অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

মিরসরাই  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংস্কারে অনিয়ম দুর্নিতী

0

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।

32219_divi-1-680x365
জরার্জীর্ণ মীরসরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মস্তাননগর হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংস্কার কাজের জন্য ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ এলেও ওই টাকায় ঠিক কি কাজ হয়েছে তা জানে না কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় চলতি মাসের প্রথম দিকে কমপ্লেক্সে একটি বৈঠকে মিরসরাইয়ের সাংসদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মস্তাননগর হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির আবাসিক ভবন, ইলেক্ট্রনিক্স মেরামত, স্যানিটারী ও সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (স্মারক নম্বর ৪৫.১৬৬.১১৪০০.০০.০৫৯.২০১৫-৯৭০/১৩.৮.২০১৫) যুগ্ন সচিব খাজা আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওই বরাদ্দের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সংস্কার কাজ দেখিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করে নেয়। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংস্কার কাজের দৃশ্যমান কোন নমুনা না দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী মোশাররফ।

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রতন কুমার দে জানান, তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানেন না। হাসপাতালের সংস্কার কাজ করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মন্ত্রণালয় থেকে সংস্কার কাজের একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের চিঠি দেখাতে পারলেও সংস্কার কাজের কোন তালিকা বা নথিপত্র দেখাতে পারেননি।

download
.

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তবারক উল্ল্যাহ চৌধুরী বায়োজীদ (অবসরপ্রাপ্ত) জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংস্কারের বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ শুধু কাজের চাহিদা দিয়ে থাকেন। সংস্কারের বরাদ্দ পেয়ে কাজগুলো স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ করে থাকে। তবে তিনি জানান, তৎকালীন সময়ে কমপ্লেক্সে এলাকায় দুইটি ভবনের পুরাতন ছাদ ভেঙ্গে নতুন ছাদ করা হয়। এছাড়া পানির লাইন নির্মাণসহ কিছু কাজ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই কাজের কোন নথি না থাকার কথাও তিনি স্বীকার করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানান, গত ৬ মাস আগে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সদস্য হয়েছেন। অতীতের সংস্কার কাজের বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না। তবে চলতি মাসের প্রথম দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি বৈঠকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের কমপ্লেক্সের নামে বরাদ্দ হওয়া অর্থে কোন কাজ না হওয়ায় মিরসরাইয়ের সাংসদ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাজ করলে তা দৃশ্যমান হতো। তাই বরাদ্দকৃত অর্থ কি কাজে খরচ করা হলো, কাজ না হলে এ অর্থ কোথায় গেল তা তদন্ত করা প্রয়োজন। বর্তমানে মন্ত্রীর নিজস্ব অর্থায়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজসহ বেশকিছু কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী সাহাব উদ্দিন জানান, তিনি সম্প্রতি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। তৎকালীন সময়ে আব্দুল হামিদ নামে একজন প্রকৌশলী দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লায় দায়িত্বে রয়েছেন। ওই সময় মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজের একটি ওয়ার্ক অর্ডার ও সংস্কার কাজ বুঝে নেওয়ার কাগজপত্র তাদের কাছে আছে। এসব কাজের নথিপত্র মিরসরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কেন এর উত্তরে তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল হামিদের (বর্তমানে কুমিল্লায় দায়িত্বরত) মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সংস্কারের বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ দেখে। তবে সংস্কার কাজের বরাদ্দ নিয়ে অভিযোগ উঠার পরে আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে কাজের দৃশ্যমান কিছু দেখিনি এবং দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীরাও কাজ না হওয়ার কথা জানান। কিন্তু কমপ্লেক্সে সংস্কার কাজ করার বিষয়টি কাগজপত্রে ঠিক রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৃশ্যমান কাজ না দেখার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।