অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন ভুয়া আইনজীবি সালাউদ্দিন!

0
ভুয়া আইনজীবির বাড়ীতে ঝুলছে দুটি সাইনবোর্ড। ইনসেটে ভুয়া আইনজীবি সালাউদ্দিন।

দেখতে সুদর্শন স্বাস্থ্যবান। চেহারা সুরত এবং চলাফেরা ধরণ দেখে কারও সন্দেহ করার অবকাশ নেই তিনি কি ভদ্রলোক না প্রতারক! আর এসবকে পূঁজি করে আইনজীবি সেজে দীর্ঘ বছরের পর বছর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু প্রশাসনের কর্মকর্তার সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন এ্যাডভোকেট পরিচয়ধারী সালাউদ্দিন নামে এই ভূয়া আইনজীবি।

প্রবাদ আছে “চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন” কথিত আইনজীবি সালাউদ্দিনের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে।

রীতিমত বাড়ীর দেয়ালে তিন তিনটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ভিজিটিং কার্ড সীল ছাপ্পর বানিয়ে এতো বছর সুপ্রিমকোট জজকোটের আইনজীবি সেজে দিব্বি ধান্ধাবাজি চালিয়ে আসছিলেন এই সালাউদ্দিন।

.

পারিবারিক বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী ফয়েজ আহম্মদ নামে একজন নীরিহ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন সালাউদ্দিন।

আদালত এই ভুয়া আইনজীবিকে দিনভর আদালত চলাবস্থায় কাটগড়ায় দাড় করিয়ে রাখার পর বিকালে আদালত শেষ হওয়ার পর জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।

বুধবার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শফি উদ্দিন এর আদালতে এই ঘটনা ঘটে।

মামলার বাদী ফয়েজ আহম্মদ পাঠক ডট নিউজকে জানান, নগরীর খুলশী থানার ১৩২১ লালখান বাজার (হাই লেভেল বোড) তার বাড়ী। তার প্রতিবেশী সালাউদ্দিনের পরিবারের সাথে তাদের পরিচয় প্রায় ৪০ বছর। সালাউদ্দিনদের আদিবাড়ী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা হলেও তারা ৪০/৫০ বছর ধরে লালখান বাজারে বাসিন্দা। সালাউদ্দিনের জন্মও লালখান বাজারে। ফয়েজ আহম্মদ বলে আমার জানা মতে সালাউদ্দিন স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেন নি। তার আইন পেশা পড়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি আইনজীবি সেজে দিব্বি প্রতারণা করে আসছিলেন। মূলত সালাউদ্দিন একজন মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী। সে তার মাদক পেশা চালানোর জন্য নিজেকে আইনজীবি কখনো পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আসছে।

এলাকার লোকজন তার এসব জেনেও হয়রানীর ভয়ে মুখ খুলতে এবং প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না।

দুই মাস আগে এই সালাউদ্দিন লালখান বাজার এলাকায় ইয়াবাসহ গ্রেফতার হলেও পুলিশ আইনজীবি পরিচয় পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয় বলে জানান ফয়েজ আহম্মদ।

.

প্রতিবেশীর হওয়ার কারণে সালাউদ্দিনের পরিবারে সাথে ফয়েজ আহম্মদের জায়গা সম্পত্তির বিরোধ রয়েছে। তারই জের ধরে গত কোরবানীর ঈদের ‍দুইদিন পর সালাউদ্দিন ফয়েজ আহম্মদের বেশ কিছু মূল্যবান গাছ কেটে ফেলে।

এনিয়ে ফয়েজ স্থানীয় খুলশী থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ এই মামলা নেয়নি। কারণ পুলিশকে বলেছে সালাউদ্দিন হাইকোর্টের বড় উকিল। আপনারা তাদের সাথে মিমাংসা করে ফেলেন।

থানায় প্রতিকার না পেয়ে ফয়েজ আহম্মদ আদালতে মামলা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সালাউদ্দিন ফয়েজ আহম্মদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি পাল্টা কাউন্টার মামলা দায়ের করেন।

পরে পুলিশী তদন্তে সে মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। অপর দিকে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা গাছ কাটার মামলায় আদালতে তার বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ।

বুধবার সে মামলায় জামিন নিতে গিয়ে ফেঁসে যান সালাউদ্দিন। আদালতে তিনি নিজেকে হাইকোর্ট এবং জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি পরিচয় দিলে আদালতের সকল আইনজীবি এবং আইনজীবি সমিতির নেতৃবৃন্দ তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। আইনজীবিরা আদালতকে জানান, সালাউদ্দিন প্রকৃত আইনজীবি না। তিনি নিজেকে আইনজীবি পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এর স্বপক্ষে আইনজীবিরা আদালতে প্রমাণ পত্রও দাখিল করেন।

এসময় বিচারক মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন- আপনিতো আমার আদালতেও কিছুদিন আগে মামলা পরিচালনা করেছিলেন!

আদালত সালাউদ্দিনকে দিনভর কাটগড়ায় দাড় করিয়ে রেখে তিনি যে আইনজীবি তার পক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে বললেও তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। পরে তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন পুলিশকে।

চট্টগ্রাম আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইয়ুব খান জানান, সালাউদ্দিন পিতা শাহ আলম নামে কোন আইনজীবি সমিতির সদস্য না। এই সালাউদ্দিন একজন ‍ভূয়া আইনজীবি। তিনি মানুষের সাথে আইনজীবি পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছেন।