অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

হাটহাজারীতে শিশু ঝুমা হত্যা: মামলা তুলে নিতে বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি

0
.

চট্টগ্রামের হাটাজারি জঙ্গল দক্ষিণ পাহাড়তলী হামজা কলোনি এলাকায় দরিদ্র স্কুল শিক্ষার্থী ঝুমা আক্তারকে (১২) খুনের দায়ে অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

গত ৮ জানুয়ারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২-এর বিচারক তিন আসামী আল আমিন, ফরিদা ইয়াসমিন ও মো. এনাম এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও উল্টো নিহত শিশুর মা সহ পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকী দিচ্ছে আসামী ও তাদের লোকজন।

মামলার বাদী ও নিহত শিশুর মা বিলকিস বেগম সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল যথারীতি আমি এবং আমার স্বামী পেশাগত কাজে বেরিয়ে পড়ি। আমার তিন মেয়ের মধ্যে ঝুমা ও সুমা স্কুলে পরিক্ষা দিতে যায় এবং আরেক মেয়ে পুর্নিমা ছোট ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে বাড়িতে খেলতে থাকে। কিন্তু ঐ দিন ঝুমার পরিক্ষা না হওয়াতে ঝুমা বাসায় চলে আসে এবং ছোট ভাই-বোনদের সাথে খেলতে থাকে। দুপুর প্রায় ০২ টার দিকে আমার বড় মেয়ে স্কুল থেকে বাসায় আসে। সুমা,পুর্নিমা ও ছোট ছেলে আব্দুল্লাহকে নিয়ে এলাকার মাইক কোম্পানির কুয়ায় গোসল করতে যায়। গোসল শেষে এলাকাবাসীর চিৎকার শুনে বাসায় এসে ঝুমাকে ঘরের চালের সাথে ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় আসামীরা ঘরেই ছিল। আসামীরা এটিকে আত্নহত্যা বলে চালালেও, ঝুমার লাশের পা দুটি মাটিতে এমন ভাবে লাগানো ছিল যে, দেখেই মনে হচ্ছিল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। সুমা ৩ নং আসামি এনামের মোবাইল ফোন হতে ঘটনা আমার স্বামীকে জানায় এবং আমরা ঘরে এসে দেখি ঝুমার লাশ মেঝেতে শোয়ানো, চোখ মুখ বন্ধ, গলায় কোন দাগও ছিলনা। তখন প্রায় সন্ধা ৬ টা। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর ঝুমার আত্মহত্যার কথা প্রচার করতে থাকে আসামিরা। মামলার পর ২ নং আসামি আমাকে বলেন, ১ টা মেয়েকে তো হারিয়েছিস অন্য মেয়েকে কি জেলের ভাত খাওয়াবো। তাই ভয়ে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহস পাইনি আমরা।

তবে এরই মধ্যে গত ১৬ মার্চ এ মামলার সাক্ষী প্রতিবেশী মোহাম্মদ দেলওয়ার হোসেনের কাছ থেকে দুইটি ছবি পাওয়া যায়। ছবি দুইটিতে ঝুমার লাশ ঝুলে থাকতে দেখা গেলেও পা দু’টি ছিল মাটির সাথে লাগানো। ছবি দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায়, এটা অাত্মহত্যা হতে পারে না। আসামিগণ যোগশাজশে, ঐক্যবদ্ধভাবে প্রশাসনের কাছে আমার মেয়েকে পাগল সাজিয়ে রিপোর্ট তৈরী পূর্বক অপমৃত্যুর মামলা করে চ.ম.ক হাসপাতাল থেকে ভূয়া রিপোর্ট তৈরী করে নেয়। এবং ২ নং আসামি নিজের টাকা খরচ করে লাশ দ্রুত দাফন করে আলামত নষ্ট করে, সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিজেদের কাছে রেখে দেয়। ঘটনার পর আসামি ফরিদা ইয়াছমিন আবাসস্থল ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া আরো নানান আচরণ পর্যালোচনা করে বুঝতে পারলাম ওরাই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। তাই আমি গত ২০ মে প্রধান আসামি আল আমিন সহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রাম আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-২ এ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি।

আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের আদেশ দেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত ২২ সেপ্টেম্বর কোন মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পোস্টমর্টেম অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। আমি এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করলে শুনানি শেষে আদালত নারাজি গ্রহণ করে তিন আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। তারপর থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শণ করছে। তাদের কথামত মামলা তুলে না নিলে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে এলাকা ছাড়া করবে এবং আমার মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যাবে।

এমতাবস্থায় আমার মেয়েদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েও আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এক মেয়েকে হারিয়েছি আবার কোন সন্তানকে হারিয়ে ফেলি প্রতিনিয়ত আতংকে কাটছে দিন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়ে গেছে। প্রশাসন যদি আসামিদের গ্রেফতার করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন তাহলে এই হত্যা কান্ডের মূল রহস্য উঠে আসবে। আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি। বাদিকে আইনি সহায়তা দেন আইনজীবী তুতুল বাহার। তিনি বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখেন। এবং সব কিছু ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আদালত নারাজি গ্রহণ করে তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।