অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“বেশী না, মাত্র ২৮৬টা বিয়ে করেছেন তিনি”…..

0
.

বেশী না মাত্র ২৮৬ বিয়ে করেছেন তিনি। আর এই আড়াই শতাধিক বিয়ে করে রেকর্ড গড়লেন লালমনিরহাটের জাকির বেপারি নামের এই প্রতারক।

২৮৭তে এসে ধরা খেলেন বিয়ে পাগল জাকির। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্ম গেইট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ। তিনি এখন আসল শশুর বাড়ীতেই আছেন!

তার পুরোনাম জাকির হোসেন বেপারি। গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুরে। এই ব্যক্তি বিয়ে করেছেন প্রায় ২৮৬টি। চোখ কপালে উঠার মতো ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশেই। তবে এতগুলো বিয়ে করেছেন মূলত প্রতারণার পেশা থেকে।

কাউকে কাবিনে, কাউকে শুধু কালেমা পড়েই বিয়ে করেন তিনি। নিজেই এমন একটি খুদেবার্তা দিয়েছিলেন প্রতারণার শিকার হওয়ার পর মামলা করা এক নারীকে। অবশেষে তেজগাঁওয়ের একটি ধর্ষণ মামলায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই প্রতারক জাকিরকে গ্রেফতার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ।

.

টেলিফোনে আলাপকালে তেজগাঁও থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার পাঠক ডট নিউজকে জানান, এই ব্যক্তি মূলত একজন মারাত্মক প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমেই সে এতগুলো বিয়ে করেছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। তবে বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মো. পারভেজ ইসলাম জানান, প্রতারক জাকিরের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় এক নারী মামলা করেছিলেন। তার সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ে বা শারীরিক সম্পর্ক গড়েছিলেন।

সেই নারী মামলা করার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়ে জাকির লিখেছিলেন, ‘তোর মতো ২৮৬ জনকে পার করলাম। আর তুই মামলা করলি।’ মূলত তার ওই খুদেবার্তা থেকেই তথ্য জানা গেছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে, প্রতারণার মাধ্যমে জাকির অনেক মেয়েকেই বিয়ে বা তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়েছেন।

.

এদিকে অন্য এক সুত্রে জানাগেছে, তার বিরুদ্ধে গত বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করেছেন মণিপুরি পাড়ার একটি ছাত্রী হোস্টেলের ২৬ বছর বয়সী এক তরুণী। অভিযোগের ভিত্তিতে সে দিনই জাকির ও তার সহযোগী জায়েদা আক্তার শাপলাকে গ্রে’প্তার করে তেজগাঁও থানাপুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তৌফিক আহমেদ জাকিরের ৫ দিনের রিমা’ন্ড চাইলে আদালত তার ২ দিনের রিমা’ন্ড মঞ্জুর করেন। রিমা’ন্ড না চাওয়ায় শাপলাকে কা’রাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

জানা গেছে, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকিরের রয়েছে এক বিশাল সিন্ডিকেট। সংঘব’দ্ধ ওই চক্রে রয়েছে ন’কল কাজী ও মৌলভি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। তাদের সঙ্গে কথা বলিয়ে ভুক্তভোগীদের বুঝতেই দিতেন না কী ভয়’ঙ্কর প্রতা’রণার ফাঁ’দে ফেলা হচ্ছে তাদের। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধ’র্ষণ করেছেন।

এরপর অন্তরঙ্গ’ ছবি তুলে সেগুলো ইন্টারনেটে ছাড়ার হু’মকি দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ। সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্র’তারণার ফাঁদ পেতেছিলেন জাকির। অবশ্য এবার তিনি নিজেই ফাঁদে পড়েন; আগেভাগেই প্র’তারণার শিকার নারী বুঝে ফেলেন জাকিরের উদ্দেশ্য। ওই তরুণী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে গত ৩১ অক্টোবর জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয়।

এর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সঙ্গে জাকির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ৭ নভেম্বর নিজস্ব সিন্ডিকেটের হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন। হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান তিনি ওই তরুণীকে এবং তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন বেশ কয়েকবার। শুধু তাই নয়, নানা বিপদ বা সমস্যার কথা বলে জাকির ওই তরুণীর কাছ থেকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন।

জাকিরের প্রতারণার শি’কার রাজধানীর গুলশান, উত্তরা, মিরপুর, বারিধারা, মালিবাগ, দক্ষিণখান, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী ১৭ ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই জাকিরকে শনাক্ত করে তাকে প্রতা’রক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে জাকিরের তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতা’রণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও ভিডিও ক্লিপ।

পুলিশের কাছেও বিয়ের নামে প্রতা’রণার চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন জাকির। এদিকে জাকিরের বিরুদ্ধে মিরপুর এলাকার ভুক্তভো’গী যে তরুণী মামলা করেছেন, তিনি অভি’যোগ করেন ওই প্র’তারকের সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্নভাবে তাকে মামলা তুলে নিতে হু’মকি দিচ্ছেন। না হলে তার মুখ অ্যাসিড দিয়ে ঝ’লসে দেওয়া হবে এবং অন্ত’রঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে হু’মকি দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী তরুণীরা জানান, জাকিরের প্র’তারণার শিকার সবার গল্প প্রায় একই রকম।

যেমন- জাকির প্রথমে বেছে নেন ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবী নারী। এরপর ফেসবুক অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজেকে অবিবাহিত এবং প্রচুর টাকার মালিক ও প্রভাবশালী পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। নানাভাবে বিয়ের জন্য রাজি হতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে তার নির্ধারণ করা কোনো বাসায় নকল কাজী বা হুজুর ডেকে এনে পড়ানো হয় বিয়ে। এরপর কৌশলে তাদের অ’ন্তর’ঙ্গ ছবি তুলে রাখেন জাকির। বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পরই বেরিয়ে আসে তার আসল চেহারা।

বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মেয়ের সব টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে একপর্যায়ে সটকে পড়েন তিনি। বন্ধ করে দেন সব ধরনের যোগাযোগ। এরপর নতুন কোনো মেয়েকে একইভাবে বিয়ের ফাঁ’দে ফেলেন। পরবর্তী সময়ে কোনোভাবে ভুক্তভো’গীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে অ’স্বীকার করেন বিয়ের কথা। ভুক্তভোগী কেউ প্রতিবা’দী হলেই তার ব্যক্তিগত ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ফের ব্লা’কমেইল করা শুরু করেন। সম্মান খো’য়ানোর হু’মকি দিয়ে তার কাছ থেকে আদায় করেন লাখ লাখ টাকা।

কথা না শোনায় ইতোমধ্যে কয়েকটি মেয়ের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন জাকির। তার বিয়ের ফাঁদে পড়ে এখন অনেক তরুণীরই জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। সামাজিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে অনেকের পরিবারও। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই তৌফিক আহমেদ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জাকির বিয়ের নামে অনেক নারীর সঙ্গে প্রতারণা করার কথা স্বীকার করেছেন। এসব কা-ের তথ্যপ্রমাণও পাওয়া গেছে। দুই দিনের রি’মান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছে পাওয়া তথ্যানুযায়ী এ চক্রে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে, জানান এসআই তৌফিক।