অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

করোনা আক্রমন এবং শুচিবাই

0
.

শাম্মী তুলতুল

আমার মা ছোটবেলা থেকেই সব সময় আমাদের হাত পা ধোয়ার জন্য খুব বিরক্ত করতেন।বাহির থেকে কেউ আসলে সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে বার বার হাত পা মুখ ধুয়ে তারপর স্বাভাবিক কাজ করার তাগিদ দিতেন।কিন্তু এতে আমরা খুবই বিরক্ত হতাম।উনি নিজের সহ যার যার থালা বাসন,গ্লাস আলাদা করে রাখতেন ।বার বার মুখে নাকে অযথা হাত দিতেও বারণ করতেন।

যখন কোথাও বেড়াতে যেতাম কেউ পাশ দিয়ে হাঁচি-কাশি দিলে তিনি আমাদের তাদের থেকে দূরে সরে যেতে বলতেন এবং যিনি হাঁচি কাশি দিচ্ছেন তাকেও মুখে হাত বা রুমাল দিতে বলতেন।তখন আমরা লজ্জা পেতাম অপর জন কি মনে করেন তাই ভেবে। মাকে যখন বলতাম তুমি আমাদের সাথে এমন কর আবার বাহিরের লোকদের কেউ জ্ঞান দাও কেন?

মা তখন হেসে বলতেন দেখ আমি একেতো ডাক্তারের মেয়ে আবার আমার মা (আমারনানী)খুব পরিস্কার।তাই এসব আমরা সব ভাই- বোন ছোটবেলা থেকেই মেনে আসছি। আমার বাবাই আমাদের শিখিয়েছেন কেউ হাঁচি -কাশি দিলে দূরত্ব বজায় রাখতে। অন্যকেও সাবধান করতে বলতেন।আর মনে রাখবি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। কুরান-হাদিসেও উল্লেখ আছে।এটা লজ্জার বিষয় না।

আমার নানা একজন ডাক্তার আর নানি অতিরিক্ত পরিস্কার হওয়ার কারণে নানার পরিবারে সবাইকে দেখতাম কম বেশি পানির সাথে সখ্যতা বেশি ছিল।অনেকে একে শুচিবাই বলতো। কিন্তু শুচিবাই একটি আলাদা বিষয় কিঞ্ছিত এই রোগের সাথে যদিও কিছুটা মিলে যায়।

যেমনঃ- বার বার হাত ধোয়া, নিজের কাপড়- চোপড় নিজের ব্যাবহারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এক বারের জায়গায় তিনবার করে ধোয়া,ঘরের আসবাবপত্র বা রান্নাঘরের ব্যাবহারের জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে নতুন করে কেনা।আবার কেউ গায়ে হাত দিলে সাথে সাথে গোসল করে ফেলা এটা ছিল শুচিবাই রোগের চরম মাত্রা।

কিন্তু আমার মায়ের পরিবারে ছিল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অনন্য উপাই।যা অনেকে না বুঝে শুচিবাই বলে আখ্যা দিতেন। এমন কি কেউ বেড়াতে এলে তাকেও আগে হাত মুখ ধোয়ার কথা বললেই রাগ করতেন আম্মার শ্বশুর বাড়ির লোকজন মানসিক সমস্যা আছে বলে টেঁস মারতেন।

আমার খালাও জীবিত অবস্থায় বাহির থেকে কেউ এলে একই কায়দায় হাত পা মুখ ধোয়াতেন।আমার নানীও ঠিক এমনি ছিলেন।কিন্তু আমরাও না বুঝে পাগলামী বলে তাঁদের গাল-মন্দ করতাম।কিন্তু এখন এই মহামারীর সময়ে এসে আমি অবাক না রীতিমত চমকে যাচ্ছি।এখন সারা বিশ্ব এক নিয়মে চলছে ।টিভি,পত্রিকা, সোশাল মিডিয়া একটি কথা করোনা যার শুধু বার বার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জিনিস পত্র আলাদা রাখা,যেখানে সেখানে হাঁচি- কাশি না দেওয়া ইত্যাদি।

যারা এই বার বার হাত ধোয়াকে শুচিবাই বলে ধিক্কার জানিয়েছেন তাহাদের প্রতি আমার এখন হাসি আর করুণা হয়।বার বার হাত ধোয়া যদি মানসিক সমস্যা হয় তাহলে বর্তমানে আমরা সকলেও মানসিক রোগী। আমরা এখন একটি অস্থায়ী অবাসযোগ্য পৃথিবীতে আছি । যেখানে পৃথিবীর অসুখ হয়েছে আর সেই অসুখ মানুষকে গ্রাস করছে। পুরো বিশ্বকে অচল করে ঘর বন্দি করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে এই অতি ছোট্ট ভাইরাসটি। কতোই না আসহায় আমরা, এতো বড় আকৃতির হয়েও কোভিড-১৯ কে ভয় দেখাতে ব্যর্থ।

উৎপত্তি, বিস্তৃতি, কেমন, কোথায়? কম বেশি ইতোমধ্যে প্রায় সবার সবজান্তা।
কিন্তু মিথ্যে প্রচারণার কমতি নেই।গুজবের কমতি নেই।
চীন ২৫০০০ হাজার মানুষকে মেরে ফেলতে যাচ্ছে।
যোগ ব্যায়াম করলে আপনি পরিত্রাণ পাবেন।
লেবু দিয়ে গরম পানি খেলেই চলবে ইত্যাদি।

“করোনা ভাইরাস” এক বিশাল পরিবার। যা ফুস্ফুসে উপস্থিত প্রোটিনের উপর জমে ফুস্ফুসের কোষ ধ্বংস করে। উৎপত্তি চীনের উহান শহরে, সেই সুত্রে নামকরণ হয় “উহান ভাইরাস”। ২০১৯ আবিষ্কৃত হয়েছে বিধায় কোভিড এর পার্শে ১৯ যুক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে পরীক্ষা (Test) ও চিকিৎসা (Treat) বর্তমানে একমাত্র পন্থা। যাচাই করে আপনাকে আলাদা (Quarantine) করতেই হবে। আর নিজেই বুঝে উদ্যোগটি নিলে প্রকৃত মানব হিসেবে, আপনি নিজের কাছেই স্বীকৃত। আপনি বাহ্যিকভাবে একদম সুস্থ, কোন উপসর্গ নেই কিন্তু আপনি যে বাহক নন এটি মোটেও নিশ্চিত নয়। শরীরে সংক্রমিক উপসর্গ দেখা না দিলেও আপনি ১-৩ জনের মাঝে ভাইরাস দিতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়ার রোগী-৩১ যিনি একাই প্রায় ২ হাজার জনকে সংক্রমিত করেছেন।

আগামী ২ সপ্তাহ পৃথিবীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। বাড়িতে নিজেকে বন্দি করাটাই আবশ্যক। স্রষ্টা, জীবন, প্রকৃতি বাধ্য করছে আপনদের মাঝে বিরাজমান থাকার। রান্না করুন, সন্তানদের সময় দিন, বাড়ির সব কাজ নিজেই করুন দেখবেন বিরক্ত হবার অবকাশটুকুও পাবেন না।

এ ব্যাপারে বিশ্ব নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) ১৪০০ বছর পূর্বেই জানিয়েছেন- “যখন তুমি কোনো ভূখণ্ডে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার খবর শুনতে পাও তখন সেখানে প্রবেশ কোরো না। পক্ষান্তরে প্লেগ যদি তোমার অবস্থানস্থল পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে ঐ জায়গা ত্যাগ কোরো না”। অর্থাৎ অংক একদম পরিস্কার। সঙ্গনিরোধ একান্ত জরুরি। অতি অল্প সীমায় সীমিত করতে পারলেই দুঃসময়টি কেটে যাবে।

প্রত্যেক মহামারীর ৪টি স্থর থাকে।
১- দেশের বাহির হতে আসা।
২- স্থানীয় সংক্রমণ।
৩- সম্প্রদায় সংক্রমণ।
৪- মহামারী।
এই চতুর্থ পর্যায় অতিক্রম করে, নিয়ন্ত্রণ মন্ত্র খুব ভালভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছে চীন।

আমাদের ছোট ছোট ভুলের জন্য একটা না কয়েকটা জীবন চলে যাবে,মনে করেন একটু বের হলেন এসে হাত ধুলেন না,কথা বলতে বলতে পাশে চলে গেলেন,থুথু হালকা করে কোথাও ফেললেন,দোকানে গেলেন টাকা নিলেন,বেশি হলে গুনে নিলেন,নাকে হাত দিয়ে ধুতে ভুলে গেলেন,বিকালে বাহির থেকে নাস্তা এনে খেলেন,একটু বাড়ির সামনে হেঁটে আসলেন হাতমুখ ধুলেন না একবার ভাবুন তো,কি ক্ষতি করছেন?

নিজের জন্য নয় নিজের পরিবারের জন্য হলেও ঘর বন্দি থাকুন,,সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন নিরাপদে থাকার, যেহেতু এখনো কোন প্রতিষেধক অবিস্কার হয়নি তাই দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে কিছু ভিটামিনযুক্ত উদ্ভিদ যোগ জরুরী।

ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার সাইত্রাস জাতীয় ফল, লেবু, কমলা, কলা, আমলকী, টমেটো, রসুন, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি। এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ বলয় তৈরি হবে। যা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। আর মাছ, মাংস, ডিম, সবজি অবশ্যই ভালো করে সেদ্ধ করবেন যাতে উত্তাপে জীবাণু ধ্বংস হয়।

তাছাড়া আমাদের সৃষ্টিকর্তা ১৪১০ আগেই কিছু খাদ্য উপকরণ উল্লেখ করেই দিয়েছেন যেমন-
কালি জিরা- মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ।

মধু- সকল রোগের নিরাময় রয়েছে। মাসে ৩ দিন চেটে চেটে মধু খেলে কোন বড় রোগ দেহে জায়গা গড়তে পারবে না।
দুধ- সবচেয়ে উত্তম খাবার।

পানি- অপর নাম জীবন। প্রচুর পরিমাণে পান করুন এতে ভাইরাস গলায় আটকে থাকলে পানি পানের মাধ্যমে কোনভাবে পাকস্থলীতে পৌছোতে পারলেই হাইড্রোক্লোরিক(HCl) এসিড ও অন্যান্য অম্ল দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাবে।

তাই দুশ্চিন্তা একদমই না। এখন খুব দরকার বার বার বলছি আতঙ্কিত না হয়ে ঘরে থাকা, নিজে সচেতন থাকা,অন্যকে সচেতন করা, বাদ বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ওপর।আমার পরিবারে পাঁচজন ডাক্তার রয়েছেন তাদেরও বার বার অন্যান্য ডাক্তারের মতো একই ভাষ্য সতর্ক হন, সচেতন থাকুন, খাদ্যাভ্যাস মেনে চলু।

আর হ্যাঁ অবশ্যই অবশ্যই যার যার ধর্ম অনুযায়ী দোয়া- প্রার্থনারও কোন বিকল্প নেই।ইনশাআল্লাহ্‌ পৃথিবীর অসুখ হুট করে সেরে যাবে।

“পাঠকের কলাম” বিভাগের সকল সংবাদ, চিত্র পাঠকের একান্ত নিজস্ব মতামত, এই বিভাগে প্রকাশিত সকল সংবাদ পাঠক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। তা্ই এ বিভাগে প্রকাশিত কোন সংবাদের জন্য পাঠক.নিউজ কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নয়।