অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

সাহিত্যিক সংগঠক ফাহমিদা আমিন আর নেই

0
.

বিশিষ্ট রম্য লেখিকা, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফাহমিদা আমিন আর নেই। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) ৮১ বছর বয়সে সাহিত্যিক ফাহমিদা আমিন যুক্তরাষ্ট্রের টলিডোর হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্নালিল্লাহে..রাজেউন)।

ফাহমিদা আমিনের পুত্র রিফায়েত আমিন তার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে জানান, মা দীর্ঘদিন ধরে নানান ধরনের শারিরিক সমস্যায় ভূগছেন। বেশ কিছুদন তিনি টলিডোর হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন। চিকিৎসকরা আজ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দেশের সাহিত্য অঙ্গনে পরিচিত মুখ ফাহমিদা আমিন ১৯৩৬ সালের ১৬ জানুয়ারী খুলনা জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম দরখশাঁ আখতার ফাহমিদা খাতুন। খুলনার ফুলতলা থানার পায়গ্রাম কসবা গ্রামে এবং খুলনা শহরের বাবুখান রোড়ে তার পৌত্রিক বাড়ি থাকলেও পিতা শেষ জীবনে রাজশাহীর স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছিলেন। চাকুরীর সুবাদে পিতার বদলীর কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এবং পশ্চিম বঙ্গের হুগলী ও কোলকাতায় ফাহমিদা আমিনের বাল্যকাল কেটেছে। ৪ বোন আর ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পিতা মাতার দ্বিতীয় সন্তান।

.

বিভিন্ন জেলার ১১টি স্কুলে লেখা পড়া করেছেন তিনি। ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রামের অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৭ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৪ সালে বি এ পাশ করেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এম এ ডিগ্রী লাভ করেন।

জানাগেছে ১৯৫২ সালের ৪ এপ্রিল ৯ম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় ফাহমিদা আমিনের বিয়ে হয়। চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও বিজ্ঞানী ড. এম আর আমিন এর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। মুলত স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় ফাহমিদা আমিন পরবর্তীতে শিক্ষালাভ এবং সমাজ সেবা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হন। বিবাহিত জীবনে ৬ পুত্র সন্তানের জননী তিনি। স্ব স্ব ক্ষেত্রে তার পুত্ররা সবাই প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন রত্মাগর্ভা মা। ১৯৭৫ সালে তিনি স্বামীর সাথে হজ্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ৬ জুলাই তার স্বামী ড, এম আর আমিন মারা যান।

.

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর বিদ্রোহে কতিপয় বিপদগামী বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্যদের হাতে অন্যান্য সেনা অফিসারদের সাথে ফাহমিদা আমিনের দ্বিতীয় সন্তান লে. কর্ণেল এনশাদ ইবনে আমিন খুন হন। সন্তানের নির্মম ও অকাল মৃত্যু ফাহমিদা আমিন অনেকটা মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন।

স্বনামধন্য লেখিকা ফাহমিদা আমিন দেশের সাহিত্যাঙ্গনের একটি পরিচিত নাম। এ পর্যন্ত দেশের স্বনামধন্য প্রকাশনাগুলো থেকে তার লেখা অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গ্রন্থ্য বেরিয়েছে।

সাহিত্যের বিভিন্ন এলাকা বিচরণ ছাড়াও তিনি গল্প, ছড়া, রম্য রচিয়তা, ভ্রমন কাহিনী লেখার মধ্য দিয়ে সারাদেশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

.

সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন এবং গীতিকার ছিলেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে তিনি অনন্যা অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। নারী পুনর্বাসনের ডিস্ট্রিক আর্গানাইজার হিসেবে তিনি কিছুদিন কাজ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যকরি পরিষদের সহ-সভানেত্রী বাওয়া শিশু সনদের উপদেষ্টা, চক্ষু হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির সহ সভানেত্রী ছিলেন। চট্টগ্রাম শিশু একাডেমী ও শিল্পকলা একাডেমীর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামের সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছাড়া নেমে এসেছে।