অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দেশের মেধাবি আলেমদের গোয়েন্দারা ধরে নিয়ে জেএমবি বানাচ্ছে-জুনাইদ বাবুনগরী

0
.

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে দু’দিন-ব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনের উদ্বোধনী দিবসে সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, নাস্তিক, মুরতাদ ও কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে আজীবন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। মুসলমানরা নিজের জীবনের চাইতেও মহানবী সা. কে বেশি ভালোবাসেন। নবীপ্রেম ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারীরা কাফের। ভন্ডনবী মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদিয়া জামাত নাম দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান হারা করছে। কুরআন, হাদীস ও উম্মতের ঐক্যমত হলো কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুসলমান নয়। তাই এদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

তিনি আজ ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে দু’দিন-ব্যাপী শা’নে রেসালত সম্মেলন অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এর আগে বাদ জোহর থেকে দুদিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়।

জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, নিরীহ আলেম উলামা ও ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক নাগরিদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করার কুমতলবে গুম খুন করে ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরীর অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। মেধাবি আলেমদের গোয়েন্দারা ধরে নিয়ে জেএমবি বানানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসকন একটি উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন, হিজবুত তাওহিদ ইসলামের অপব্যখ্যা করে মুসলমানদের ঈমান হারা করছে। এদের নিষিদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) আনুগত্যের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে তাগুতি, কুফরী, সাম্রজ্যবাদী, ইসলাম ও দেশ বিরোধী শক্তির মোকাবেলা করতে হবে।

.

চার অধিবেশনে বিভক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলাম, মাওলানা লোকমান হাকীম, মাওলানা আলী ওসমান ও মাওলানা শেহাবুদ্দিন মদুনাঘাট।

এতে বক্তব্য রাখেন, দারুল উলুম হাটহাজারীর সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা শেখ আহমদ, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, ড.আ ফ ম খালিদ হোসেন, মুফতি নজরুল ইসলাম কাসেমী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, মুফতি কুতুবুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা ইসমাঈল খান, মাওলানা মোস্তফা নুরী, মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ, মাওলানা জাফর আহমদ, মাওলানা এনায়েতুল্লাহ, মাওলানা আনিসুর রহমান, মাওলানা আবদুল করিম প্রমূখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মাওলানা মুঈনুদ্দিন রুহী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আ ন ম আহমদ উল্লাহ।

আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ভারতের রাজ্যসভায় মুসলিম বিরোধী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়ে বলেন, মুসলমানরাই ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠির কবল থেকে ভারত স্বাধীন করেছে। সেই ভারতে মুসলিম বিরোধী আইন পাস হলে সন্ত্রাসবাদী মোদী সরকারকে তার মাসুল দিতে হবে। তিনি বলেন, মোদী সরকারের হাতে কাশ্মিরের মুসলমানরা নির্যাতিত, আরাকানের মুসলমানরা সুচি সরকারের নির্যতনে মাতৃভূমি হারা, চীনের উইগুর, ইরাক সিরিয়ায়সহ বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা ইহুদী খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে মুসলমানরা অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার। নরওয়েতে কুরআনের গায়ে আগুন লাগিয়ে মুসলিম উম্মাহর অন্তরে আঘাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশে তাদের এজেন্টরা নিরীহ আলেম উলামা ও ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক নাগরিদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করার কুমতলবে গুম খুন করে ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরীর অপচেষ্ঠা চালাচ্ছে। মেধাবি আলেমদের গোয়েন্দারা ধরে নিয়ে জেএমবি বানানো হচ্ছে। আলেমরা এদেশের নাগরিক, আইন বিরোধী কোন কর্মকা-ে তারা জড়িত নয়, কোন দাগী আসামিও নয়, আলেমরা শান্তি প্রিয়, সমাজে তারা মর্যদাশালী। এরা কোন অন্যায় করেনা। আলেম ওলামাদের সাথে জুলুমের পরিনতি খুব ভয়াবহ। নায়েবে রাসুল আলিদের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে, অন্যায় জুলুম করে অল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, আল্লাহর জমিনে নাস্তিকদের থাকার স্থান নেই। শাপলা চত্বরের শহীদদের বিচার বাংলার সবুজ চত্বরে একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন-নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীরা মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) এর শানে বেয়াদবি করছে। আমরা তা সহ্য করতে পারিনা।

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক কোন এজেন্ডা নেই, তাই ধর্মীয় ও ঈমানী কোন বিষয়ে ছাড় দিতে পারিনা। ধর্ম ও রাসূলের সা. অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তির জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করুন এবং কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষণার ঈমানী দাবী বাস্তবায়ন করুন। অন্যথায় যে কোন কঠিন আন্দোলনের জন্য তৌহিদী জনতা প্রস্তুত রয়েছে।

আল্লামা বাবুনগরী বলেন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দ্বারা আমাদের তরুণসমাজের চরিত্র নষ্ট করা হচ্ছে। বিপিএলের উদ্বোধনীতে ভারতীয় নর্তকী এবং আযান বিদ্বেষীকে এনে মুসলমানদের কলঙ্কিত করা হয়েছে। দুর্নীতি-সুদ-ঘুষ-ব্যাভিচার সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে। মানুষের জীবন থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং খোদাভীতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই সমাজের সর্বস্তরে কুরআনের শাসন কায়েম করতে হবে।

আগামীকাল ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দুদিন ব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনের শেষ দিন। বাদজুমা থেকে বয়ান শুরু হবে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ও দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. আখেরী নসীহত পেশ করবেন এবং দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।