অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

পদোন্নতি পেতে অধ‌্যক্ষের স্বাক্ষর ও নিয়োগ জাল করেছে শিক্ষক

0
.

কলেজে পদোন্নতি পেতে খোদ অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া নিয়োগ পত্র তৈরীর অভিযোগ উঠেছে কর্নেল অলি আহম্মদ বীর বিক্রম কলেজের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া ওই শিক্ষকের নাম আবুল মাসুদ চৌধুরী। তিনি ওই কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক।

জালিয়াতির এসব বিষয় এতোদিন গোপন থাকলেও সম্প্রতি পদোন্নতির জন্য গঠিত কলেজ কমিটির তদন্তে এই তথ‌্য প্রকাশ পেয়েছে।

কলেজের তৎকালীন কার্যবিবরনী ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ সনের ২০আগষ্ট যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন জয়নাল আবেদীন নামে এক প্রার্থী। পাশাপাশি ২য় হন আবুল মাসুদ চৌধুরী ও ৩য় কাউছার বানু।

পরবর্তী ২৩ আগষ্ট রেজ্যুলেশনে দেখা যায়, যুক্তিবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে জয়নাল আবেদীন কে নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং তিনি সহ অন্য শিক্ষকদের ২৫ আগষ্ট থেকে ৩০ আগষ্টের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়।

কিন্তু ২সেপ্টেম্বরের কার্যবিবরনীতে দেখা যায় পূর্বেকার অর্থাৎ ২৩ আগষ্টের কার্যবিবরনী মোতাবেক প্রভাষক পদে ইংরেজি বিষয়ে শরাফত উল্লাহ, অর্থনীতি বিষয়ে হারুনর রশিদ, পৌরনীতি বিষয়ে হামেদ হাসান যোগদান করেন এবং যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে আবুল মাসুদ চৌধুরী, সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বেলাল মোহাম্মদ চৌধুরী ও হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হাদিউল ইসলামকে ৫সেপ্টেম্বরের মধ‌্যে যোগদান করতে বলা হয়।

পরবর্তী ৮ সেপ্টেম্বরের কার্যবিবরনী সূত্রে জানা যায়, ২য় হওয়া আবুল মাসুদ চৌধুরী, বেলাল মোহাম্মদ চৌধুরী হাদিউল ইসলাম যোগদান করেছেন। এখানে প্রথম হওয়া জয়নাল আবেদীন এর যোগদান না করা সংক্রান্ত কোন কাগজ পত্রাদী ছিলনা।

অর্থাৎ তৎকালিন কমিটি নিয়ম বর্হিভূত ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করা জয়নাল আবেদীনকে নিয়োগ না দিয়ে আবুল মাসুদ চৌধুরীকে নিয়োগ প্রদান করেন।

অনিয়ম, তথ‌্যগোপনের মাধ‌্যমে এখানেই অপরাধের শেষ নয়। আবুল মাসুদ চৌধুরীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি অধ্যক্ষের সাক্ষর জাল করে ২৪ আগষ্টের (অর্থাৎ নিয়োগের আগে যোগদান) করেছেন এমন ভূয়া নিয়োগপত্র ও ভূয়া যোগদান পত্র তৈরী করেন।

এদিকে কলেজের কয়েকজন প্রভাষক অভিযোগ করেন, আবুল মাসুদ চৌধুরী অবৈধ যোগদানপত্র ও জাল স্বাক্ষরের নিয়োগপত্র নিলেও অন্যান্য শিক্ষকের চাইতে নিজেকে সিনিয়র তালিকায় অন্তভূক্ত করেন।

সম্প্রতি প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদানের বিষয় সামনে আসলে নিয়ম অনুযায়ী ১৯৯৯ সনের ২৩আগষ্ট নিয়োগ পাওয়া হামেদ হাসান এবং ২সেপ্টেম্বর নিয়োগ পাওয়া বেলাল মোহাম্মদ চৌধুরী পদোন্নতির জন‌্য আবেদন করেন।

পাশাপাশি আবুল মাসুদ চৌধুরীও সেই ভূয়া নিয়োগপত্র ও ভূয়া যোগদান পত্র দিয়ে সিনিয়র দাবি করে প্রমোশনের জন্য আবেদন করার পরই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

এই সংক্রান্ত বিষয়ে ২০১৯ সনের ১৪ আগষ্ট কলেজ কমিটি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সেই তদন্ত কমিটিতে কলেজের সভাপতি ও সাবেক সিভিল সার্জন ডা: মং তেঝ আহবায়ক, দাতা সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান রফিক আহম্মদ চৌধুরী, বিদ্যাসাহী সদস্য এডভোকেট রামপদ কায়স্থগীরকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয়।

ওই তদন্ত কমিটি আবুল মাসুদ চৌধুরীর নিয়োগ ও যোগদান প্রশ্নবিদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং কলেজের সিনিয়র প্রভাষক হামেদ হাসানকে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে প্রমোশনের সুপারিশ করেছেন।

এদিকে সম্প্রতি সময়ে আবুল মাসুদ চৌধুরীর অবৈধ নিয়োগ ও ভূয়া যোাগদান পত্রের বিষয় প্রকাশ হয়ে গেলে কলেজের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, অবৈধ ভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের কাছে কি নৈতিকতা আশা করা যায়। কলেজের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই উক্ত বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত দাবী করেছেন।

এই প্রসঙ্গে জানতে আবুল মাসুদ চৌধুরীর ব‌্যবহৃত মুঠোফোন ০১৮১৪৭..৫৫৮ একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর বক্তব‌্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।