতেন খোরশেদ, আরমান, কাশেমসহ আরো কয়েকজন। সম্রাটের অফিসের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে তার প্রমাণও রয়েছে।

সম্রাটের সঙ্গে খোরশেদ নিয়মিত সিঙ্গাপুরে যেতেন। সেখানে তিনি সম্রাটের ছায়াসঙ্গী হিসেবেই থাকতেন। বেবি ক্লাব এবং রয়েল কিং নামে দুটি ক্লাবের মালিক নিজেই।

সম্রাটের অবৈধ টাকার ক্যাশিয়ার হিসেবে এরই মধ্যে খোরশেদকে শনাক্ত করেছে আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্রাটের টাকা দিয়েই নামে বেনামে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে দোকান, ফ্ল্যাট, কৃষিজমি, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক বনে গেছেন খোরশেদ। সম্রাটের কাকরাইলের অফিসের পাশেই ইস্টার্ন মার্কেটে তার দোকান রয়েছে। এছাড়া পলওয়েল মার্কেট, সুন্দরবন মার্কেট, বঙ্গবাজারসহ গুলিস্তানের অধিকাংশ মার্কেটে তার নামে বেনামে দোকান রয়েছে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে খোরশেদ অনেকটা আড়ালে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো সক্রিয় রয়েছেন। সম্রাটসহ অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবির পাশাপাশি তিনি চলমান শুদ্ধি অভিযানের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেন। সম্রাটকে অনুকরণীয় নেতা হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চেয়ে খোরশেদ আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার ব্যবহৃত একটি হোয়াটস অ্যাপ নাম্বারে কল করা হলেও সেটা রিসিভ করেননি তিনি।

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে এলিট ফোর্স র‌্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, দ্রুতই দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে