অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রোহিঙ্গা গণহত্যা: মিয়ানমারের চার শীর্ষ জেনারেলের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

0
.

রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ চার সামরিক কর্মকর্তার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরা হলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সোয়ে উইন, ৯৯ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও এবং ৩৩ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার এই চার সেনাকর্মকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এর আগেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন এখন পর্যন্ত যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে তার মধ্যে এবার সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হল। এর ফলে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়ী কার্যক্রম চালাতে পারবেন না মার্কিন নাগরিকেরা।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পল এস রাইখলার আদালতের কেন অন্তর্বর্তী পদক্ষেপের নির্দেশনা দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে মঙ্গলবার যুক্তি তুলে ধরেন। রাইখলার জাতিসংঘের বিভিন্ন তদন্ত ও প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বসনিয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু তথ্যের ভিত্তিতে আদালত অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দিয়েছেন, মিয়ানমারের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ।

শুনানিতে মিয়ানমারের বিভিন্ন জায়গায় অং সান সু চির সঙ্গে তিনজন জেনারেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবিসংবলিত ফেস্টুনের ছবি দেখিয়ে আইনজীবী রাইখলার বলেন, এই প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিল তাদের (সেনাবাহিনী ও সু চি) অর্জন (রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে) দেখানো। তিনি মিয়ানমারের নিজস্ব তদন্তকে লোকদেখানো বলে উল্লেখ করে বলেন, এই তদন্তের লক্ষ্য হচ্ছে গণহত্যা অস্বীকার করা।

রোহিঙ্গাদের শান্তির সন্ধানে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় বিচারের শুনানি শুরু হয়। মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে মামলাটি করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমার বৈশ্বিক সনদ লঙ্ঘন করেছে কি না, তার বিচারই আইসিজের এই শুনানির উদ্দেশ্য। একই শহরের ১০ কিলোমিটারের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), যেখানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এর আগে উত্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এখনো তদন্তাধীন। আদালতের কার্যক্রম আজকের মতো মুলতবি করা হয়েছে। বুধবার মিয়ানমার তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।

রাইখলার বলেন, গণহত্যা সনদে মিয়ানমারের যেসব দায়িত্ব আছে, সেগুলো দেশটি পূরণ করছে না বলেই গাম্বিয়া আদালতের কাছে সেগুলো পালনের নির্দেশ দাবি করছে।

গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে শেষ বক্তব্য দেন ব্রিটেনের অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস। স্যান্ডস বলেন, আইসিজে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেবে কি না, প্রশ্ন সেটা নয়, প্রশ্ন হলো কী কী সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার নির্দেশনা দেবে?

শুনানি শেষ আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বিক্ষোভের মুখে পড়েন। গণহত্যার জন্য ‘শেইম অন ইউ সু চি’ স্লোগানে মুখরিত বিক্ষোভকারীদের সামনে দিয়ে তাঁর গাড়িবহর বেরিয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের অবশ্য পুলিশ আলাদা করে রাখে। মিয়ানমারের সমর্থনে তখন কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।

আদালতে ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুজন অ্যাডহক বিচারপতি। ওই দুজন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত। আদালতের সিদ্ধান্ত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। আদালতে অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে হাজির হয়েছেন। গাম্বিয়ার পক্ষে আছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। নিয়মানুয়ায়ী শুরুতেই দুই অ্যাডহক বিচারপতি গাম্বিয়ার নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস শপথ নিয়েছেন।