অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

জনতার কাঠগড়ায় বিএনপি নেতারা

0
.

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বিএনপি আজ পর্যন্ত তার মুক্তির জন্য জোরালো কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। উল্টো যে সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ‘ব্যবহার করে’ সাজা দেয়ার অভিযোগ, সেই সরকারের অনুমতি নিয়েই খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সমাবেশ করেছে তার দল। এরই মধ্যে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে ওবায়দুল কাদেরকে মির্জা ফখরুলের ফোন এবং আবারও হাইকোর্টে জামিন আবেদনের সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। একইসঙ্গে প্যারোলে হলেও বিএনপি প্রধানের মুক্তি চেয়েছেন তারা। তবে পরিবারের এই ইচ্ছার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে।

আদৌ তারা এই প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চান কি-না সেটিও যেমন স্পষ্ট করছেন না, আবার বলছেন পুরো বিষয়টিই এখন সরকারের হাতে- দ্য বল ইজ ইন দেয়ার কোর্ট।
কারাবন্দি দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে এ ধরনের অবস্থানকে দলটির রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

তারা মনে করছেন, চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন না। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে গত দুই বছরে সরকারের ওপর বিএনপি তেমন কোনো রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন। তাই রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করতে চান তারা। কিন্তু রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম তো দূরের কথা গত দুই বছরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে গরম গরম বক্তৃতার বাইরে কার্যকর কোনো কর্মসূচিই দিতে পারেনি বিএনপি নেতারা।

কখনো কখনো মানববন্ধন, প্রতীকী গণঅনশন, গণঅবস্থান, গণস্বাক্ষরতা অভিযান, স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি ডাকা হলেও-এর বেশিরভাগই ছিলো পুলিশের শর্তযুক্ত অনুমতি সাপেক্ষে। আবার পুলিশি অনুমতি না মিললে এসব কর্মসূচি থেকেও পিছু হটেছেন তারা। প্রায় চার দশক ধরে দলীয় নেতৃত্বে থাকা একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীর শেষ বয়সে দীর্ঘদিনের কারাবাস মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূল কর্মীরা। এতদিনেও খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে না পারার জন্য দলটির শীর্ষ নেতাদের দায়ী করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা চরম অবহেলা আর উদাসীনতা দেখিয়েছেন। তার মুক্তির বার্তার পরিবর্তে সভা সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা উল্টো খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে খবর শোনাচ্ছেন। একদিকে তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না, তাকে মুক্ত করতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সভা-সেমিনারের বাইরে বড় কোনো আন্দোলন কর্মসূচিও দিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।

সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্তিতে আয়োজিত সমাবেশে তার মুক্তির দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুঙ্কার দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটির শীর্ষ নেতারা এখন পুরোপুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, ঘরোয়া বৈঠক আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে চটকদার বক্তৃতামালার রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজনীতি বলতে গেলে অনেকটা টেলিভিশন ক্যামেরা, প্রেসরিলিজ আর বিবৃতি নির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিং হচ্ছে। এই ব্রিফিংয়ের বাইরে কেন্দ্রীয় নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবে কিছু ঘরোয়া আলোচনা সভায় হাঁকডাক দিচ্ছেন। সেখানে চটকদার ভাষায় আন্দোলন সংগ্রামের কথাও বলছেন-কিন্তু আদতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সিটি নির্বাচনেও চরম নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছেন বিএনপির নেতারা। মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলতে গেলে আত্মগোপনেই ছিলো বিএনপি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার প্রত্যয় জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে ভোটের দিনের চিত্র ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। একমাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ছাড়া বিএনপির আর কোনো কেন্দ্রীয় কিংবা মহানগর নেতাকে ভোট কেন্দ্রের আশেপাশেই দেখা যায়নি। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার ঘোষণা দিলেও ওই দিন মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঠেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এবারের সিটি নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশও আগের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর ততটা মারমুখি ছিলো না। হামলা-মামলা ধরপাকড়ের ঘটনাও তেমন ঘটেনি। দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া আর কোথাও বিএনপি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে, তেমন খবরও মেলেনি। তাহলে কি কারণে বিএনপি নেতারা ভোটকেন্দ্রে আসেননি সেই প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি নেতারা অনেকদিন ধরে ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলে আসছেন, সাহস থাকলে পুলিশ ছাড়া রাস্তায় আসুন। বলা যায় সেই অর্থে এবার পুলিশ অনেকটা নমনীয় ভূমিকায়ই ছিলো।

তা সত্ত্বেও বিএনপি নেতাকর্মীদের কেন ভোটকেন্দ্রে সমাগম ঘটল না? বিএনপি নেতারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে সহায়তা করতে গেলেন নাÑ বিশ্লেষকরা সেই প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, যদিও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ও ডিজিটাল কারচুপি ছিল। কিন্তু বিএনপি নেতারা যদি কেন্দ্রে যেতেন, ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে জয়লাভ করতে না পারলেও অন্তত জনসমক্ষে বিএনপির শক্তিশালী ভূমিকা স্পষ্ট হতো। সাধারণ ভোটাররা বিএনপি নেতাদের দেখে আশ^স্ত হতেন, কিছুটা হলেও সাহস পেতেন। এছাড়া কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হলে অন্তত ভোটে যে কারচুপি হচ্ছে, বহিরাগতরা কেন্দ্র দখল করে রেখেছে, পোলিং এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে এসব অভিযোগগুলো তাৎক্ষণিক করার সুযোগ থাকতো। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রে বহিরাগতদের উপস্থিতির বিষয়ে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চাপ দেয়া যেতো। পুলিশ তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ না নিলে সে বিষয়েও হাতেনাতে প্রমাণসহ কথা বলা যেতো।

জানা গেছে, ভোটের আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে নিজেদের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন। এমনকি বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে ৭ টি কমিটিও করা হয়েছিলো। কথা ছিল যেকোনো মূল্যে ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ, পোলিং এজেন্টদের নিয়ে আসা এবং ভোটের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর মনিটরিংয়ে থাকবে বিএনপি। কিন্তু আদতে ভোটের মাঠে সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, সিটি নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিএনপির বাঘা বাঘা কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে দুটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও করা হয়েছিলো। ওই দুই কমিটিতে অন্তত ৪২ জন কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ নেতা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অথচ ভোটের দিন কেবলমাত্র অফিসে বসে সংবাদ সম্মেলন ছাড়া তাদের কোনো ভূমিকাই দেখা যায়নি। কেন্দ্র পাহারা তো দূরের কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতার গতি দেখে পোলিং এজেন্টদেরও অনেকে কেন্দ্রে যেতে সাহস পাননি।

ভোটের দিনে মহানগর ও নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন ভূমিকা দেখে দলটির সাধারণ নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায়, বিএনপি নেতারা হয়তো এই ধারণাটি বদ্ধমূল করে নিয়েছেন যে, বাইরের কোনো দেশ অথবা অন্য কোনো শক্তি খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেবে, একইসঙ্গে বিএনপিকে টেনে তুলে ক্ষমতার মসনদেও চড়িয়ে দেবে। বিএনপি নেতারা কার্যালয়ে বসে টিভি ক্যামেরার সামনে ঘোষণা দেবেন, মাঠে নামবেন নাÑ আর সাধারণ জনগণ বা নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবনবাজি রেখে স্বঃতস্ফূর্তভাবে রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে পড়বেন এমনটিই হয়তো তারা ভাবছেন।

খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর ঢাকা সিটি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ২ ফেব্রুয়ারি হরতালের মতো বড় কোনো কর্মসূচি দিয়েছিলো বিএনপি। সেই হরতাল ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অবস্থা এমন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যে, নিজেরা মাঠে না নামলেও সবকিছু জনগণের উপর ছেড়ে দিয়ে তাতে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখছেন। তারা হয়তো মনে করছেন, এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একদিন খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন এবং সরকারের পতনও হয়ে যাবে!

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। প্রথম ১৩ মাস ছিলেন পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে। সেখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে আসা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। গৃহকর্মী ফাতেমাকে নিয়ে এখনও ওই হাসপাতালের কেবিন ব্লকে আছেন তিনি। আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ এবং এখন তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটা-চলা, এমনকি খেতেও পারেন না বলে স্বজনদের ভাষ্য। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে দেখতে গিয়ে খালেদা জিয়াকে এখনই বিদেশে না পাঠালে যেকোনো পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বজনরা। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মেডিকেল বোর্ড যেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করে, সেজন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন, মানবিক কারণে যেন তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ওই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সুষ্ঠু চিকিৎসা হচ্ছে না অভিযোগ করে দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিশেষায়িত কোনো বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার দাবি করে আসছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু সরকার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিএনপি নেতাদের এই দাবির কোনো পাত্তাই দেয়নি।

এদিকে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির প্রশ্নে তার পরিবারের সদস্যরা অনেকটাই মরিয়া। কারণ তাদের কাছে বিষয়টি বেশ আবেগের। কিন্তু এর সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের রাজনৈতিক অবস্থান তথা হিসাব-নিকাশ মিলছে না। অন্যদিকে সরকারও এ প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের দায়িত্বশীল কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোল ও সাজা স্থগিতের আবেদন করা হলে সরকার তা বিবেচনা করবে। কিন্তু বিএনপি মনে করছে, সরকার এ নিয়ে রাজনীতি করছে। আর রাজনীতির এই খেলায় না হারতে দলটি ওই উদ্যোগ থেকে দূরে আছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রশ্নে দেনদরবার শুরু করেছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, প্যারোল বা সাজা স্থগিত- দুটিতেই দল তথা খালেদা জিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। তাদের মতে, দুটি উদ্যোগেই খালেদা জিয়াকে ‘নতি স্বীকার’ করতে হবে। আর এটি সরকার চাইছে বলেও বিএনপি নেতারা মনে করেন। ফলে পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনে প্যারোলে মুক্তি নিতে রাজি হলেও দলগতভাবে বিএনপি তাতে রাজি হচ্ছে না। আবার খালেদা জিয়ার জীবন-মরণের প্রশ্নে তারা বাধাও দিতে পারছে না।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সর্বশেষ জামিন আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খারিজ করে দেয়ার পর আপাতত আইনি পথে তার মুক্তির সুযোগ নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাঁচ মামলাসহ মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় তার কারাবাস দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে বলুক আর নাইবা বলুক বোঝা যাচ্ছে আন্দোলন সংগ্রাম বাদ দিয়ে মূলত খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি নেতারা সরকারের ওপরই ভরসা করে আছেন।

এভাবে কতদূর যেতে পারবে বিএনপি?

গত এক দশকে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে গণতন্ত্রের জন্য অভাবনীয় সব বিক্ষোভ অনেক শক্তিধর শাসকের মসনদ তছনছ করে দিয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির বহু সমীকরণও পাল্টে গেছে। সারা দুনিয়ার রাজনীতিতে এতসব বড় পরিবর্তন রাজপথে প্রতিবাদী জনতার হাত ধরেই এসেছে। সেখানে বিএনপি আজ পর্যন্ত শাসকদলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। প্রতিনিয়তই তারা সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলনে নামার হুঙ্কার দিচ্ছে। কিন্তু একদশকে সেই গোছানোর কাজ শেষ হয় না। আন্দোলনের দিনও আসে না। তাহলে এই পরিস্থিতিতে বিএনপি কী হারিয়ে যাবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিএনপি টিকে থাকবে বাই ডিফল্ট। কারণ আওয়ামী লীগের একটি বিরোধী শক্তি দরকার। সেটি জামায়াত বা অন্য কোনও দল হওয়ার সুযোগ নেই। আর বিএনপির গদিতে বসার সুযোগ বা খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে তখন যদি আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে জনগণ কখনও রাস্তায় নেমে আসে। অথবা নেতাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সত্যিই ফিনিক্স পাখির মতো যদি বিএনপি কখনো জেগে ওঠে!