অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

শিক্ষাবোর্ড পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্যের অভিযোগ

0
.

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।

তিনি চট্টগ্রামের বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বাতিল এবং নতুন অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন।

এ ছাড়া, অ্যাডহক কমিটির বিরুদ্ধেও স্কুলের বিধি-বিধান লঙ্ঘনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

যার ফলে স্কুলের পড়ালেখা ব্যহত হচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্কুলের অভিভাবকরা।

স্কুলের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে তারা শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

৯ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।

তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, এ ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। তাছাড়া বেসরকারি স্কুলের বিষয়ে দেখার এখতিয়ারও আমার নেই। বিষয়টি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড দেখেন।

বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান (পদ শূন্য) এর অবর্তমানে (পদ শূন্য) বোর্ডের সচিব প্রফেসর আবদুল আলীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসে। সুনির্দিষ্ট ভাবে বাকলিয়া আদর্শ বালিকা ‍উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযোগ আসছে কি না বলতে পারছি না। আমি আগামী কর্মদিবসে ফাইল দেখে বলতে পারবো।

সচিব বলেন, শুধু বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন, কোন স্কুলের অনিয়ম দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না। ফাইল দেখে এ ধরনের অনিয়ম হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

আপনার বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তাদের বিশ্বাস করি বলে তাদের তৈরিকৃত ফাইলগুলো অনুমোদন দেই। এখন তারা যদি কোন প্রকার অনিয়ম করেন, তাহলে অবশ্যই দেখবো।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী ১৬ অক্টোবর স্কুলের নিয়মিত ম্যনেজিং কমিটি বাতিলের চিঠি দেয়।

ইতোপূর্বে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রধান শিক্ষক প্রার্থী মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনকে স্কুলে নিয়োগ না দেয়াসহ আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে চিঠিতে তিনি স্কুলের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের নির্দেশ দেন।

খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে গত ২৯ অক্টোবর উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করেন।

মহামান্য হাইকোর্ট ২৯ অক্টোবর অভিযোগ আমলে নিয়ে শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং শর্ত দেন।

এতে বলা হয়, আদালতের আদশের প্রত্যায়িত প্রতিলিপি প্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে মো. মাঈন উদ্দিনকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। না হলে চলমান ম্যনেজিং কমিটি বাতিল হবে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, ছয় মাসের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও আদালতের প্রত্যায়িত আদেশ আসার সাত কার্যদিবসের আগেই আদালতের আদেশ অমান্য করে স্কুলের ওই সময়ের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে তড়িঘড়ি করে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়।

শুধু তাই নয়, আদালতের আদেশ অমান্য করে অশিক্ষিত ও বিতর্কিত একজন ব্যক্তিকে সভাপতি করে গত পাঁচ নভেম্বর একটি অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করে শিক্ষাবোর্ড। প্রাথমিক স্কুলে এখন স্নাতক পাস শিক্ষানুরাগীকে স্কুল সভাপতি করতে বলা হয়েছে সেখানে বর্তমান সভাপতি অশিক্ষিত। তাছাড়া তিনি হত্যা মামলার আসামি। এমন একজন সভাপতির জন্য স্কুলের শিক্ষা পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

আদালতের আদেশ অমান্য করে স্কুলের অ্যাডহক কমিটি গঠনের বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, আদালতের আদেশ তো আমরা পাইনি। এ ধরণের অভিযোগ আমি অবশ্যই খতিয়ে দেখবো।

তিনি বলেন, আমি তো অনুমোদন দেয়ার কেউ না। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিবই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল, অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। স্কুলের সভাপতি বিতর্কিত কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে অভিযোগের বিষয়টি আমি দেখবো।

বিদ্যালয়ের বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে আমি মেট্রিক পাস করেছি। সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়েছি। ওই সময় সনদ জালিয়াতি হতো না। আমি অশিক্ষিত হলে আমি আপনার সঙ্গে কিভাবে এত সুন্দর করে কথা বলছি। যারা স্কুলের ভাল চায় না তারাই আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

হত্যা মামলার আসামি কিনা জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সন্ত্রাসী নই বরং সন্ত্রাসীরা আমার ভাতিজাকে খুন করে। সন্ত্রাসী হলে আমি কী করে এতদিন অন্য স্কুলে কমিটির সভাপতি ছিলাম।

অভিভাবকদের অভিযোগ, বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি একক সিদ্ধান্তে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শিক্ষক মাঈন উদ্দিনকে স্কুলে নিয়ে আসেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নবনিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

শুধু তাই নয়, বর্তমানে কর্মরত স্কুল থেকে ছাড়পত্র না নিয়েই অবৈধভাবে টানা ২/৩দিন তিনি স্কুলে অফিস করেন। অথচ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গার্লস স্কুল থেকে যেমন নিয়োগ পত্র দেয়া হয়নি, তেমনি বর্তমানে তিনি যেখানে আছেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।

তিনি বর্তমানে অন্য একটি স্কুলের (আল জাবের ইনষ্টিটিউট স্কুল) সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা শুরু হলে মাঈন উদ্দিন আর এই স্কুলে আসছেন না।

তবে তিনি দ্রুত ছাড়পত্র নিয়ে স্কুলে যোগদানের জন্য অপেক্ষায় আছেন বলে খোদ জানিয়েছেন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, ছাড়পত্র আনার সঙ্গে সঙ্গেই মাঈন উদ্দিনকে আমরা নিয়োগ দিয়ে দেব। এখনো ছাড়পত্র আনতে না পারায় নিয়োগ পত্র দিতে পারছি না।

জানা গেছে, শিক্ষক মাঈন উদ্দিন যখন এই স্কুলের শিক্ষক পরীক্ষায় প্রথম হন, যখন তাকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দিতে চাননি, তখন শিক্ষক মাঈন উদ্দিন স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সিনিয়র সহকারী জজ পঞ্চম আদালত, চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করেন।

মামলা এখনো বিচারাধীন। নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই তাকে কিভাবে শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলীর চিঠি মোতাবেক বাকলিয়া আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার জন্য কতদিন সময় দেয়া হবে সেই প্রশ্নও উঠেছে।

আদালতে আপনার মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই আপনি কিভাবে নিয়োগ পত্র ও ছাড়পত্র ছাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস করেছেন জানতে চাইলে শিক্ষক মাঈন উদ্দিন বলেন, আমি এখনো আলজাবির স্কুলে শিক্ষক হিসেবে আছি, পরে কথা বলবেন বলেই মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বরাবরে স্কুল অভিভাবকদের অভিযোগে জানানো হয়, আদালতের আদেশ অমান্য করে গঠিত স্কুলের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম প্রথম মিটিং ডাকেন তার ইচ্ছামত।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯ এ বলা হয়েছে, ম্যানেজিং কমিটির কোন বিশেষ সভা, জরুরি সভা ডাকতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে নোটিশ দিতে হবে। আর সাধারণ সভার জন্য অন্তত সাত দিন পূর্বে সদস্যদের নোটিশ দিতে হবে।

কিন্তু বর্তমান অ্যাডহক কমিটি একদিনের নোটিশে জরুরি সভা করেন। জরুরি সভায় একটির অধিক আলোচ্য বিষয় রাখার বিধান না থাকলেও নিয়ম ভঙ্গ করে একাধিক আলোচ্য বিষয় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

একইভাবে কমপক্ষে সাত দিনের নোটিশের জায়গায় বিধি ভঙ্গ করে তিনদিনের নোটিশে সাধারণ সভা করেন।

শুধু তাই নয়, শিক্ষাবোর্ডের স্কুল পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এম এ ছফা চৌধুরীর কাছ থেকে আর্থিক ক্ষতিপুরণ আদায় না করার কারণে স্কুলের আগের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করেছিলেন, নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি প্রথম সভায় সেই শিক্ষকের কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ না নিয়ে উল্টো তাকে ক্ষমা করে দেন। যা স্কুল পরিদর্শকের সিদ্ধান্তকেই লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

এ বিষয়ে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনে কমিটির মিটিং করা হয়েছে। তবে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক এম এ ছফা চৌধুরী একজন চোর, তাকে ক্ষমা করা আমার ঠিক হয়নি। আমি কমিটির মিটিং ডেকে সেই সিদ্ধান্ত আবার প্রত্যাহার করে নেব।

আগের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ নাসির মিয়া জানান, বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির এবং ব্যক্তিত্বহীন মনে হওয়ায় মাঈন উদ্দিনকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ম্যানেজিং কমিটি এবং এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির পূর্ণ আইনগত অধিকার রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান স্কুল পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী আইন-আদালত কিছুই মানছেন না। আদালতের আদেশ অমান্য করে আমাদের বৈধ কমিটি ভেঙ্গে অবৈধভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিকে সভাপতি করে অবৈধ অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছেন। বর্তমান অ্যডহক কমিটির বিতর্কিত সভাপতিও ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকার একমাত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ধ্বংস করে দিচ্ছেন। সুত্রঃ রাইজিং বিডি।