অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়”

0
.

১০ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য প্রায় সময় আমার স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালাত। ওই নির্যাতনের শিকার থেকে বাদ যায়নি আমার আট বছর বয়সের শিশু সন্তান জিহাদও। ঘরের মধ্যে তালা লাগিয়ে দিয়ে না খেয়ে উপোস রাখতো আমাদের।  বদ্ধ ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হত্যার চেস্টাও করেছে বেশ কয়েকবার। পরে আমাকে স্বামীর বাড়ি থেকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় তারা। এমন নির্যাতনের কথা বলতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাঙ্গুনিয়া থানার সরফভাটা এলাকার মৌলনা গ্রাম মায়ার বর বাড়ী এলাকার মাহাম্মদ জালাল উদ্দিনের স্ত্রী নাজেহাদ ফারজানা (২৭)।

আজ ২২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নাজেহাদ ফাজানা এমন অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা বলেন, ২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর রাঙ্গুনিয়া থানার সরফভাটা এলাকার মৌলনা গ্রাম মায়ার বর বাড়ী এলাকার আহম্মদ মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনের (৩৪) সঙ্গে তার রিয়ে হয়। বিয়েতে স্বর্ণালঙ্কার, ফার্নিচার ও বরযাত্রী খাবার বাবদ প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করে তার পরিবার। ২০১৫ সালে আবুধাবীতে চাকরিরত অবস্থায় ফারজানার বাবা মারা গেলে তার পরিবার কিছু ক্ষতিপূরণ পান। ফারজানার স্বামী ওখান থেকে ১০ লাখ টাকা তার ব্যবসায় পূঁজি বিনিয়োগের কথা বলে যৌতুক দাবি করে।

নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে ফারজানা বলেন, স্বামীর যৌতুক দাবি পুরণ না করায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি আমার স্বামী, শাশুড়ী ও ননদ ও তাদের স্বামীরা মিলে আমার ওপর নির্যাতন চালায়। আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারেন ও পিটিয়ে আহত করেন। আমার ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচাতে চাইলে তাকেও মারধর করে। যৌতুকের দাবি পূরণ করা না হলে আমার স্বামী আর আমার সঙ্গে সংসার করবে না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের দাবিতে একাধিকবার শারীরিক নির্যাতনও করেন। নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে আমার মা থেকে এনে বিভিন্ন সময় স্বামীকে টাকাও দিয়েছি।

তিনি বলেন, ২৯ মে বিকাল ৩টার দিকে আমার স্বামীর ফোন পেয়ে তার মা, বোন ও বোনের স্বামীরা আমি ও আমার ছেলেকে রুমে আটকে রেখে বাইর থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। তারা আমাকে বদ্ধ ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে হত্যা করার ভয় দেখায়। আমি ও আমার ছেলের কান্নাকাটি ও চিৎকারে এলাকার লোকজন খবর পেয়ে আমার মা’কে জানালে তিনি পুলিশ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আমাদের বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে। ওই দিনের পর থেকেই আমার ছেলে জিহাদ মানসিকভাবে আতঙ্কিত। রাতে ঘুমের মধ্যে ভয়ে আতঁরে উঠছে। কারো সাথে মিশছে না, হাসছে না, খেলছে না। পড়া-লেখাও মন বসছে না। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে তার সময় লাগবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।

ফারজানা স্থানীয় চেয়ারম্যানের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান আমার স্বামী পরিবারের পক্ষ নিয়ে আমার মা’র কাছ থেকে মিমাংশার কথা বলে অলিখিত কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। তারা এ স্বাক্ষর ব্যবহার করে নানা ষড়যন্ত্র করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

তিনি জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাত ৭টায় আমার স্বামীর ঘরে থাকা আমার স্বর্ণালঙ্কার ও কাপড়-চোপড় আনতে গেলে আমার স্বামীর নির্দেশে তার মা, বোন ও তাদের স্বামীরা পুনরায় আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করেন। আমার ছেলে ও আমাকে ঘর থেকে বের করে দেন। মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন আমাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন। পরে আমার আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

তিনি বলেন, এব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল নং-৩ চট্টগ্রাম এ আমার স্বামী জালাল উদ্দিন, তার মা মঞ্জুরা বেগম, বোন তারিন আকতার,তার স্বামী মোহাম্মদ আজিম ও শাহজাহান সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ১১ (গ) /৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।  আদালতের নির্দেশে থানায় মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকেই আসামিরা আমাদের মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। পুলিশও এখনো পর্যন্ত আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফারজানার মা শামসুন নাহার, ভাই সাজ্জাদ হোসেন, ছেলে তানভীরুল ইসলাম জিহাদ ও ভগ্নীপতি হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ।