অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

রড়ের দাম বেড়েছে টন প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা

0
.

সাইফুল ইসলাম শিল্পী:

নির্মাণ কাজের প্রধান উপাদান রডের দাম ফের বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে টন প্রতি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের রড।

করোনাভাইরাসের কারণে কাঁচামাল আমদানি কিংবা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রডের কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) সংকটের কারণে রডের দাম বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে ইস্পাতের চাহিদার বেশির ভাগ জোগান আসে চট্টগ্রামের ভাঙ্গা স্ক্র্যাপ জাহাজ থেকে কিন্তু করোনার প্রভাবে পণ্যটির কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) আমদানি কম হওয়ায় রডের বাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

উৎপাদনকারীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে রড উৎপাদনের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে বাজারে রডের দাম বেড়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণ মৌসুম শুরু হওয়ায় বাড়তি চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন উৎপাদনকারীরা।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে চার ধরনের এমএস রড বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৭৫ গ্রেড, সেমি অটো কারখানাগুলোতে তৈরি ৬০ গ্রেড, সাধারণ কারখানায় তৈরি ৪০ গ্রেড রড রয়েছে। এর বাইরে কোনও সিল বা গ্রেড ছাড়া এক ধরনের রড বাজারে বিক্রি হয়। যে রডগুলো বাংলা রড নামে পরিচিত।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই সব রডের মধ্যে ৭৫ গ্রেডের রডের দাম বেশি বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে টন প্রতি এই রডের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আগে যেখানে প্রতি টন বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। সেগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে বিএসআরএম ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৬০ হাজার টাকা। একেএস ও কেএসআরএম ব্র্যান্ডের প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৫৬ হাজার টাকা। জিপিএইচ ৫৪ হাজার টাকা এবং গোল্ডেন ইস্পাত টনপ্রতি ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই একই রড এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল বিএসআরএম ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা, একেএস ও কেএসআরএম ৫৩ হাজার থেকে ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং জিপিএইচ ও গোল্ডেন ইস্পাত ৫২ হাজার থেকে ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। একই সময়ে ৩-৪ হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে সাধারণ ৪০ গ্রেডের প্রতিটন এমএস রড বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৪৮ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগে বাজারে একই মানের রড ৪৪-৪৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে।

এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে দেশর বৃহত্তর রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলের (কেএসআরএম) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, সাম্প্রতিক সময় বিশ্ব বাজারে ইস্পাত স্ক্র্যাপের তীব্র ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই ক্রমাগত বাড়ছে দাম। বিগত দুই বছর স্ক্র্যাপের দাম অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এখনো দাম বৃদ্ধির সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে বিশ্ব বাজারে। ৩০০ ডলার থেকে গত এক মাসে স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে টন প্রতি ৩৯০ ডলারে। অর্থাৎ বেড়েছে ৯০ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো- আশংকাজনকভাবে স্ক্র্যাপের ঘাটতি। অথচ ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য এবং পার্সেল বুকিংয়ের জন্য অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। চীন ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা তাদের দেশে স্ক্র্যাপ আমদানির অনুমতি দেবে যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশে ইস্পাত উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বজায় রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে। এই প্রভাব পড়েছে আমাদের স্থানীয় বাজারে। সুতরাং আন্তঃর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে রডের দাম নির্ধারণ না করা হলে ইস্পাত খাত হয়ে পড়বে স্থবির। অথচ এসব শিল্প উদ্যোক্তাদের ওপর রয়েছে বাড়তি করের বোঝা।

সুত্র জানায়, সারাবিশ্বে রড তৈরির কাচাঁমালে সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাবে রডের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে সিমেন্ট ও রডের দাম বাংলাদেশে বাড়েনি।

রডের পাইকারী বাজার চট্টগ্রােমর আসাদগঞ্জের মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘গত ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে কয়েক দফা রডের দাম বেড়েছে। ১০ দিন আগে যেসব রড প্রতিটন ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেই রড বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। গড়ে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।’

‘উৎপাদনকারীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তাই আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নির্মাণ মৌসুম আসলে রডের চাহিদা বাড়ে। প্রতি বছর এই সময়ে উৎপাদনকারীরা দাম বাড়িয়ে দেন। কারখানাগুলোতে উৎপাদিত রডের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এরপরও অতি মুনাফা করতে চাহিদাকে পুঁজি করে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা।’

বিএসআরএম স্টিলের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, করোনাকালে লকডাউনের সময় রডের চাহিদা ও দাম দুটোই কমে যায়। দেশে নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ ছিল। এখন স্থানীয় স্ক্র্যাপের দামে টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা এবং আমদানি করা স্ক্র্যাপে ১২০ ডলার বেড়েছে। তাই আমাদের ৫০০ গ্রেডের সর্বশেষ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১ হাজার টাকা।