অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

দিল্লিতে আজ হাসিনা-মোদি-মমতার বৈঠক

0
.

ভারত সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ শনিবার (৮ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বৈঠক হতে পারে। কাঙ্ক্ষিত সেই বৈঠকে আলোচনার টেবিলে প্রধান ইস্যু থাকতে পারে তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা। সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের কথা বলেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া দিল্লিতে কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, গণ্যমান্য ভারতীয় ব্যক্তি ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে আসছেন বলে শুনেছি। তার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার অপেক্ষায় আছি। দেখি আগামীকাল (শনিবার) রাতে হয় কি না?’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা গঙ্গা ব্যারেজ করতে চাই ভারতের সহযোগিতা নিয়ে। সেটা দুই দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর এই ভারত সফরে বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তির বিষয়টি। যেটি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের মূল আকর্ষণের বিষয়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি সব সময় আশাবাদী। দেখি কী হয়।’

শুক্রবার দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রটোকলের তোয়াক্কা করেননি মোদি। বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এ ঘটনায় আমি অভিভূত। এত ব্যস্ততার পরও তিনি গেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, দুই দেশের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে।’

প্রটোকল অনুসারে ভারতের ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাঙালি গায়ক বাবুল সুপ্রিয়র শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর কথা ছিল।

বাবুল সুপ্রিয় বিমানবন্দরে উপস্থিতও ছিলেন। তবে পরে প্রটোকল ভেঙে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি।
স্থানীয় সময় বেলা একটার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক টুইটে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের দিল্লি সফরে প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমবেশি ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে নতুন করে ৫০০ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে ভারত। এর মধ্যে নতুন মাত্রা হচ্ছে ভারতের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলারের ঋণে সমরাস্ত্র কেনাকাটার বিষয়টি।

শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষ বৈঠকে বসছেন। ওইদিন শেখ হাসিনার সম্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির দেওয়া নৈশভোজে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, মমতার সঙ্গে বৈঠকের আগে শুক্রবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কেন্দ্র সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলাদের মধ্যে তিস্তার জট খুলতে বৈঠকও হয়েছে।

তবে তিস্তা চুক্তি নিয়ে যে আশাবাদী হওয়ার তেমন কিছু নেই সেকথা দেশটির পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর একপ্রকার স্পষ্ট করেই বলেছেন। তার ভাষ্য, তিস্তায় নাটকীয় কিছু ঘটে যাওয়ার মতো কোনো তথ্য তার হাতে নেই। চার দিনের এই সফরে শেখ হাসিনা থাকছেন নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে, ভারতের কূটনীতিকদের দৃষ্টিতেও যা বিরল ঘটনা।

রবিবার (৯ এপ্রিল) আজমির শরীফ ঘুরে এসে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। সোমবার ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনায় অংশ নেওয়ার পর বিকালে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।

এদিকে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালীন অবস্থান করছেন, সেখানেই সন্ধ্যায় এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামীকাল (আজ শনিবার) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড পরবর্তী সময়ে তার ভারতে প্রবাস জীবন কাটানোর সময়ের কথা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামক বঙ্গবন্ধু রচিত দুটি আত্মজীবনীর কপিও সুষমা স্বরাজকে উপহার দেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উপস্থিত ছিলেন।