অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

করোনা নিয়ে সতর্ক করা চিকিৎসকের মৃত্যু: ক্ষোভ বাড়ছে চীনাদের মাঝে

0
.

চীনে নতুন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সর্বপ্রথম সতর্ক করা চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর পর চীনা নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে এ ক্ষোভ সৃষ্টির পরই একটি জাহাজে চীনা নাগরিকদের উঠতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ক্রুজেস লিমিটেড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চীন, হংকং ও ম্যাকাও এই তিন দেশে ১৫ দিনের মধ্যে যাতায়াত করা অতিথি বা ক্রুদের তাদের জাহাজে উঠতে নিষেধ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘চীন, হংকং ও ম্যাকাওয়ের পাসপোর্টধারীদের আমাদের জাহাজে উঠতে দেওয়া হবে না।’

এদিকে এই নিষেধাজ্ঞার পরই চীনা নাগরিকদের দাবি, ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য চীন সরকার ও জাহাজ কোম্পানিকে দোষারোপ করছে তারা।

এর আগে গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং তাঁর সহকর্মীদের উদ্দেশে একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন, যেটি এর আগে ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী সার্স ভাইরাসের মতো ভয়াবহ বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ওই সময় এ কথাকে গ্রাহ্য না করে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয় লি ওয়েনলিয়াংয়ের বিরুদ্ধে।

এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে চীনজুড়ে। আর সেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংও। শেষ পর্যন্ত গত বৃহস্পতিবার মৃত্যু হয় তাঁর।

লি উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। গত ডিসেম্বরে সাত ব্যক্তির শরীরে তিনি নতুন এই ভাইরাসটি শনাক্ত করেন। লি তখনই বলেছিলেন, এ ভাইরাস সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

লি ওয়েনলিয়াংয়ের বাবা লি শুইং বলেন, ‘আমি মনে করি না সে (লি ওয়েনলিয়াং) গুজব ছড়িয়েছিল। এখন কি এটা বাস্তবে পরিণত হয়নি?’

এদিকে লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর পরই চীনজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাট ও ওয়েবোতে মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়য়েছে লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুর বিষয়টি। অনেকেই মনে করছেন, ওই চিকিৎসকের কথা শুরুতে শুনলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

এরই মধ্যে চীনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। আজ শনিবারের হিসাব অনুযায়ী, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২২ জনে। প্রায় দুই দশক আগে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ে সার্স ভাইরাসের মহামারিতে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে নতুন করোনাভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। হুবেই প্রদেশে কমপক্ষে ৮১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। চীনজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫৪৬ জনে। হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

করোনায় সংক্রমণের শিকার হওয়াদের মধ্যে উহান শহরের বাসিন্দা সর্বোচ্চ সংখ্যক হলেও পার্শ্ববর্তী শিয়াও-গান শহরে দুই হাজারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার টেলিফোনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শি জিনপিং ট্রাম্পকে বলেন, ‘চীনা সরকার ব্যাপকভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাস যুদ্ধে ধীরে ধীরে সফলতাও পাচ্ছেন তাঁরা। তাই মহামারি মোকাবিলায় তাঁর সরকার আত্মবিশ্বাসী। দীর্ঘমেয়াদে চীনসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে না বলেও আশ্বস্ত করেন শি জিনপিং।’

এদিকে, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় করোনাভাইসের সংক্রমণ নিয়ে গতকাল শুক্রবার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। তাতে চীন, হংকং, ম্যাকাও ছাড়াও ২৫টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়। তারা বলছে, চীনের বাইরে হংকংয়ে একজন মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ২২ জন, ম্যাকাওতে আক্রান্ত ১০ জন। এ ছাড়া জাপানে আক্রান্ত ৮৬ জন, সিঙ্গাপুরে ৩০, থাইল্যান্ডে ২৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৪, অস্ট্রেলিয়ায় ১৪, জার্মানিতে ১৩, যুক্তরাষ্ট্র ১২, তাইওয়ানে ১৬, মালয়েশিয়ায় ১৪, ভিয়েতনামে ১২, ফ্রান্সে ছয়, আরব আমিরাতে পাঁচ, কানাডায় ছয়, ভারতে তিনজন; ফিলিপাইনে মারা গেছেন একজন, আক্রান্ত আরো দুজন; রাশিয়া ও ইতালিতে দুজন করে চারজন ও যুক্তরাজ্যে তিনজন। এ ছাড়া একজন করে রোগী পাওয়া গেছে বেলজিয়াম, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, স্পেন, কম্বোডিয়া ও ফিনল্যান্ডে।

অন্যদিকে জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৬১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২১ জন জাপানি, আটজন মার্কিনি, পাঁচজন অস্ট্রেলিয়ার ও পাঁচজন কানাডার নাগরিক রয়েছেন।